তেল কি চুলের পুষ্টি যোগায়?
চুলের যত্নে তেলের ব্যবহার অতি প্রাচীন। যুগ যুগ ধরে চুলের পেছনে তেল খরচ করে আসছেন সৌন্দর্য সচেতন নর নারী। আর সেই সুবাদে চুলের সঙ্গে তেলের গড়ে উঠেছে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। এতে যে কোনো চুলের তেলের বিজ্ঞাপন চিত্রে চোখে পড়ে দীর্ঘল চুলের কোনো নারী।
কিংবা উল্টো করে বলতে গেলে লম্বা কালো বাহারী চুলের নারী মানেই হচ্ছে কেশ তেলের বিজ্ঞাপনের দুর্দান্ত মডেল। চুলে তেল ব্যবহারের ব্যাপারটি অনেকটা বংশপরম্পরায় চলে এসেছে। সুন্দর চুলতো সবাই চায়। আর এই চিরন্তন সুন্দরের বাসনাকে বাস্তবে রূপ দিতে গিয়েই শুরু হয়েছিল চুলে তেলের ব্যবহার । এত কিছুর পরও সত্যি কথাটি হচ্ছে, চুলে তেল ব্যবহারে বিশেষ কোনো লাভ হয় না। তেল চুলের কোনো পুষ্টির কাজে আসে না। যদিও তেলের বিজ্ঞাপনে ভিটামিনসহ নানা উপাদানের কথা বলা হয়।
ধরে নিলাম, এসব তেলে উল্লেখিত ভিটামিনগুলো রয়েছে। কিন্তু চুলের গায়ে তেল মেখে কীভাবে সেটি চুলের অভ্যন্তরে পৌঁছে যাবে? বাহ্যিকভাবে তেল ব্যবহার করলে চুল সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এ চিকিৎসাও ততটা ফলপ্রসূ নয়। চুলের পুষ্টি চুল শিকড়ের মাধ্যমে শরীর থেকেই গ্রহণ করে। চুলের তৈলাক্ততা রক্ষার জন্য মাথার ত্বকে সিবাসিয়াস গ্রন্থি নামে এক ধরনের গ্রন্থি থাকে। এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তৈলাক্ত পদার্থ চুলের সৌন্দর্য ও তৈলাক্ততা রক্ষা করে। এভাবে চুল নিজেই তার তৈলাক্ততা রক্ষা করে। এক্ষেত্রে তেলের কোনো ভূমিকা নেই। চুলে তেল ব্যবহার না করলে চুলে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
অনেকে মনে করেন তেল চুল পড়া বন্ধ করে- এ ধারণাটিও ভুল। চুল পড়ার অনেক কারণ রয়েছে। কিছু কারণ চিকিৎসাযোগ্য আবার কিছু কারণ বংশগত । চিকিৎসাযোগ্য হলে চিকিৎসা করিয়ে নিলেই চুল পড়া বন্ধ হবে।
আবার তেল চুলকে কালো করে- এটিও ভুল ধারণা। চুলে তেল মাখলে চুল কালো দেখায়। বাস্তবে সেটি চুলকে কালো করে না। তেলের পিএইচ কম হলে বা তেলে মাত্রা বেশি হলে সেক্ষেত্রে ব্যবহারে চুল লালচে হয়। আর এটি ধরা পরে চুলে যখন তেল দেয়া না হয় তখনই। হালকা রঙের কাপড় ভেজা অবস্থায় যেমন গাঢ় রঙের মনে হয়,- শুকালেই ফ্যাকাসে রূপ ধারণ করে- চুলের লালচে ভাবের ক্ষেত্রেও এই ভ্রান্তি ঘটে। চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় তেল নয়, চুলের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা এবং চিকিৎসা করাই হচ্ছে আসল কাজ।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ