কানে ব্যথা সমাধানের উপায়
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/01/20/kaane-bythaa.jpg)
কান আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল অংশ। আমরা প্রায় কানের নানা রকম সমস্যায় ভুগে থাকি। এর মধ্যে কানে ব্যথা একটি অন্যতম সমস্যা।
বিভিন্ন কারণেই কানে ব্যথা হতে পারে। সমস্যা থাকলেও এর সমাধানও রয়েছে। আর তাই ব্যথার কারণ জেনে নিয়ে তবেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। কানে ব্যথা হলে করণীয় বিষয়ে আনন্দবাজারের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি প্রকাশ করেছে একটি প্রতিবেদন।
ব্যথার কারণ
কানে ব্যথা, কান ভারি লাগা বা কানের সমস্যার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে সংক্রমণ। শুধু শীতকালে ঠাণ্ডা লেগেই কিন্তু কানে ইনফেকশন হয় না। সারা বছরেই কানে ইনফেকশন হতে পারে। তবে কেন এ সংক্রমণ হয় এবং কীভাবে এটি রোধ করা সম্ভব, তা আগে থেকে জেনে রাখা ভালো।
কেন হয়?
সাধারণত কানের বাইরের দিকে বা মিড্ল ইয়ারেই সংক্রমণ হয়ে থাকে।
ভারতের নাক কান গলার (ইএনটি) এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘ঠাণ্ডা লাগলে নাকের সর্দিটা কানের দিকে চলে গিয়ে সংক্রমণ হয়। বড় থেকে শিশু সবারই কানের সংক্রমণ হতে পারে। শরীর সুস্থ রাখতে অনেকেই সাঁতার কেটে থাকে। তারপরে কান পরিষ্কার করতে ইয়ার বাড ব্যবহার করে। এতে খুব সহজেই কানে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে এবং ইনফেকশন হতে পারে। এক্সটার্নাল ইয়ারে তখন ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। এ ছাড়া অনেকেরই স্বভাব থাকে কটন বাড দিয়ে সারাক্ষণ কান পরিষ্কার করার। সেটাও বিপজ্জনক।’
‘মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকের কানেই একটা ওয়্যাক্সের স্তর থাকে, যা কানের অন্দরমহলকে বাইরের ধুলোবালি থেকে রক্ষা করে। কিন্তু ঘনঘন কটন বাড দিয়ে কান খোঁচালে সেই স্তর নষ্ট হয়ে যায়। আর তার সঙ্গে যারা নিয়মিত সাঁতার কাটেন, তাদের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ, সুইমিং পুলের পানিতে একাধিক মানুষ সাঁতার কাটে। সেই পানিতে সংক্রমণের ভয় থেকেই যায়। এ ছাড়া খুব ঠাণ্ডা লেগে আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাকে সংক্রমণ হলে তা পৌঁছে যেতে পারে কানে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।’
ব্যথা হলে কী করবেন?
শিশুদের কানে সংক্রমণ খুব স্বাভাবিক। বাচ্চারা যাতে কানে কিছু দিয়ে খোঁচাখুচি না করে, সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। বাচ্চাদের কানে ব্যথা হলে তাদের কানে বেশি হাত না দেওয়াই ভালো। টর্চ দিয়ে ভেতরে কী হয়েছে তা কান টেনে দেখার চেষ্টা করলে শিশুর আরো ব্যথা বাড়তে পারে। বরং অল্প অল্প করে স্যাঁক দেওয়া যেতে পারে। গরম তেল জাতীয় কোনো কিছু কানের ভেতরে দেবেন না। একই শিশুর বারবার সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন
অনেক সময়ে গরম পানির ভাপ নিলেও কানের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
প্রত্যেকটি ইয়ারড্রপ ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। কখনোই পুরোনো ইয়ারড্রপ ব্যবহার করবেন না।
কানে আঙুল দিয়ে খোঁচাবেন না। নখ বড় থাকলে তা থেকে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কানে ব্যথা হলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে হালকা স্যাঁক নেওয়া যেতে পারে। কানে পানি ঢুকে গেলে অনেকেই আবার কানে পানি ঢুকিয়ে সেই কান পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। সেটা কিন্তু একেবারেই উচিত নয়। বরং তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে যতটা পানি মুছে নেওয়া যায়, মুছে নিন। বাকিটা ঠিক সময় মতো বেরিয়ে যাবে।
কান পরিষ্কার রাখতে কী করতে হবে?
কান পরিষ্কার রাখার জন্য বাইরে থেকে কিছু করার প্রয়োজন নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ‘কানকে নিজের মতো থাকতে দিন। কান নিজেই নিজেকে পরিষ্কার রাখতে সক্ষম। কান পরিষ্কার করতে বারবার কটন বাড ব্যবহার করা, পানি দেওয়ার স্বভাব থাকলেই বরং কানে ইনফেকশনের আশঙ্কা বাড়তে পারে। তার চেয়ে বরং রোজ গোসলের পরে তোয়ালে দিয়ে কানের যতটা অংশ পারবেন, মুছে নিন। জোর করে কানের ভেতরে খোঁচাখোঁচি করবেন না।’
সতর্ক থাকুন
ছোট বাচ্চাকে কোলে শুইয়ে দুধ খাওয়ানোর সময়ে খেয়াল রাখবেন, তার কানে যেন দুধ চলে না যায়। অনেক সময়ই বাচ্চাদের কানে দুধ ঢুকে সংক্রমণ হওয়ার ভয় থাকে।
সেফটিপিন বা কোনো কাঠি দিয়ে কখনোই কান খোঁচাবেন না।
অনেকেই মোবাইলের ইয়ারফোন ব্যবহার করে থাকেন। কারো সঙ্গে ইয়ারফোন শেয়ার না করাই ভালো। নিজের ইয়ারফোনও আলাদা বাক্সে ভরে ব্যাগে বা পকেটে বহন করুন। ইয়ারফোন ব্যাগের মধ্যে ফেলে রেখে দিলে তাতে ধুলোবালি ও ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে। তখন সেটি কানে গোঁজার সময়ে তা সহজেই কানের ভেতরে প্রবেশ করে। এতে সংক্রমণ হতে বেশি সময় লাগে না।
কান ভারি লাগলে বা কানে শুনতে অসুবিধা হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।
কান ধরে বেশি টানাটানি না করে বরং তাকে তার মতোই থাকতে দিন। দেখবেন, সে নিজেও ভালো থাকবে, আপনিও সুস্থ থাকবেন।