চোখের চিকিৎসায় লেসিক কীভাবে করা হয়

চোখের আধুনিক চিকিৎসা লেসিক। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৫০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান। বর্তমানে তিনি ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : লেসিক কী, এটা চোখের কী ধরনের চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়।
উত্তর : লেসিক এখনকার বিশ্বের সর্বাধুনিক লেজার পদ্ধতির একটি চিকিৎসা। এটা বলা যায় যে মানবজাতির জন্য একটি আশীর্বাদ। যাদের অনেক পাওয়ারের চশমা পরতে হয়, তারাই বোঝে এর কষ্ট কত। বিশেষ করে যাদের অনেক পাওয়ারের চশমা লাগে, তাদের জন্য লেসিক। লেসিকে আমরা যেটা করি, চোখের কর্নিয়াতে, যেটা সামনের স্বচ্ছ অংশ সেখানে, লেজারের সাহায্যে এই চশমার যে পাওয়ারটি লাগে, এর সমপরিমাণ একটি পাওয়ার দিয়ে আমরা সার্জারি করে দিই। যেমন কনটাক্ট লেন্স মানুষ পরে, সে রকম ব্যাপার। কর্নিয়াকে আমরা কনটাক্ট লেন্সের মতো পরিবর্তন করে দিলাম। তখন চশমা ছাড়াই রোগী দেখতে পাবে। আগে যেমন চশমা দিয়ে দেখত, এখন চশমা ছাড়াই তেমন দেখবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আরেকটু ভালো দেখতে পায়।
দশ বছর আগে, প্রথম দিকে, লেসিকে আমরা অতটা ভরসা পেতাম না, কখনো বলতাম না যে আরেকটু ভালো দেখবেন আপনি। তবে এখন আমরা বলতে পারি আপনি আরেকটু ভালো দেখবেন।
প্রশ্ন : চাইলেই কি সবাই লেসিক করতে পারেন?
উত্তর : অধিকাংশরাই পারেন। অল্প কিছু ক্ষেত্রে লেসিক করতে কিছু বাধা আছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে। মানে চোখের নিরাপত্তা।
দীর্ঘমেয়াদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে কি না, সে জন্য আমরা আগে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকি। পরীক্ষা করে আমরা দেখি তার চোখের অন্য কোনো রোগ আছে কি না। তার চোখে যদি গ্লুকোমা থাকে, চোখে যদি ক্যারাটোকোনাস রোগ থাকে, চোখের শুষ্কতা আছে, তাহলে আমরা সাধারণত লেসিক করতে যাই না।
আরেকটি ক্ষেত্রে লেসিক করতে পারি না, যাদের অনেক বেশি পাওয়ার। বারো-তেরো বা পনোরোর ওপরে যদি চলে যায়, আর তার কর্নিয়ার পুরুত্ব যদি এর সঙ্গে না যায়, আমরা যে পরিমাণ কাটব সেটি যদি তার কর্নিয়ার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না হয়, তাহলে লেসিক করব না। সাধারণভাবে বলতে গেলে বারো-তেরোর ওপরে গেলে আমরা আস্তে আস্তে সিদ্ধান্ত নেই। ১৫-১৬ হলে বলেই দেই করব না। তার জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আছে।
প্রশ্ন : চশমা লাগার ক্ষেত্রে দুই দল রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক, চল্লিশের পরে, চালশে রোগের কারণে অনেকে করেন, আর শিশু। শিশুদের ক্ষেত্রে তারা অনেকে চশমা পরার ক্ষেত্রে ঝামেলা করে। তারা যদি বলে আমার বাচ্চাকে লেসিক করিয়ে নেব, এটা কি সম্ভব?
উত্তর : মায়েরাই এটা বলে যে স্যার আমার বাচ্চাকে লেসিক করে দেওয়া যায় না? থিওরিটিক্যালি করা যাবে। তবে প্র্যাকটিক্যাল হলো একটি বাচ্চা তো বাড়ন্ত। খুব দ্রুত বাড়ে। অনেকের ছয় মাস পরে পরে চশমা পরিবর্তন করতে হয়। আমরা অপেক্ষা করি বাচ্চার পাওয়ার কবে স্থির হবে। সাধারণত সে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়, ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সে, শারীরিকভাবে সে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়, পাওয়ারটা স্থির হয়ে যায়। পাওয়ারটা স্থির হয়ে গেলে এর প্রভাব সে দীর্ঘমেয়াদি ভোগ করতে পারে। এর আগে যদি কখনো করে ফেলি তাহলে যেটি হবে যে কিছুদিন পরে তো তার আবার পাওয়ার পরিবর্তন হবে, তখন তো আবার লেসিক করা বিরাট বিড়ম্বনা।
প্রশ্ন : লেসিক কি প্রয়োজন হলে বারবার করা যায়?
উত্তর : ঠিক বারবার বলতে অনেকবার নয়। কখনো কখনো একাধিকবার করা যায়। এটা আমি নিজেও করেছি। দরকার হয়েছিল। যেমন একজন রোগী এসেছে সে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। ছেলেটির বয়স ১৮, তবে দেখে মনে হয় প্রাপ্তবয়স্ক হতে আরেকটু দেরি হবে। মাইনাস সাত পাওয়ার। আমি ঠিক করে দিয়েছি। আর্মিতে গিয়েছে। কিন্তু বছর দুই পরে সে এসেছে, কারণ তার আরেকটু পাওয়ার পরিবর্তন হয়েছে। ওই যে বললাম ১৮ থেকে ২০ বছর। কারো কারো ক্ষেত্রে স্থির হতে আরো একটু সময় লাগে। তখন আরেকবার করে দিয়েছি। তবে এখানে শর্ত থাকে যে দ্বিতীয়বার লেসিক করার জন্য তার কর্নিয়াতে যথেষ্ট পরিমাণ টিস্যু থাকতে হবে। প্রতিবার লেসিকে কিছু টিস্যু ফেলে দেব।
প্রশ্ন : একজন মানুষ যিনি চশমা পরছিলেন তার তো এক বছর দুই বছর পর পর চশমার পাওয়ার পরিবর্তন হওয়ার বিষয় থাকে, এই যে লেসিক করে দিলেন, সারা জীবন কি সে এই লেসিক নিয়ে চলতে পারবে, না আবার পরিবর্তন করতে হবে?
উত্তর : সাধারণত লেসিক করে আমরা চোখের পাওয়ারের কোনো স্থিরতা দিই না। প্রাকৃতিক কারণে কারো যদি আবার পাওয়ার বেশি লেগে যায়, লাগতে পারে কারো কারো ক্ষেত্রে। সে ক্ষেত্রে হয় তাকে আবার চশমা পরতে হবে, না হলে আরো বিকল্প অনেক সার্জারি এখন চলে এসেছে, সেগুলোতে যেতে পারি আমরা।
প্রশ্ন : এটি কত ভাগ?
উত্তর : খুবই কম। এক থেকে দুই ভাগ বলা যায়। শতকরা ৯৮ জনেরই লাগবে না। ধরেন একজন মাইনাস টেন চশমা পরে। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় চশমা হারিয়ে ফেললে একদমই অচল। তাই যখন আমরা এটি ঠিক করে দেব, সে চশমা থেকে রেহাই পেয়ে যাবে। এরপর যদিও বা লাগে, এটা এতই সামান্য, অতটুকু সাধারণত অনেকে চশমা ছাড়া চালিয়ে নিতে পারে। এতে চশমার প্রতি আর নির্ভরতা থাকল না।
আরেকটি দলের রোগী আমরা খুব পাই, দেখা যায় অনেক মেয়েদের যখন চশমা লাগে, তার যখন বিয়ের বয়স হয়ে যায়, তখন একটু সামাজিক সমস্যা হয়। চশমাওয়ালা মেয়ে বা চশমাওয়ালা ছেলে এ নিয়ে অনেক কথা ওঠে। তখন অনেকেই এই সময়টায় আসে। দেখা যায়, লেসিক করে দিলে সে এই জায়গা থেকে ঝামেলামুক্ত হয়ে গেল। সামাজিকভাবে সে হেয়প্রতিপন্ন হয় না।
প্রশ্ন : লেসিক করার কি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?
উত্তর : লেসিক অস্ত্রোপচার হিসেবে খুবই নগণ্য। ছানি অস্ত্রোপচারের তুলনায় লেসিকের ঝুঁকি খুবিই নগণ্য। এতে তেমন ঝুঁকির বিষয় নেই। যদি আমার হিসাব ঠিক থাকে, তাহলে সার্জারির কারণে কারো কোনো অসুবিধা হয় না।