গাউট বা গেটেবাত হলে কী করবেন
আমাদের শরীরে রক্তের সঙ্গে ইউরিক এসিড নামে এক প্রকার উপাদান থাকে, যার মাত্রা বেড়ে গেলে বিভিন্ন অস্থি-সন্ধি বা জয়েন্টে প্রদাহ হয়, এই প্রদাহকে গাউট বা গেটেবাত বলা হয়।
কারণ
- জিনগত কারণে এ সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে জন্মগতভাবে কারো শরীরে ইউরিক এসিডের উৎপাদন বেশি হয় এবং প্রস্রাবের সঙ্গে কম মাত্রায় নির্গত হয়।
- কিডনি ফেইল্যুর বা কিডনি অক্ষম হওয়ার জন্য রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়।
- দীর্ঘদিন লিউকেমিয়ায় ভুগলে এই সমস্যা হতে পারে।
- হাইপারথায়রইডিজম বা থায়রইয়েড হরমোন বেশি থাকলেও হতে পারে।
- ডাই-ইউরোটিক ও পাইরাজিনামাইড ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করলে।
- মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে।
- গ্লুকোজ-৬ ফসফেটের অভাব হলে- ইত্যাদি কারণে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
লক্ষণ
* প্রথমত এটা পায়ের বৃদ্ধাঙুলে আক্রমণ করে। হঠাৎ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা যায় পায়ের বৃদ্ধা আঙুলে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে।
* আঙুল ফুলে যায় এবং লাল হয়ে যায়।
* শুধু পায়ের বৃদ্ধাঙুলে নয়, এটা হাত ও পায়ের অন্যান্য আঙুল, কবজি, গোড়ালি, কুনুই ও হাঁটুসহ বিভিন্ন গাঁটে আক্রমণ করে।
* অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় হঠাৎ তীব্র ব্যথা হয়, কয়েক দিন পর ব্যথার তীব্রতা কমে যায়। তবে কিছুদিন পর আবার ব্যথা দেখা দেয়।
* এমনকি রোগী চলাফেরা ও কাজকর্ম করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
চিকিৎসা ও পরামর্শ
* এর চিকিৎসা নির্ভর করে এর উপসর্গের ওপর। তারপরও দ্রুত ইউরিক এসিড কমানোর জন্য এলুপেরিনল বা ফেবুস্ট্যাট জাতীয় ওষুধ এর সঙ্গে এনএসআইডি ব্যবহার করতে হয়।
* রোগীর খাবারের বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় এমন খাবার বন্ধ রাখতে হবে। যেমন – উচ্চ আমিষ জাতীয় খাদ্য, গরুর মাংস, মসুরের ডাল, সিমের বিচি, বরবটি, লিভার, কলিজা, পুঁইশাক ইত্যাদি খাবার খাবেন না।
* আক্রান্ত স্থানে গরম শেক দিতে পারেন।
* রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
* প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। যাতে প্রস্রাবের সঙ্গে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড বের হয়ে যেতে পারে।
* কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে।
* অধিক ওজনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে শরীরের ওজন কমাতে হবে।
* মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করতে হবে।
ডা. এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল।