ওষুধ সেবনে সতর্কতা
রোগ সারাতে ওষুধ খেতেই হয়। কিছু কিছু ওষুধ দীর্ঘদিনের জন্য সেবন করতে হয়। যেমন : উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, ডায়াবেটিসের ওষুধ। ওষুধ সেবনের জন্য আমাদের মনে বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। কোন ওষুধ কখন সেবন করতে হবে? খাবারের আগে না পরে?
কিছু কিছু ওষুধ আছে, যেগুলো খাবারের আগে সেবন করা একেবারেই মানা। এমন ওষুধের মধ্যে ব্যথানাশক ওষুধ অন্যতম। ব্যথানাশক ওষুধ, যেমন—ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম, ন্যাপ্রোক্সেন, আইবুপ্রোফেন, অ্যাসপিরিন, কিটোরোলাক। কিটোরোলাক খালি পেটে গ্রহণ করলে অন্ত্র ফুটো হয়ে যেতে পারে। এ ওষুধগুলো তাই খাবারের পর গ্রহণ করাই শ্রেয়।
আবার ব্যথানাশক ওষুধের সঙ্গে সেবন করতে হবে প্রোটন পাম্প ইনহেবিটরজাতীয় ওষুধ। যেমন : ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, ইসোমেপ্রাজল। তবে এসব ওষুধ সেবন করতে হবে খাবারের আগে।
আবার ঠান্ডা-সর্দি বা অ্যালার্জিজনিত রোগে নির্দেশিত ব্যবস্থাপত্র অ্যান্টিহিস্টামিন খেতে হয়। যেমন : লোরাটাডিন, সেটিরিজিন, ফেক্সোফেনাডিন এগুলো খালি পেটে গ্রহণ করলে এর কার্যকারিতা বেশি হয়। অ্যান্টাসিড খাবারের পরপরই না খেয়ে ৩০ মিনিট পর খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
সিপ্রোফ্লোক্সাসিন সেবন করেননি এমন লোকের সংখ্যা কম। এটি খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দিয়ে সেবন করাই ভালো। সিপ্রোফ্লোক্সাসিন গ্রহণের দুই ঘণ্টার মধ্যে দুগ্ধজাত খাবার বা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, আয়রন বা জিংকযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো।
কারণ, এসব উপাদানের সঙ্গে আন্তক্রিয়ার কারণে রক্তে ওষুধের মাত্রা কমে যায়। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না। এ কারণে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট, আয়রন ট্যাবলেট, মাল্টিভিটামিন সিপ্রোফ্লোক্সাসিন সেবনের বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে বা পরে সেবন করতে পারেন।
আবার পেনিসিলিন খালি পেটে সেবন করাই ভালো। অতিরিক্ত প্রোটিনযুক্ত খাবার রক্তে প্রোপ্রানোললের শোষণ ও মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে বেশি শোষণের ফলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আবার গ্রাইসিওফালভিন (একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ) উচ্চ চর্বিজাতীয় খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করলে এর শোষণমাত্রা বহুলাংশে বেড়ে যায়। তাই চর্বিজাতীয় খাবারের সঙ্গে এটি গ্রহণ করলে বেশি কাজে আসে। কিছু ওষুধ, যেমন—কোট্রিম সেবন করলে বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে। না হলে এটি কিডনিতে পাথর তৈরি করে সমস্যা করতে হবে।
বেশি সমস্যা হয় একসঙ্গে বেশ কয়েকটি ওষুধ সেবন করলে। এতে ওষুধের মধ্যে প্রতিক্রিয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধের কার্যকারিতা কমতে পারে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধের কার্যকারিতা বাড়তে পারে। এ দুটোই বেশ ক্ষতিকর। তাই এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মানতে হবে। হাঁপানি আছে এমন ব্যক্তিদের ব্যথানাশক ওষুধ, বেটা ব্লকার-এটেনোলল, প্রোপানোলল সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
কিছু ওষুধ রয়েছে, যেগুলো গর্ভাবস্থায় সেবন করলে ভ্রূণের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। থ্যালিডোমাইড, রেটিনয়েড, ক্যান্সারের ওষুধ সেবন করলে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে। গর্ভকালীন টেট্রাসাইক্লিন শিশুর দাঁত ও হাড়ের গঠনে বাধা দেয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ওষুধ শিশুর হাইপোগ্লাইসেমিয়া করে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাই এ সময় ইনসুলিন নিতে হয়।
ওষুধ সেবন করে আমাদের বাঁচতে হয়। একটু এদিক-ওদিক হলে তা উল্টো ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই ওষুধ সেবনের ব্যাপারে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে জানতে হবে।
লেখক : ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু, মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।