গরমে তরমুজ
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপে পিপাসা মেটাতে ও প্রাণ জুড়াতে তরমুজের বিকল্প নেই। কারণ পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ তরমুজের শতকরা ৯২ ভাগই পানি। দেহে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে তরমুজের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তরমুজের ভালো ইলেক্ট্রোলাইটগুলো হিট স্ট্রোক থেকে আমাদের রক্ষা করে।
ধারণা করা হয়,আফ্রিকার কালাহারি মরুভুমিতে প্রথম তরমুজের চাষ শুরু হয়। দশম শতকের দিকে চীনে প্রথম এর চাষ শুরু হয় এবং বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তরমুজ উৎপাদন করে চীন। ১৩০০ শতকে ইউরোপে ও পরবর্তীকালে আমেরিকায় দাসদের মাধ্যমে তরমুজ চাষের প্রচলন শুরু হয়।
রসালো এই ফলের প্রতিটি অংশে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন এ, বি৬, সি, লাইকোপিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও এমাইনো এসিড পাওয়া যায়। এ ছাড়া পটাশিয়াম ও সামান্য পরিমাণ সোডিয়াম রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ চর্বিহীন ফল যার প্রতি কাপ থেকে ৪০ ক্যালরি পাওয়া যায়। দুই কাপ তরমুজের টুকরো হতে শতকরা ৩০ ভাগ ভিটামিন এ, ২৫ ভাগ ভিটামিন সি, ৭ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ২ ভাগ ক্যালসিয়াম, ৪ ভাগ আয়রন এবং ১ গ্রাম প্রোটিন, ২১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।
তরমুজের লাইকোপিন হলো একপ্রকার ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা প্রাকৃতিকভাবে ফল ও সবজিতে উপস্থিত থেকে শরীরে স্বাস্থ্যকর বিক্রিয়ার সূচনা করে। তরমুজ ও টমেটোর লাল বর্ণ, আঙুর ও পেয়ারার নিজস্ব বর্ণ এর জন্য এই লাইকোপিন দায়ী। প্রতি দুই কাপ তরমুজের রস হতে ১৫ হতে ২০ মিলিগ্রাম লাইকোপিন পাওয়া যায়।
হৃদযন্ত্র ও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে লাইকোপিনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া তরমুজ কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে কোষীয় সুস্থতা বজায় রাখে।
সাইট্রুলিন নামক এমাইনো এসিড তরমুজের আরেকটি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, যা কিডনির ক্রিয়ায় আরজিনিন নামক এমাইনো এসিডে রূপান্তরিত হয়। এই আরজিনিন রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রেথে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। প্রতি কাপ তরমুজের রস হতে ২৫০ মিলিগ্রাম সাইট্রুলিন পাওয়া যায়।
কিউকেউরবিটাসিন ই, লাইকোপিন, কোলিন একত্রে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটোরি উপাদান হিসেবে কাজ করে। ফলে তরমুজ আর্থাইটিসের বিরুদ্ধে উপকারী ভূমিকা পালন করে। এই উপাদানগুলো দেহের সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেহের সুস্থতা বজায় রাখে।
তরমুজের আঁশ আমাদের পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে। তরমুজের ভিটামিন এ, ত্বক ও চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং নতুন কোলাজেন ও ইলাস্টিন কোষের সুস্থতা বর্ধনে সাহায্য করে। ভিটামিন সি কোলাজেনের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। পেশির সুস্থতা রক্ষায় তরমুজ সাহায্য করে।
তবে অতিরিক্ত তরমুজ গ্রহণে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। দৈনিক ৩০ মিলিগ্রামের বেশি লাইকোপিন গ্রহণ খাদ্যে অরুচি, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাবের কারণ হতে পারে। যাদের দেহে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় পটাশিয়াম থাকে তাদের দৈনিক এক কাপের অতিরিক্ত তরমুজ গ্রহণ করা উচিত নয়। অতিরিক্ত পটাশিয়াম অনিয়মিত হৃদকম্পন ও পেশির ওপর নিয়ন্ত্রণ হ্রাস এর জন্য দায়ী।
সৈয়দা তাবাসসুম আজিজ : সহকারী অধ্যাপক, খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ।