ছানির অস্ত্রোপচারে কেমন লেন্স ব্যবহার হয়?
চোখের ছানির অস্ত্রোপচারের সময় ছানির জন্য দায়ী ঘোলা লেন্সটি ফেলে দিয়ে কৃত্রিম একটি লেন্স বসানো হয়। এই লেন্সের বিভিন্ন ধরন রয়েছে।
ছানির লেন্সের ধরনের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৩৮৩তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. এম নজরুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আই হসপিটালের গ্লুকোমা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : ছানিতে যে লেন্স ব্যবহার করা হয়, তার রকমভেদ কেমন?
উত্তর : আমি আগে বলতে চাই, লেন্সের ধরন কী কী রয়েছে। প্রথমে হলো শক্ত লেন্স বা পিএলএমএমএস। এগুলো একটু বড় আকারের হয়। সব মিলিয়ে ১৩ মিলিমিটারের হয়, সেটি একটু বড়। আগে যেই অস্ত্রোপচারগুলো আমি করতাম, যেমন ইসিসি, এসাইসি—এ ধরনের অস্ত্রোপচারে এই লেন্স ব্যবহার করা সম্ভব। এটি প্রতিস্থাপন করা যায়।
পরে যেই অস্ত্রোপচারটা করলাম, তার নাম আমরা বললাম ফ্যাকো সার্জারি। মাত্র দুই মিলিমিটার ইনসেশন, সেখানে কিন্তু এটি কোনোভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়। সেখানে হলো ভাঁজ করা লেন্স। এই লেন্সকে দুই থেকে তিন ভাগ করা যায়। ছোট করা যায়। আমার একটি লেন্স তো ছয় মিলিমিটার, সেটাকে আমি তিন ভাগ করলে দুই মিলিমিটার হবে। এ দুই মিলিমিটারের ছিদ্র দিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকরা ব্যবহার করেন ফ্ল্যাক্সিবল লেন্স বা ফোল্ডেবল লেন্স। এই কারণে বেশি কাটার প্রয়োজন হয় না।
আমরা বেশিরভাগ চক্ষু বিশেষজ্ঞরা এখন ফ্যাকো সার্জারি করছি। দুই মিলিমিটার বা দুই দশমিক পাঁচ মিলিমিটার দিয়েই আমরা ফ্যাকো সার্জারি করতে পারি। এখন বড় করে কাটার কোনো প্রয়োজন নেই। এই ভাঁজ করা লেন্স আবার অনেক রকম রয়েছে। যেমন ধরুন মনোফোকাল, মাল্টিফোকাল। অর্থাৎ একজনের লেন্স আমি প্রতিস্থাপন করলাম, উনি আমার রোগী, দূরে ভালো দেখবেন। কিন্তু তিনি কম্পিউটার ভালো দেখবেন না, কাছে ভালো দেখবেন না। তাহলে সে রকম যদি লেন্স লাগে, দূরে ভালো দেখবেন, কাছে ভালো দেখবেন, একে বলে মাল্টিফোকাল লেন্স।
আরেকটি লেন্স এখন রয়েছে, সেটি মাল্টিফোকাল নয়, তবে বিভিন্ন দূরত্বে দেখার জন্য সাহায্য করে। এই দুটো লেন্স যদি আমরা চোখে প্রতিস্থাপন করতে পারি, তাহলে ওই রোগীর দূরে কম্পিউটার দেখা, কাছে দেখা সহজেই হবে। ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ কাজকর্ম করলে চশমা লাগবে না।
আরেকটি লেন্স যেটি আমরা আজকাল খুব ব্যবহার করি, সেটা টোরিক লেন্স। এটা কী? আপনি জানেন, একটি চোখের দুই রকম পাওয়ার। একটি হলো গোল, পুরোটাই পাওয়ার। আরেকটি হলো অ্যাঙ্গেল (আড়াআড়ি) পাওয়ার। আপনি জানেন জিনিসটা। আমি গোল পাওয়ারটা হয়তো ঠিক করে দিলাম। কিন্তু তার মাইনাস দুই অ্যাঙ্গেল পাওয়ার রয়েছে। এটি আমি ঠিক করছি না লেন্সের মাধ্যমে। তাহলে কিন্তু তিনি অস্ত্রোপচার করার পরে ওই মাইনাস দুই না দিলে পুরোপুরি দেখতে পারবেন না। তাহলে কী করা হচ্ছে? এই ইন্ট্রাকুলার লেন্সের মধ্যে, মাইনাস দুই অ্যাঙ্গেল পাওয়ার সংযোজন করে, একটি লেন্স তৈরি করা হচ্ছে। তাকে বলা হচ্ছে টোরিক লেন্স। এতে আলাদা করে আর চশমা পরার দরকার হচ্ছে না। তখন কী হবে? তখন দূরে সম্পূর্ণ তিনি দেখতে পাবেন। ওই অ্যাঙ্গেল পাওয়ারটা, স্পেরিক্যাল পাওয়ারটা টোরিক লেন্সের মাধ্যমে আমরা দিয়ে দিচ্ছি। তাহলে এটা হতে পারে মনোফোকাল টোরিক ল্যান্স, যার দূরে দেখবেন, কিন্তু কাছে দেখবেন না। হতে পারে মাল্টিফোকাল টোরিক লেন্স। অর্থাৎ উনি দূরে দেখবেন, কাছে দেখবেন, মাঝখানে দেখবেন।
অনেক ধরনের লেন্স কিন্তু দেখলাম। তবে এসআইসিএস সার্জারিটা বেশি ব্যবহার করা হয়। আর ফোল্ডেবল লেন্সে সবচেয়ে প্রচলিতভাবে চলে হলো মনোফোকাল। কারণ, এর দাম কম। কিন্তু মাল্টিফোকাল লেন্স বা টোরিক লেন্সের দাম অনেক।