উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে
সারা বিশ্বে প্রায় দেড় কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যা এবং ডায়াবেটিসজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
উচ্চ রক্তচাপ কী
রক্তকে পূর্ণাঙ্গভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানোর জন্য হৃৎপিণ্ড প্রতিনিয়ত সংকোচন ও প্রসারণ করে থাকে। সংকোচন ও প্রসারণের সময় রক্তনালির মধ্য দিয়ে রক্ত যাওয়ার সময় নালির গায়ে এক প্রকার চাপ প্রয়োগ করে, যাকে আমরা রক্তচাপ বলি।
রক্তচাপের কারণেই আমাদের সারা শরীরে রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছাতে পারে। হৃৎপিণ্ড সংকোচনের সময় যে চাপ প্রয়োগ করে তাকে বলে সিস্টোলিক রক্তচাপ। এটি সাধারণত ১২০ মিলিমিটার অব মার্কারি হয়ে থাকে। প্রসারণের সময় যে চাপ প্রয়োগ করে তাকে ডায়লিক রক্তচাপ বলে, যা সাধারণত ৮০ মিলিমিটার অব মার্কারি।
একটি সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ সাধারণত ১২০/৮০ মিলিমিটার অব মার্কারির সঙ্গে প্লাস বা মাইনাস ১০ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ কখন বলা হয়
যখন একজন মানুষের হৃৎপিণ্ডের সংকোচনের চাপ ১৪০ মিলিমিটার অব মার্কারি থেকে বেশি ও প্রসারণের চাপ ৯০ মিলিমিটার থেকে বেশি হয় এবং তা সর্বনিম্ন টানা সাতদিন একই থাকে, সে ক্ষেত্রে এ অবস্থাকে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপ।
উচ্চ রক্তচাপ মূলত দুই প্রকার :
• প্রাথমিক উচ্চ রক্তচাপ বা এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন (৯০-৯৫ শতাংশ)
• গৌণ উচ্চ রক্তচাপ বা সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন (১০-৫ শতাংশ)
কারণ
প্রাথমিক উচ্চ রক্তচাপের কারণ এখন পর্যন্ত অজানা। তবুও ধারণা করা হয়—
• বংশগত বৈশিষ্ট্যের জন্য
• দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ থেকে হতে পারে
• ধূমপানের কারণে
• অলস জীবনযাপন বা শারীরিক পরিশ্রম না করা
• চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া
• খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাব্য কারণ হলো :
• কিডনির রক্তনালি সংকুচিত হয়ে যাওয়া
• দীর্ঘদিন ধরে কিডনির অসুখে আক্রান্ত থাকা
• শরীরে এলডোস্ট্রারন নামক হরমোন বৃদ্ধি
• মানসিক চাপ
• অধিক ওজন
• ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ থাকা
• গর্ভাবস্থা
উচ্চ রক্তচাপ হলে যেসব সমস্যা হয়
• হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম হ্রাস পাওয়া (হার্ট ফেইলিউর)
• হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া (হার্ট অ্যাটাক)
• মস্তিষ্কের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়া (স্ট্রোক)
• এ থেকে অনেক সময় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে
প্রতিরোধে করণীয়
বলা হয়, উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই সর্বোত্তম চিকিৎসা। তাই—
• কর্মময় থাকতে হবে
• ধূমপান ত্যাগ করতে হবে
• তৈলাক্ত ও চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
• অ্যালকোহল ছাড়তে হবে
• খাবারে বাড়তি লবণ না খাওয়াই ভালো
• ফাস্টফুড এড়িয়ে চলতে হবে
• বেশি পরিমাণে ফল ও সবজি খান
• দৈনিক অন্তত ৪৫ মিনিট হাঁটুন
• দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন
• চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন
লেখক : ডা. এম ইয়াছিন আলী, জনস্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক ও গবেষক, চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা।