ফর্টিফায়েড ভোজ্য তেল ভিটামিন ডি’র ঘাটতি পূরণ করতে পারে
ফর্টিফায়েড ভোজ্য তেল বিশাল জনগোষ্ঠীর ভিটামিন ডি’র ঘাটতি পুরণ করতে পারে বলে একটি কর্মশালালায় জানিয়েছেন বক্তারা। গতকাল মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি প্রজ্ঞা আয়োজিত কর্মশালায় এ তথ্য তুলে ধরেন তারা।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন এবং গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নন এমন নারীদের দুই-তৃতীয়াংশই ভিটামিন ডি’র ঘাটতিতে ভুগছেন।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের সহযোগী বিজ্ঞানী আবু আহমেদ শামীম মঙ্গলবার একটি কর্মশালায় সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি আরও তুলে ধরেন যে, কীভাবে ভোজ্যতেল প্রতিনিয়ত ব্যক্তির খাদ্যের অংশ, ভিটামিন ডি দিয়ে শক্তিশালী করা যায় এবং কীভাবে একটি সম্পূর্ণ জনসংখ্যার ভিটামিন ডি’র অবস্থা উন্নত করার একটি কার্যকর উপায় হিসেবে কাজ করে।
রাজধানীতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের জন্য ‘সবার জন্য ভিটামিন ফর্টিফায়েড নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালার আয়োজন করে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি সংস্থা নলেজ ফর প্রগ্রেস।
তিনি আরও জানান, গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নন এমন প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে দুজন একই সমস্যায় (ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি) ভুগছেন। সাম্প্রতিক এক পর্যালোচনায় বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির উচ্চ প্রাদুর্ভাবের কথাও উঠে এসেছে।
আবু আহমেদ শামীম বাংলাদেশ ন্যাশনাল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট স্ট্যাটাস সার্ভে ২০১৯-২০ এর তথ্য তুলে ধরে বলেন, পাঁচ বছরের কম বয়সী ২২ শতাংশ শিশু (প্রায় প্রতি পাঁচজনে একজন) এবং ৭০ শতাংশ (প্রায় তিনজনের মধ্যে দু'জন) গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারীর ভিটামিন ডি‘র ঘাটতি রয়েছে।
একই জরিপের ২০১১-১২ সালের ফলাফল অনুসারে, এই হারগুলো পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ৪০ শতাংশ এবং গর্ভবতী বা অ-স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য ৭২ শতাংশ ছিল। এর অর্থ শিশুদের মধ্যে সমস্যাটি মোকাবিলায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নন এমন নাারীদের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের হার নগণ্য।
তিনি বলেন, ভিটামিন ডি’র মারাত্মক অভাবে রিকেট হতে পারে। এর ফলে শিশুদের মধ্যে দুর্বলতা বা বাঁকানো হাড় দেখা দেয়। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে, তবে হাড়গুলো দুর্বল বা ক্ষয় হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ভিটামিন ডি’র অভাবে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ে। একই সঙ্গে দেশে অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় ভোজ্যতেলে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধকরণকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ ভোজ্য তেলকে ভিটামিন ডি অবস্থার উন্নতির একটি কার্যকর উপায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোজ্য তেল ভিটামিন এ এবং ডি’র মতো চর্বিযুক্ত দ্রবণীয় ভিটামিন সরবরাহের জন্য উপযুক্ত উপায় হতে পারে, কারণ ভোজ্য তেলের ব্যবহার প্রায় সর্বজনীন।
তিনি বলেন, ভারত ২০১৮ সালে তাদের ‘ফুড ফর্টিফিকেশন রিসোর্স সেন্টার’ স্থাপনের মাধ্যমে পাঁচটি প্রধান খাদ্য আইটেমে (ভোজ্য তেল সহ) ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’ শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে, অন্যদিকে পাকিস্তানও ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’ দিয়ে ভোজ্য তেলকে ফর্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক করেছে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি অ্যাডভোকেট অব বাংলাদেশের (এলএসএসএফ) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রিনা রানী পাল বাংলাদেশে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের (ভিটামিন ‘এ’এবং ‘ডি’) ঘাটতি এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় একটি উপস্থাপনা দেন।
কর্মশালাটি পরিচালনা করেন প্রজ্ঞা ও লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন (এলএসএফএফ) বাংলাদেশ কর্মসূচির সমন্বয়ক নাফিউর আহমেদ।