অস্ত্রোপচারের আগমুহূর্তে রোগী বললেন, আমেরিকার রিং চাই
অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত। অ্যানেসথেসিয়াও দেওয়া হয়েছে রোগীকে। ঘুমিয়ে পড়লেই (অজ্ঞান হলে) নেওয়া হবে পরবর্তী ধাপে। তারপর শুরু হবে কাটাছেঁড়া। এমন অবস্থায় অস্ত্রোপচার শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে রোগী চিকিৎসককে বললেন, আমার আমেরিকার স্ট্যান্টই (রিং) লাগবে। তারপর ঘুমিয়ে পড়লেন।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জন্সের (বিএসএনএস) তিন দিনব্যাপী চতুর্থ অন্তর্বর্তীকালীন সভার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আজ রোববার (৪ মে) এমন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম।
আইসিডিডিআর,বির প্রকাশিত হেলথ অ্যান্ড নিউট্রেশন পুপলেশন জার্নালের তথ্যমতে, আমাদের দেশে যারা সার্জারি করে বা করাতে চান, তাদের মধ্যে এক শতাংশ রোগী ভিক্ষা করে টাকা নিয়ে আসে। ১২ শতাংশ লোক, যারা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদে টাকা নিয়ে আসে। অনেকে আবার তাদের সম্পদকে চিকিৎসার ব্যয়ে ব্যবহার করে। পাঁচ থেকে সাত শতাংশ মানুষ তাদের স্থায়ী সম্পদ হারায়। আর যারা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদে টাকা নেন, তারা কখনোই এ টাকা শোধ করতে পারেন না। তাই সম্পদ বিক্রি করে দেন। বিশ্ব ব্যাংকও তাদের এক পরিসংখ্যানে বলেছে, বাংলাদেশে বছরে ৫০ লাখ মানুষ চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে গরিব হয়ে যায়।
উপাচার্য ডা. শাহিনুল আলম জানান, পিত্তথলির অপারেশনের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতির পর রোগীকে ক্লিনিক্যাল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়। এরপর রোগী ঘুমিয়ে পড়ার আগমুহূর্তে তাকে যখন আমেরিকার স্ট্যান্টের কথা জানালেন, তখন তিনি খুব আশ্চর্য হন।
ডা. শাহিনুল আলম বলেন, এত প্রসিডিউর পার করার পরে, এত কাউন্সিলিং হওয়ার পরে কেন এ প্রশ্ন! অ্যান্ডোস্কোপির রুম থেকে বের হয়ে রোগীর স্বজনদের কাছে জানতে চাইলাম— রোগীর এমন পছন্দের বিষয়ে আপনাদের কিছু জানা আছে কি না। তখন তারা জানাল, হ্যাঁ, তার পছন্দ আমেরিকার রিং।
উপাচার্য বলেন, অ্যানাস্থেসিয়ার পর রোগীর এমন আচরণ মনে করিয়ে দেয় যে, কোনো না কোনো পর্যায়ে সে আমাকে অবিশ্বাস করেছে। মানে, আমরা তাকে সঠিক ডিভাইসটা দিচ্ছি কি না, দামটা ঠিক মতো নিচ্ছি কি না। অর্থাৎ, আমাদের জিনিসপত্র আর ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার প্রশ্ন রয়েছে। খরচের বিষয়টিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক শাহিনুল আলম বলেন, আমাদের দেশের জনসংখ্যা অনেক। সেইসঙ্গে রয়েছে প্রচুর রোগী। এখানে চাইলেই গবেষণা করা যায়। অনেক উন্নত দেশ আছে যেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু রোগী কম। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিত্র আলাদা। এখানে রোগীর কোনো অভাব নেই, তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতার অভাব এই সমস্যা আরও জটিল করে তুলছে।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করে উপাচার্য বলেন, স্বাস্থ্যখাতে গবেষণায় আরও বিনিয়োগ এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পরিকল্পনায় আমূল পরিবর্তন আনা দরকার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও উন্নত অবকাঠামো।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনস (বিএসএনএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী চতুর্থ অন্তর্বর্তীকালীন এ সভায় বৈজ্ঞানিক সম্মেলন, লাইভ সার্জারি, থ্রিডি অ্যানাটমি সেশন ও অ্যান্ডোভাস্কুলার সিমুলেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজনের মাধ্যমে নিউরোসার্জনরা রোগীদের চিকিৎসা ও নতুন প্রযুক্তি এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সভায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন, বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসার্জনসের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদুল হক, সদস্য সচিব ডা. নুরুজ্জামান খান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সভা বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. মাঈনুল হক সরকারসহ দেশি-বিদেশি ৩০০ জনের বেশি নিউরোসার্জন উপস্থিত ছিলেন।