তামাকের কারণে কী কী ক্ষতি হয়?
তামাক সেবনে বিভিন্ন ধরনের মুখের রোগ হয়, যা একপর্যায়ে অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। সাধারণত ধূমপান করলে হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া চিবিয়ে খাওয়ার তামাক, সাদা পাতা, এগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এগুলো উভয়ই সমানভাবে দোষী এবং এগুলো আমাদের পরিত্যাগ করা উচিত।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’-এর একটি পর্বে তামাকের কারণে কী কী ক্ষতি হয়, এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগের অনারারী সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. অরুপ রতন চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন পুষ্টিবিদ নুসরাত জাহান দীপা।
এবারের তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়টি কী ছিল, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, ‘ফসল ফলান, তামাক নয়। অর্থাৎ তামাককে নিরুৎসাহিত করার জন্য এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে তামাক চাষে পৃথিবীতে অনেক ক্ষতি হয়। আর ক্ষতিটা হচ্ছে দুই ধরনের—প্রথমত, তামাক যেখানে চাষ করা হয়, সেখানের মাটি নষ্ট হয়ে যায়। তামাকের মধ্যে সাত হাজার ৩৬৫টি রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। সবগুলো হচ্ছে টক্সিন বিষাক্ত পদার্থ। যেগুলো মাটির মধ্যে ঢুকে যায়। ফলে সেই মাটিতে আর ফসলি আবাদ হয় না।’
দ্বিতীয়ত, এটার ফলে পরিবেশ নষ্ট হয়। তামাক চাষের জন্য যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় এবং তামাক পাতা থেকে বাতাসে এক ধরনের নির্যাস নির্গত হয়, যা পরিবেশকে দূষণ করে। তখন পরিবেশে সুস্থ বাতাস থাকে না। ফলে যিনি এই বাতাস গ্রহণ করছেন, তিনি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগবেন। এতে তামাক চাষিরা নিজেরাও আক্রান্ত হন। তামাক চাষের ফলে এক ধরনের নির্যাস আসে, যার কারণে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা হয়। এ ছাড়া শ্বাসকষ্টজনিত ও হৃদরোগ হয়।
এজন্য এবারের স্লোগানে বলা হচ্ছে—তামাক চাষ বন্ধ করতে হবে। তামাক চাষের পরিবর্তে আবাদি ফসল আবাদ করতে হবে, যেন মানুষ পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান পায় এবং এটি খেয়ে বাঁচতে পারে।
বাংলাদেশে তামাক চাষ করা বা গ্রহণ করা সেটার পরিস্থিতিটা আসলে কী, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের একটা পরিস্থিতিতে একটি গবেষণা করা হয়েছিল, যেটার নাম ছিল গ্যাটস (গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো) সেখানে দেখা যাচ্ছে—১৫ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স, তাদের মধ্যে প্রায় ৩৫ দশমিক তিন শতাংশ অর্থাৎ, তিন কেটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাকে আসক্ত। এর মধ্যে ৪৬ শতাংশ পুরুষ এবং ২৫ দশমিক দুই শতাংশ নারী তামাক সেবন করে। আবার তাদের মধ্যে ২৮ শতাংশ মানুষ ধূমপান করে। ২০ দশমিক ছয় শতাংশ বা দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ (পুরুষ ১৬ দশমিক দুই শতাংশ ও নারী ২৪ দশমিক আট শতাংশ) ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করে। ধোঁয়াবিহীন তামাক জর্দা নারীরা বেশি সেবন করে। কিন্তু তারা জানে না যে, তামাকের সিগারেটরা যেটা ধোঁয়া উড়ে। সেটাতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয় এবং যারা ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করছে, তাদের মুখে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়ে যায়।
আমাদের কাছে প্রতিদিন মুখের বিভিন্ন রোগ নিয়ে অনেক রোগী আসে, তখন এটার ইতিহাস থেকে জানতে পারি যে, তিনি একজন তামাক ব্যবহারকারী। ওই রোগীটি ধূমপান করে বা জর্দা সেবন করেন। তাদের মুখটা একটু ভালভাবে দেখি, কারণ কিছু কিছু লেসন তাদের মুখের ভেতর আছে, যেগুলো প্রি-ক্যানসারাসাস অর্থাৎ, এটি এমন একটি শর্ত যা ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। হয়তো, হোয়াইট লেসনস খুব পাতলা একটা সাদা স্বরের মতো গাল বা জিহ্বার মধ্যে আবরণ থাকে, যা প্রাথমিক অবস্থায় বুঝা যায় না। এটা কিন্তু পরবর্তীতে ক্যানসারে রুপান্তরিত হয়। যখন একজন রোগী ওই ক্ষত নিয়ে আমাদের কাছে আসে। তখন আমরা একটি এক্স-রে করে ক্যানসারের অবস্থানটা বুঝতে পারি। তখন কিন্তু অনেক দেরি হয়ে যায়। এর ফলে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রতি বছর ১২ লাখ লোক অসুস্থ হয়, চার লাখ লোক পঙ্গু হয় এবং এক লাখ ৬৫ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে। অন্য কোনো রোগে এতো মানুষ মারা যায় না।
সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৮০ লাখ লোক তামাকজনিত রোগে মারা যায়। তামাকজনিত রোগ হচ্ছে অসংক্রামক রোগ। এই ধরনের রোগ দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এর মধ্যে একটি হলো ডায়াবেটিস রোগ, যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যারা তরুণ বয়সে ধূমপান শুরু করে তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক গুণে বেড়ে যায়। তারপর হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক ও ক্যানসার বাড়ছে। তামাকে কিন্তু শুধু মুখের ক্যানসার হয় না, ফুসফুসেরও ক্যানসার হয়।
এ ছাড়া মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যানসার বা স্তন ক্যানসার সেটাও কিন্তু পরোক্ষভাবে ধূমপানের কারণে হচ্ছে। আমরা কিন্তু এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতাম না। এখন যে স্বামী ঘরে বসে ধূমপান করেন তার স্ত্রী কিন্তু স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। তাদের সন্তান ব্রংকাইটিস, হুপিং কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
যারা নিয়মিত তামাক গ্রহণ করছে, প্রথমে মুখের ভেতরের অংশটি আক্রান্ত হয়, সেক্ষেত্রে মুখের কী কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উপরের ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এনটিভি হেলথ ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং জানুন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ।