গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপে প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় অনেকেরই উচ্চ রক্তচাপ হতে দেখা যায়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে মা ও শিশুর জন্য এটি ঝুঁকির কারণ হয়ে যেতে পারে। আজ ২২ এপ্রিল এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০১৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বারডেম হাসপাতালের ধাত্রী ও প্রসূতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাহিদ সুলতানা।
প্রশ্ন : উচ্চরক্ত চাপ মানে কী? গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ হলে তার ঝুঁকি কী?
উত্তর : মানুষের দেহে একটা স্বাভাবিক রক্তচাপ থাকে। যদি চাপ ১৪০/৯০-এর বেশি হয় সেটাকে আমরা বলি উচ্চ রক্তচাপ। যখন একজন উচ্চ রক্তচাপসম্পন্ন নারী গর্ভধারণ করেন, যদি তাঁর কোনো জটিলতা না থাকে, যেমন, উচ্চ রক্তচাপের হার্টে সমস্যা হতে পারে, কিডনিতে অসুবিধা থাকতে পারে, চোখে অসুবিধা থাকতে পারে, তাতে তাঁর যদি গর্ভধারণ করা নিষেধ না হয় তখন আমরা সন্তান নিতে বলি। তবে যদি তাঁর কোনো জটিলতা থাকে, বুঝি অবস্থা আরো খারাপ হবে, সে ক্ষেত্রে সন্তান নিতে তাঁকে আমরা নিষেধই করি।
আবার গর্ভাবস্থায় কারো কারো উচ্চ রক্তচাপ হয়। যদি শুধু উচ্চ রক্তচাপ থাকে, সেটাকে আমরা বলি প্রেগনেন্সি ইনডিউজ হাইপারটেনশন, যেটা দেখা দেয় ২০ সপ্তাহের পরে। কারো কারো উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি এলবুমিন থাকে। যেটাকে আমরা বলি প্রি একলামসিয়া। এটা দেহে সমস্যা তৈরি করে। এগুলো হলে গর্ভধারণে ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : সাধারণত যদি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা না যায়, ওই মায়ের বা গর্ভজাত সন্তানের কী ধরনের ঝুঁকি হতে পারে?
উত্তর : উচ্চ রক্তচাপ যদি আগেও থাকে বা পরেও হয়, সেই মায়ের হার্টে অসুবিধা হতে পারে, কিডনিতে অসুবিধা হতে পারে, চোখে অসুবিধা হতে পারে। আর বাচ্চার বেলায় বৃদ্ধি কম হয়, ওজন কম হয়, অপরিপক্ব (প্রি মেচিওর) হতে পারে। মায়ের অনেক আগে রক্তপাত শুরু হয়ে বাচ্চা অনেক সময় মারাও যেতে পারে-এসব অসুবিধা হয়। সে জন্য এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
প্রশ্ন : উচ্চ রক্তচাপ হলে কী ধরনের লক্ষণ দেখা দেবে?
উত্তর : অ্যান্টিনেটাল চেকআপ বা গর্ভাবস্থায় চেকআপ খুব দরকার। মায়েরা যদি আমাদের কাছে প্রতি মাসে আসেন, আমরা তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ ধরতে পারব। উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ হিসেবে মাথা ব্যথা করবে, মাথা ঘোরাবে, ক্লান্তবোধ হবে, বমি বমি হবে, ঘাড়ের কাছে ব্যথা করবে। এই অনুভব হলেই তাঁর উচিত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া।
প্রশ্ন : যখন তাঁর চিকিৎসকের কাছে চেকআপের জন্য আসেন, তখন সাধারণত আপনারা কী কী দেখে থাকেন?
উত্তর : রক্তের পরীক্ষা করি, হিমোগ্লোবিন দেখি, এইচবিএসএজি, ভিডিআরএল, ইউরিন পরীক্ষা করি, রক্তের গ্রুপ দেখি। আর আল্ট্রাসাউন্ড করি। ডায়াবেটিস যদি আগে থেকেই থাকে, তাহলে রক্তে শর্করার পরীক্ষা করি। যদি না থাকে নিয়মিত চেকআপের ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে ডায়াবেটিসের পরীক্ষা দিই।
প্রশ্ন : উচ্চ রক্তচাপ হলে কী ওষুধ দিয়ে থাকেন?
উত্তর : উচ্চ রক্তচাপের বেলায় নির্ধারিত ওষুধ আছে। যাঁদের আগে থেকে উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাঁরা হয়তো আগে থেকে ওষুধ খাচ্ছেন। যদি সেটা গর্ভকালীন নিষেধ না হয়, তখন সেটিই নিয়মিত করতে বলি। আর তা না হলে আমরা ওষুধ পরিবর্তন করে দিই।
প্রশ্ন : প্রি-একলামসিয়া উচ্চ রক্তচাপের একটি সংশ্লিষ্ট বিষয়। প্রি একলামসিয়া বা একলামসিয়া কী?
উত্তর : উচ্চ রক্তচাপ বাড়বে গর্ভাবস্থায়, এটা সাধারণত দেখা দেয় ২০ সপ্তাহের পরে। এটা হলে রক্তচাপ বাড়বে, প্রস্রাবে এলবুমিন থাকবে। এটি এক ধরনের প্রোটিন, যা সাধারণত থাকার কথা না। এটাকে বলা হয় মাল্টি সিস্টেম ডিসঅর্ডার। এটা যদি ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ না হয়, তখন অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। নিয়ন্ত্রণের পরও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাচ্চাকে বাঁচাতে পারি না, বাচ্চা ছোট আকৃতির হয়। নিয়ন্ত্রণে না থাকলে একলামসিয়া হয়ে মায়ের খিঁচুনি হতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপ হলে অবশ্যই রোগীদের চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং ঠিকমতো ওষুধ খেতে হবে।
প্রশ্ন : এ ছাড়া এ সময় আর কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : পা ফুলে যাবে, পায়ে পানি আসবে। রক্তচাপ বাড়বে, চোখে ঝাপসা দেখবে, অনেক সময় বুকে ব্যথা হতে পারে, রক্তপাত হতে পারে।
প্রশ্ন : উচ্চরক্তচাপ কোনো মানুষের ক্ষেত্রে থাকলে তাঁর খাওয়াদাওয়া যেমন বেছে করতে হয়, তেমনি গর্ভাবস্থায় এর কোনো বিষয় আছে কি না?
উত্তর : এই সময় প্রোটিন কমে যায় অনেক, তাই আমরা উচ্চ প্রোটিন-জাতীয় খাবার খেতে বলি। যেমন : ডিম খেতে বলি, ডিমের সাদা অংশ বেশি করে খাবেন, দুধ খাবেন, মাছ খাবেন। চর্বিহীন প্রোটিন খেতে হবে।
প্রশ্ন : যদি কারো প্রি-একলামসিয়া থাকে এবং এটি একলামসিয়া পর্যন্ত গড়ায়, তখন এটি মায়ের ক্ষেত্রে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে?
উত্তর : একলামসিয়া নির্ভর করে কোন সময়ে হলো তার ওপরে। যদি অনেক আগে হয়, তখন মেক্সালাফ নামে একটি ওষুধ ব্যবহার করি। এটা দিলে অনেকটা ঝুঁকি কমানো যায়। তারপরও কোনো সময়ে হলো বিষয়টি বিবেচনা করতে হয়। খুব আগে হলে অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারি না। পরের দিকে হলে ডেলিভারি করিয়ে মা ও বাচ্চার ঝুঁকি কমাতে পারি।