গুরুদাসপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানান অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা নানা সংকটে ভুগছে। প্রায় তিন লাখ মানুষের একমাত্র ভরসা এই হাসপাতালটি চিকিৎসা ও সেবা দেওয়ায় ব্যর্থ হচ্ছে। চিকিৎসক সংকট, যন্ত্রপাতির অচলাবস্থা, ওষুধের অভাব এবং অব্যবস্থাপনার কারণে সেবার মান মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন আব্দুল মান্নানের ছেলে। তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে এক্সরে মেশিন বিকল থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাজশাহী মেডিকেলে রেফার করা হয়। এ সময় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চাইলে চালক জানান, তেলের বরাদ্দ নেই। যেতে হলে দিতে হবে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। যেখানে সরকারি নির্ধারিত ভাড়া সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭৫০ টাকা। বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আব্দুল মান্নান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালে না আছে এক্সরে মেশিন, না আছে অর্থোপেডিক্স চিকিৎসক। এমনকি সরকারি অ্যাম্বুলেন্সেও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হলো। সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসাসেবা পাবে?
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুমোদিত চিকিৎসক পদ ২৮টি হলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২০ জন। যার মধ্যে ৩ জন ডেপুটেশনে থাকায় কার্যত ১৭ জন চিকিৎসকের ওপরই সেবা পরিচালিত হচ্ছে। নেই কোনো সার্জন, অর্থোপেডিক্স, চর্মরোগ বা যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ। এনেস্থেশিয়া চিকিৎসক না থাকার কারণে দীর্ঘদিন সার্জারি কার্যক্রম বন্ধ। একমাত্র এক্সরে মেশিন বহুদিন ধরে অকেজো অবস্থায় আছে।
অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাঁচ মাস ধরে তেলের অভাবে প্রায় অচল। রোগীদের অধিকাংশ পরীক্ষা বাইরে করাতে হচ্ছে। নার্সিং বিভাগের ৩৯টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৩৮ জন। তবে পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকার কারণে রোগীরা বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
এছাড়া আউটসোর্সিং কর্মীদের চুক্তি শেষ হওয়ায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকর্মীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে নোংরা টয়লেট, দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ এবং অপরিচ্ছন্ন ওয়ার্ডে রোগীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসপাতাল অন্ধকারে ডুবে যায়। জেনারেটর না থাকায় দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
চিকিৎসা নিতে আসা আসমা বেগম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় কিছু দেখা যায় না। গরমে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ রিপোর্ট বাইরে করতে হয়।
ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া মাকসুদুল আলম জানান, হাসপাতালের ওয়ার্ড ও ওয়াশরুমের অবস্থা এতটাই খারাপ যে চিকিৎসার চেয়ে অসুস্থতা বেড়ে গেছে।
আইনজীবী এসএম শহিদুল ইসলাম সোহেল বলেন, অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির সংকট থাকলেও চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। শূন্য পদ পূরণ ও যন্ত্রপাতি সচল করা গেলে সেবার মান অনেকাংশে উন্নত হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমাস জানান, আমরা সীমিত জনবল ও সুযোগ-সুবিধার মধ্যেই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। শূন্য পদ পূরণ ও বিকল যন্ত্রপাতি মেরামতের বিষয়ে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

নাজমুল হাসান, নাটোর (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর-সিংড়া)