কোনটি খাওয়া বেশি ভালো, ফলের জুস না কি স্মুদি?

মানুষের খাদ্য তালিকায় ফল একটি অন্যতম উপাদান। ফলে রয়েছে সব ধরনের ভিটামিন, মিনারেল; যা দেহকে স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে। ফলকে অনেক সময় জুস করে খাই বা বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস পাওয়া যায়। ফল এবং ফলের জুস উভয়ই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে কোনটি ভালো, ফল নাকি ফলের জুস, এ বিতর্ক নিষ্পত্তিমূলক। বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ বলছেন, ফলের জুসের থেকে ফল খাওয়া ভালো। কারণও খুব স্পষ্ট। ফল বা সবজি নিংড়ে রস করলে তার থেকে অধিকাংশ ফাইবারই বেরিয়ে যায়। এই ফাইবারই হজমক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু স্মুদির ক্ষেত্রে এই নিয়মটি কার্যকর নয়।
যদিও ফল ও শাকসবজি খেলে উপকার বেশি মিলবে, তাও জুস ও স্মুদির অবদান পুরোপুরি অগ্রাহ্য করা যায় না। প্রতিদিন যে পরিমাণ ফল, সবজি খাওয়া দরকার, সেই চাহিদা পূরণ করার জন্য যদি কেউ ফল ও সবজির রস বা স্মুদি বেছে নেন, তা অস্বাস্থ্যকর নয়। কিছু না খাওয়ার চেয়ে জুস বা স্মুদি খাওয়া ভালো।
কোনটি খাওয়া বেশি ভালো, ফল বা সবজির রস, না কি স্মুদি?
স্মুদিতে ফাইবার থাকে। স্মুদিতে গোটা ফল ও শাকসবজি, খোসা, পাল্প, বীজ— সব কিছু মিশ্রিত থাকে। এটি হজমে সাহায্য করে। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। জুস বা রসে সাধারণত ফাইবার থাকে না। জুস কেবলই তরল অংশটি বের করে। তাই জুসে ফাইবার আর থাকে না। যদিও পাল্পসমেত জুসে ফাইবার থাকে। জুসে থাকা চিনি রক্তপ্রবাহে দ্রুত প্রবেশ করে। যার ফলে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
স্মুদি অনেক বেশি ঘন হয়। স্মুদিতে পেট বেশি ভরে যায়। বিশেষ করে যখন এর সঙ্গে দই, প্রোটিন পাউডার, বাটার মিল্কের মতো জিনিস মিশিয়ে খাওয়া হয়, তা অনেকক্ষণ পেটে থাকে। আর জুসে ক্যালোরি কম থাকলেও, ফাইবার না থাকায় ফের খিদে পেতে পারে। আর তাতেই ওজন বেড়ে যেতে পারে।
জুসে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সাধারণত বেশি থাকে। ৬৫-৮৫ এর মধ্যে। কারণ, এগুলো দ্রুত চিনি সরবরাহ করে। স্মুদিতে একই পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকলেও, ফাইবারের কারণে সেই চিনি ধীরে ধীরে শরীরের প্রবেশ করে। প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে বলে আরও প্রশমিত হয়ে যায় চিনির প্রভাব।
‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে স্মুদিতে বীজ থাকে, সেগুলো খেলে ব্লাড সুগার বেশি নিয়ন্ত্রণে থাকে। এমনকি ফলের থেকেও বেশি।
স্মুদিতে ফাইবার থাকায় এবং তা ঘন হওয়ায় লালা উৎপাদন দ্রুত হয়। এর ফলে দাঁতের এনামেল পরিষ্কার থাকে। জুস অ্যাসিডিক হয়। অনেক ক্ষেত্রেই চিনির পরিমাণ বেশি। ফলে জুস খেলে দাঁতে আবরণ তৈরি হতে পারে এবং দাঁতের এনামেল ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে।