শিশুদের চোখের সমস্যায় কী করবেন

শিশুদের চোখে জন্মের পর থেকেই বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। স্থায়ী সমস্যা প্রতিরোধে তিন বছর হওয়ার পর এবং সাত বছর হওয়ার আগে শিশুকে চোখের চেকআপ করাতে হবে। আজ ২১ এপ্রিল এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে ২০১২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হাসান শহীদ।
প্রশ্ন : সাধারণত কী কী সমস্যা শিশুদের চোখে হতে পারে?
উত্তর : জন্ম নেওয়ার সময়ে শিশুদের চোখ আক্রান্ত হতে পারে। সংক্রমণ (ইনফেকশন) হতে পারে। ২৮ দিনের সময় যদি শিশুদের চোখ ওঠা হয়, তবে এটি চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়।
প্রশ্ন : দেখে বোঝার কী উপায় আছে?
উত্তর : নবজাতকের ক্ষেত্রে চোখ লাল হয়ে যাবে। ফুলে যাবে। চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকবে, পুঁজ পড়তে থাকবে। এ রকম হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
তার পরে চোখের পাতা পড়া থাকতে পারে। একে বলে টোসিস। এটা এক চোখে হলে খুব অসুবিধা হয়। এটাও জন্মগতভাবে হতে পারে।
এ ছাড়া জন্মগতভাবে ছানিও হতে পারে, কনজেনিটাল ক্যাটারেক্ট। আরেকটি বিষয় হতে পারে শিশুদের চোখের ক্যানসার, রেটিনো ব্লাসটোমা। আবার জন্মগতভাবে শিশুদের গ্লুকোমাও হতে পারে।
প্রশ্ন : কোন কোন রোগে কী কী উপসর্গ দেখা যায়?urgentPhoto
উত্তর : গ্লুকোমা নিয়ে আমরা বেশি কাজ করি। গ্লুকোমা খুব সাংঘাতিক রোগ। শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ হলে চোখ বড় হয়ে যায়। গ্লুকোমা রোগ মানেই চোখের চাপ (প্রেশার) বেশি। বড়দের চোখ শক্ত। এর মধ্যে যদি চাপ হয়, তখন চোখের ইলাস্টিসিটি না থাকার ফলে চোখ বড় হয় না। তবে শিশুদের চোখ যেহেতু ইলাস্টিক, ফলে পুরো চোখটাই বড় হয়ে যায়। তাই তাদের চোখের মণি যদি বড় দেখা যায়, তবে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
আবার দেখা যায় চোখটা বাঁকা নিয়ে জন্মেছে। এতেও চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। শিশুর যখন তিন বছর বয়স হয়ে যায়, অর্থাৎ স্কুলে যাওয়ার আগে, চোখের চেকআপ করাতে হবে। সাত বছরের আগে চোখে কোনো সমস্যা ধরা পড়লে চিকিৎসা করা সহজ হয়। নয়তো সাত বছর পর চোখের ভেতরে ম্যাকুলা বৃদ্ধি পায়। ওটাকে কখনো ভালো করা যায় না। সে জন্য দুটো জিনিস দেখতে হবে। একটি হলো, বাচ্চা দুই চোখ দিয়ে সমান দেখে কি না। যদি না দেখে, তবে যে চোখ দিয়ে দেখতে পাচ্ছে না, সেই চোখ একটা সময় বেঁকে যাবে। একে বলে লক্ষ্মীটেরা। যার ফলে গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের বিয়ে হওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। সামাজিকভাবে অপদস্থ হয়ে যায় এবং সেটাকে আর ভালো করা যায় না। যদি চশমা আগে থেকেই ব্যবহার করা যায়, সে লক্ষ্মীটেরা হয় না।
দুই হচ্ছে, কালার ভিশন দেখতে হবে। বাচ্চা যদি কালার ব্লাইন্ড হয়, তবে পরবর্তী সময়ে গিয়ে বিভিন্ন পেশা নির্বাচনে সমস্যা হবে। যেমন : এয়ার ফোর্সে যদি যায়, তবে সমস্যা হবে। যদি রসায়নে অনার্স পড়ে, তখন রং না চেনার ফলে পরীক্ষাগারে সমস্যা হতে পারে। তখন তার সমস্যা হবে। যদি আগে থেকে জানা থাকে, সে ওই পেশা নেবে না।
এ ছাড়া অন্যান্য সমস্যার জন্য অস্ত্রোপচার করলে ভালো হয়ে যায়। চোখের পাতা নিচে থাকলে, ছানি থাকলে এসব অস্ত্রোপচারে ভালো করা যায়।
প্রশ্ন : আরেকটি জিনিস দেখা যায়, স্কুলে যাওয়ার পর শিশুটি হয়তো বোর্ডের লেখা ভালো করে দেখছে না, শিক্ষকের কথায় মনোযোগ দিতে পারছে না। ওই সমস্যায় কী করণীয়? এটি কেন হয়?
উত্তর : আগে থেকে চিকিৎসককে দেখাতে হবে এবং চশমা নিতে হবে।
প্রশ্ন : মা-বাবার উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কী থাকবে শিশুদের চোখ ভালো রাখার ক্ষেত্রে?
উত্তর : প্রথম পরামর্শ, তিন বছর আগে ভালো করে দেখুন আপনার শিশু চোখে দেখতে পায় কি না। প্রি-স্কুল টেস্ট খুব জরুরি এই সময়টায়। তাহলে যেকোনো সমস্যা ধরা যায়। তাই চোখ টেরা হচ্ছে কি না, এই পরীক্ষা এবং কালার ভিশন—এ দুটো পরীক্ষা যেন করেন অভিভাবকরা। আর চোখ বেঁকে গেলে চশমা দিয়েই ঠিক করা যায়। অস্ত্রোপচারের দরকার হয় না। আমাদের মেশিন আছে কতগুলো, সেগুলো দিয়ে বাচ্চাদের চোখ ঠিক করে দেওয়া যায়।
প্রশ্ন : তার পরও অসচেতনতার ফলে এ জাতীয় সমস্যা হয়ে যায়। এ সময় আপনারা কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন?
উত্তর : ধরুন, একটি শিশু এক চোখে দেখছে, আরেক চোখে চশমা দিয়েও ভালো দেখছে না। সে ক্ষেত্রে যদি তিন বছরের আগে নিয়ে আসেন, আমরা তখন যে চোখটি দিয়ে দেখে, সে চোখটি বন্ধ রাখি। কেন বন্ধ রাখি, যে চোখ দিয়ে দেখছে না, তার ব্যায়াম করাই। সাত বছর আগে এলে সমস্যাটা ভালো হয়ে যায়। তাই সাত বছরের আগে অবশ্যই শিশুর চোখ চিকিৎসককে দেখাতে হবে।