কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের উপায়
কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি, যা দেহের কোষের দেয়ালে থাকে। আমরা যখন চর্বিজাতীয় খাবার খাই তখন যকৃতে এই কোলেস্টেরল তৈরি হয়। এটি রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে দেহের সব রক্তনালিতে ছড়িয়ে পড়ে। শরীরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। হরমোন তৈরিতে, চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিনগুলোর পরিপাকে এবং ভিটামিন ডি তৈরিতে এটি কাজ করে।
যদি বেশি চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া হয় তবে এই অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ধমনির দেয়ালে জমাট বেঁধে প্লাক তৈরি করে এবং রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। এটি উচ্চ রক্তচাপ, হৃৎপিণ্ডের নানা ধরনের অসুখ, হার্ট অ্যাটাক, এমনকি মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে।
কোলেস্টেরল সাধারণত দুই ধরনের হয়। এর মধ্যে একটি হলো ‘লো ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন’ বা এলডিএল। এলডিএল ধমনীর দেয়ালে ক্ষতিকর প্লাক তৈরিতে সাহায্য করে, তাই একে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয়। রক্তে এলডিএলের স্বাভাবিক মাত্রা হলো প্রতি ডিএলে কমপক্ষে ১০০ মিলিগ্রাম।
আরেকটি কোলেস্টেরল হলো, ‘হাইডেনসিটি লাইপো প্রোটিন’ (এইচডিএল)। এইচডিএল ধমনীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় এলডিএল কোলেস্টেরলকে সরিয়ে দিতে সাহায্য করে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, তাই একে ভালো কোলেস্টেরল বলা হয়। এইচডিএলের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডিএল-এ ৪০ থেকে ৬০ বা তারও বেশি মিলিগ্রাম।
কোলেস্টেরল বাড়ার প্রধান কারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার। সেজন্য লাল মাংস, ফাস্ট ফুড, চিপস এবং বিভিন্ন স্ন্যাকস বেশি না খাওয়াই ভালো। এ ছাড়া ধূমপান, বাড়তি ওজন- রক্তের ভালো কোলেস্টেরলকে কমিয়ে দেয়।
কোলেস্টেরল আপনার জীবনকে থামিয়ে দিতে পারে। তাই প্রত্যেকের জানা উচিত কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের উপায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে এই পরামর্শ।
ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপান ত্যাগ করা কেবল আপনার দেহের ভালো কোলেস্টেরলকে বাড়াবে না, এটি উচ্চ রক্তচাপকেও নিয়ন্ত্রণ করবে। হৃদরোগের ঝুঁকিও কমাবে। তাই ধূমপান ত্যাগ করে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করুন।
মদ্যপান এড়িয়ে চলুন
অতিরিক্ত মদ্যপান শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। এর ফলে উচ্চরক্তচাপ, হৃদযন্ত্র অকেজো হয়ে যাওয়া এবং স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।
নিয়মিত ব্যয়াম করুন
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যয়াম শরীরে ভালো কোলেস্টরল তৈরি করে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে। গবেষকরা বলেন, নিয়মিত ৪০ থেকে ৬০ মিনিট ব্যয়াম করা ৫ থেকে ১০ শতাংশ এলডিএল কোলেস্টেরল কমায় এবং ৩ থেকে ৬ শতাংশ এইচডিএল কোলেস্টরল বাড়ায়। তাই নিয়মিত ব্যয়াম করুন।
ওজন কমান
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা স্বাস্থ্যকর জীবনের একটি বড় সূত্র। সামান্য কিছু বিষয় মেনে চলে ওজন কমাতে পারেন আপনি। যখনই বেশি খেয়ে ফেলছেন তখন একটু হাঁটুন। হয়তো টেলিভিশন দেখছেন এর ফাঁকে একটি গাজর খেয়ে নিতে পারেন।
জীবন যাপনের ধরন পরিবর্তন
অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা কোলেস্টেরল বাড়ানোর জন্য বহুলাংশে দায়ী। আপনি যদি ফাস্ট ফুড বা জাংক ফুড জাতীয় খাবার বেশি খান তাহলে কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। তাই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এমন কিছু খাবার হলো : জলপাইয়ের তেল এবং জলপাইয়ের তৈরি খাদ্য, ননি ছাড়া দই এবং দুগ্ধজাত খাদ্য, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজি। এ ছাড়া ভিটামিন সি জাতীয় খাবারও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
এ ছাড়া খেতে পারেন বিটা ক্যারোটিন জাতীয় খাবার। যেমন : আম, হলুদ পিচফল, কাঁঠাল, কুমড়া, মিষ্টি আলু, কাঠবাদাম, গাজর, ব্রকোলি, পাতাকপি ইত্যাদি। এ ছাড়া ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড-জাতীয় খাদ্য কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।