জ্বর হলে কী করবেন
এই অসহ্য গরম আর দাবাদাহে সবাই স্বস্তির জীবন হারিয়ে ফেলছে। চারিদিকে দেখা যাচ্ছে নানান রকম ছোট বড় অসুখ। তার ভেতর সবচেয়ে প্রচলিত হল জ্বর।
জ্বর কি
আমাদের মস্তিস্কের একটি নির্দিষ্ট সেল্টার থাকে,যাকে আমরা হাইপোথ্যালামাস বলি। এটি আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যখন খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়া হয়, এই সেল্টারটি ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না। এর ফলে জ্বর বা ফিভার দেখা যায়। যেসব শিশুর বয়স ৫-৬ বছরের নিচে তাদের জ্বরের প্রবণতা একটু বেশি দেখা যায়।
জ্বরের ধরণ
বলা হয়, যেকোন বড় রোগের উপসর্গ না কি জ্বর দিয়ে শুরু হয়। তাই যে কারণেই হোক না কেন জ্বর হলে হেলাফেলা করা ঠিক নয়। সাধারণত ব্যাকটেরিয়াল বা ভাইরাস জনিত জ্বর বেশি দেখা যায়। এই আবহাওয়ায় যেসব জ্বরগুলো সচরাচর বেশি দেখা যায়, সেগুলো হলো:
• ডেঙ্গু
• টাইফয়েড
• ফুড পয়জনিং এর কারণে জ্বর
• নন-স্পেসেফিক ভাইরাল ফিভার
নন-স্পেসেফিক ভাইরাল ফিভার
সাধারণত এই ধরণের জ্বর ২-৩ দিন থাকে। তাপমাত্রা ৯৯-১০১ সির মাঝে থাকে। এই জ্বরের পাশাপাশি উপসর্গ হিসেবে শরীর ব্যাথা ও খাওয়ায় অরুচি দেখা যায়। সাধারণত ২-৩ দিন বিশ্রাম নেওয়া আর প্রচুর তরল পানীয় গ্রহণ করা এই জ্বরের প্রধান চিকিৎসা। যদি ৩ দিন পার হয়ে যায় এবং জ্বর না কমে তবে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
ডেঙ্গু
গত কয়েক শতক ধরে ডেঙ্গু খুব প্রকট হারে দেখা দিচ্ছে এদেশে। এই জ্বর এডিস নামক মশার কামড়ে হয়ে থাকে। যার মাধ্যমে আমাদের শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করে। এই জ্বরে প্রচণ্ড গা-হাত-পা ব্যাথা করে। তবে ক্ষুধা স্বাভাবিক থাকে।
জ্বরের তাপমাত্রা ১০০-১০২ সি পর্যন্ত থাকে। সাধারণত ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার এ রক্তের কোনো পরিবর্তন পাওয়া যায় না, প্লেটলেট ১০-২০ হাজার পর্যন্ত কমতে পারে। যদি ২-৩ দিন এর ভেতর জ্বর না ভালো হয় তবে সিবিসি পরীক্ষা করানো যেতে পারে। যদি দেখা যায়, প্লেটলেট কম বা হিমোগ্লোবিন অথবা শ্বেত কণিকা কম তবে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হয়। ব্যথার ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
হেমোরিজক ডেঙ্গুতে শরীরে র্যাস দেখা যায়। সাথে দাঁত থেকে প্রসাব বা পায়খানার সাথে রক্ত যেতে দেখা যায়। সাধারণত এমন সময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন পড়ে।
ব্যাকটেরিয়াল জ্বর বা টাইফয়েড
গরমে খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে। এর ফলে ব্যকটেরিয়াল জ্বর বা টাইফয়েড জ্বর হতে পারে। সবচেয়ে খারাপ জ্বর হলো টাইফয়েড,যা মানুষকে দুর্বল করে দেয়। টাইফয়েড এ ক্ষুধা মন্দা,দুর্বলতা,পায়খানার অসুবিধা,পেটে ব্যাথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।সাধারণত ৭-১০ দিন অ্যান্টিবায়োটিকের পাশাপাশি নাপা জাতীয় ওষুধ খেলে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
ফুড পয়জনিংয়ের কারণে জ্বর
খাবারের বিষক্রিয়ার প্রথম ও প্রধান উপসর্গ জ্বর,সাথে পেটে ব্যাথা বা বমি হতে পারে। সাধারণত খাবারের ২-৪ ঘন্টার মাঝে যদি জ্বরের সঙ্গে পেটে ব্যাথা,বমি,ডায়রিয়া থাকে আমরা একে ফুড পয়জনিং বলি। এক্ষেত্রে যদি বমি বা ডায়রিয়ার পরিমাণ বেশি হয় ও পানি শূন্যতা দেখা যায় তবে দ্রুত মুখে সেলাইন খাওয়াতে হবে। প্রয়োজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গরমের সময় রোগ জীবাণুর আক্রমণ খুব বেশি দেখা যায়। তাই এ সময়টায় খুব সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। শুধু জ্বরের কারণে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়। তাই সচেতন থাকতে হবে, হতে হবে সতর্ক।
ডা. গুল এ জান্নাত: মাস্টার হেড কো-অরডিনেটর, এসটিএস লাইফ কেয়ার সেন্টার, অ্যাপোলো হাসপাতাল