গরমে সুস্থ থাকার ৬ পরামর্শ
গ্রীষ্মের এই উষ্ণ আবহাওয়ায় সবাই বেশ অস্থির হয়ে পড়ি। খুঁজে বেড়াই ঠাণ্ডা পরশ, আর একটু প্রশান্তি। এই সময় চারিদিকে নানা রকম ছোট বড় অসুখ দেখা যায়। প্রায় ঘরে ঘরেই কিছু না কিছু শারীরিক সমস্যা লেগে থাকে। এই সময়ের কয়েকটি রোগ ও তার নিরাময় নিয়ে কথা বলব আজ।
১. গরমে খাবার অরুচি
প্রথমে আসি গরমে খাবার অরুচি, ক্ষুধামন্দা, হজমে অসুবিধা নিয়ে। সাধারণত যাঁরা স্কুলে, কলেজে বা অফিসের কাজে বেশি সময় বাড়ির বাইরে থাকেন, তাঁদের এই সমস্যাগুলো বেশি হয়ে থাকে। গরমে অনেক সময় খুব মুখরোচক মজার খাবারও আমাদের খেতে ভালো লাগে না। তাই ছোট-বড় সবার খাবারের ব্যাপারে খুব সাবধান থাকা উচিত। এ সময়টায় সহজ পাচ্য, তরল, ঠাণ্ডা খাবার বারবার খাওয়াই সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
২. গরমে পানিশূন্যতা
গরমে পানিশূন্যতা, ইলেকটোলাইট ইম্বেলেসের (লবণ অসামঞ্জস্য) প্রচুর রোগী পাওয়া যায়। যেহেতু গরমে আমাদের অতিরিক্ত ঘাম হয়, ঘামের সঙ্গে দেহ থেকে প্রচুর লবণ বের হয়ে যায়, এতে শরীর ক্লান্ত ও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। অনেক বয়স্ক বা বাচ্চাদের মারাত্মক পানিশূন্যতা বা লবণশূন্যতা হতে দেখা যায়। তাই প্রচুর পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৩. ডায়রিয়া, আমাশয়
ডায়রিয়া, আমাশয়, বমি-এই তিনটি রোগ আমাদের দেশের জন্য সারা বছরই দেখা যায়। গরমে খাবার যেহেতু তাড়াতাড়ি পুষ্টিগুণ হারিয়ে ফেলে এবং জীবাণু খাবারে তাড়াতাড়ি তাদের বংশবৃদ্ধি করতে পারে ফলে এই সময়টা প্রায় সবার বদহজম, বমি, ডায়রিয়া, আমাশয় এসব সমস্যা বেশি দেখা যায়। প্রতিকার পেতে হলে, খাবার রান্না করার দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে খেতে হবে। পুরোনো ও আগের দিনের খাবার বর্জন করতে হবে, খাবার ঢেকে রাখতে হবে।
৪. জ্বর হলে
অনেকের ক্ষেত্রে গরমে জ্বর ও দুর্বল হতে দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জ্বরের কবলে পড়ে শিশুরা। যেহেতু শিশুদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রটি পরিপূর্ণ হয় দেরিতে, তাই অতিরিক্ত গরম বা শীতে জ্বরের প্রকট বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন, পাশাপাশি ঘরোয়া সেবাও।
৫. ত্বকের সমস্যা
এই সময় গরমে ফোড়া, চুলকানি, ঘামাচি ইত্যাদিসহ ত্বকের নানা অসুবিধা, ছোট-বড় সবার মাঝে দেখা যায়। সাধারণত ত্বকের পরিপূর্ণ পুষ্টির অভাবে এসব ফোড়া বা বিভিন্ন র্যাস উঠে থাকে। আবার জ্বর হলেও অনেকের র্যাস হতে দেখা যায় (এটা সাধারণত ভাইরাস জ্বরে বেশি দেখা যায়)। ঘামাচি বা শরীর চুলকানি খুব প্রকট হয় এ সময়ে। যাদের এই রকম চর্মরোগের ধাঁচ আছে, তারা অবশ্যই আলাদা সাবান, আলাদা তোয়ালে ব্যবহার করবেন। নিজের জামাকাপড় কারো সঙ্গে ভাগ করবেন না। গোসলের সময় ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন, বেশি সুগন্ধি সাবান বা তেল ব্যবহার না করা ভালো। প্রয়োজনে ঘামাচি বা সাধারণ পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। খুব অসুবিধা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। ফোড়া বা ঘামাচি যদি বেশি ব্যথা করে বা পাকতে শুরু করে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৬. প্রস্রাবে সংক্রমণ
নারী ও শিশুদের এ সময়টা বেশি প্রস্রাবে সংক্রমণ দেখা যায়। শরীরে প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় এই অসুবিধা হয়। মেয়েরা এ ক্ষেত্রে প্রচুর পানি পান করবেন, ২-২.৫ লিটার এবং বারবার টয়লেটে যাবে। একে বলা হয় ফ্ল্যাশ আউট। বাচ্চাদের বেলাতেও তাই হয়। যেহেতু মেয়েদের প্রস্রাবে সংক্রমণ সব সময় বেশি, তাই এ সময় অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে।
ডা. গুল এ জান্নাত, মাস্টার হেড কো-অরডিনেটর, এসটিএস লাইফ কেয়ার সেন্টার, অ্যাপোলো হাসপাতাল