অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে দুধ-ডিম খেতে দেওয়া ঠিক?
অস্ত্রোপচারের পর অনেক রোগীই টকজাতীয় ফল খেতে চান না। কারণ, তাঁরা মনে করেন, টকজাতীয় ফল খেলে ক্ষতস্থান পাকবে, অর্থাৎ ইনফেকশন হবে। এ ধারণা পুরোপুরি ভুল, বরং এর উল্টোটিই সত্যি।
অস্ত্রোপচারের পর টকজাতীয় ফল খেলে ক্ষতস্থান আরো দ্রুত শুকায়, টকজাতীয় ফলে উপস্থিত ভিটামিন সি-এর ইতিবাচক প্রভাবে। অস্ত্রোপচারের পর শুধু টকজাতীয় ফল নয়, আরো অনেক খাবার নিয়েই কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে। যেমন অনেকেই মনে করেন, অস্ত্রোপচারের রোগীকে দুধ-ডিম খাওয়ানো যাবে না। দুধ-ডিম খাওয়ালে অস্ত্রোপচারের জায়গায় পুঁজ হবে। এই কথাটির বক্তব্য ঠিক এমন যেন দুধ-ডিম থেকেই পুঁজ তৈরি হয়। দুধ-ডিমের মিশ্রণ অনেকটা পুঁজের মতো বলেই হয়তো এ ধারণার অবতারণা হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে দুধ-ডিম কখনো যদি পুঁজ হতো, তাহলে দুধ-ডিমকে পুষ্টি বিজ্ঞানীরা উৎকৃষ্ট খাবার বলে উল্লেখ করতেন না। আর দুধ-ডিম খেলে যদি পুঁজ হতো, তাহলে তা সব সময়ই হতো, শুধু অস্ত্রোপচারের পর কেন হবে? শরীরের ক্ষতস্থানে কিংবা কোনো স্থানে পুঁজ হয় ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের কারণে। আমাদের চারপাশে রয়েছে নানা ধরনের রোগ-জীবাণু। এসব রোগ-জীবাণু সব সময়ই শরীরকে আক্রমণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এসব ব্যাকটেরিয়াকে শরীরে ব্যাপকভাবে বাসা বাঁধতে দেয় না। যখনই কোনো কারণে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়, তখনই শরীরে তা বাসা বাঁধে এবং ইনফেকশন করে পুঁজ তৈরি করে। পুঁজ মানেই হচ্ছে শরীরের নষ্ট কোষ। ক্ষতস্থান মানেই কাটা উন্মুক্ত স্থান। এসব স্থানে জীবাণু সহজেই বাসা বাঁধতে পারে। এটি সাধারণ সুস্থ সুরক্ষিত ত্বকের ওপর কখনো সম্ভব হয় না। তাই অস্ত্রোপচারের পর ক্ষতস্থানে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের সময় অসাবধানতাবশত সংক্রমণ হতে পারে। কাজেই ইনফেকশন বা ক্ষতস্থান পুঁজ হওয়ার জন্য মূলত দায়ী জীবাণু। এ ক্ষেত্রে ডিম, দুধের কোনো ভূমিকা নেই। ডিম, দুধ বরং শরীরে প্রোটিনের জোগান দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে এবং ক্ষতস্থানে নতুন কোষ নির্মাণে সাহায্য করে। সুতরাং অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে ডিম-দুধ থেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়।