স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২০০০ পর্ব উদযাপন
আজ ৯ মার্চ প্রচারিত হয়েছে এনটিভির স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২০০০তম পর্ব। এ উপলক্ষে ছিল বিশেষ আয়োজন। এই বিশেষ আয়োজনে আমরা অতিথি হিসেবে পেয়েছি একজন বিশেষ মানুষকে, শিশু বিশেষজ্ঞ একুশে পদকপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান।
প্রশ্ন : এই যে পাঁচ বছর ধরে আমরা এই অনুষ্ঠানটি নিয়মিত প্রচার করেছি। এর বিভিন্ন ধরনের বিভাগ ছিল। আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছি। আপনার মূল্যায়ন কী?
উত্তর : যে অনুষ্ঠানটি সাড়ে পাঁচ বছর ধরে চলছে, স্বভাবতই সেটা ভালো। লোকের কাছে সেটি আকর্ষণীয়, গ্রহণযোগ্য নয়তো লোকে এটা দেখত না। আর এটি একটি মাল্টি সেকটরিয়াল অনুষ্ঠান। শুধু স্বাস্থ্যের কথা লোকের কাছে বলল, এটা কিন্তু আকর্ষণীয় নয়। শুধু রোগের কথা বলল, ওষুধ বলল এসব কথা লোকের কাছে অত গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই এই অনুষ্ঠানে সুন্দরভাবে খাদ্য সম্পর্কে, রোগ প্রতিরোধক সম্পর্কে, বিভিন্ন রোগের ভুল ধারণা ব্যাখ্যা করা হয়েছে এ সবই কাজের এবং দরকারি। লোকের কাছে গ্রহণযোগ্য। সেই কারণেই এই সাড়ে পাঁচ বছর লোকে অনেক সময় ব্যয় করে অনুষ্ঠানটি দেখেছে, উপকৃত হয়েছে এবং অনুষ্ঠান টিকে আছে।
প্রশ্ন : স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান সাধারণত সব চ্যানেলে একই রকম হয়ে থাকে। তবে একেকজনের ধরন একেক রকম হয়। আমাদের এই অনুষ্ঠানটি শুরুর বিষয়ে এবং চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে এনটিভির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী সাহেবের ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও সহযোগিতা ছিল। পাশাপাশি এই টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ অন্য যাঁরা দায়িত্বপূর্ণ পদে আছেন, তাঁরা সহযোগিতা করেছেন। দর্শকদের ভালোবাসা সমর্থনের মধ্যে এটিও কিন্তু বেশ দরকারি। সেই হিসেবে এই অনুষ্ঠানটি আমরা যেভাবে চালিয়েছি, তার সম্পর্কে কিছু বলুন এবং স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধিতে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : যেগুলো আছে ঠিকই আছে। যেসব ইনোভেটিভ ভাবনা দরকার যেমন, বিভিন্ন রকম ফ্লু, এ সময় কী করা যায়। আবার বিশেষ করে যেই রোগগুলো আগে ছিল না, এখন বেশি হচ্ছে যেমন, চিকেন পক্স, মামস এগুলো আগে খুব কম হতো। বর্তমানে বেশি হচ্ছে। এ সম্পর্কে খেয়াল রাখা। রোগটির তথ্য দেওয়া, যে ভ্যাকসিনেশন আছে সেগুলো নেওয়া এগুলো উপদেশ দিতে পারেন। তাহলে এই রোগগুলো থেকে শিশুরা এবং বয়স্করাও রেহাই পাবে।
প্রশ্ন : স্যার আপনি অত্যন্ত জনপ্রিয় চিকিৎসক এবং দীর্ঘদিন ধরে এই স্থানে আছেন মহীরূহের মতো। চিকিৎসাশাস্ত্রে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। শিশুদের স্বাস্থ্য এবং মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য আপনার কি মনে হয় এই অনুষ্ঠান যথেষ্ট, নাকি আরো উপদেশ আছে?
উত্তর : না এটা ঠিক আছে। তবে অনুষ্ঠানগুলোর আরো যা দরকার তা হচ্ছে লোককে আকর্ষণীয় করা। বেশি কথা বলে কিন্তু লাভ হয় না। মায়ের দুধ খেতে হবে, এর উপকারিতা জানাতে হবে, ভ্যাকসিনেশন নিতে হবে। না নিলে কী হয় এগুলো কিন্তু দু-চার কথায় বলা যায়। পোলিওর ক্ষেত্রে যদি বলি, লোকে হয়তো বলবে এটি তো এখন হয় না। ভ্যাকসিনেশন কেন নেব, লাভ কী হবে। কিন্তু রোগ আবার ফিরে আসতে পারে তাই পোলিওর টিকা নিতে হবে। এগুলো বোঝাতে হবে। এই ভ্যাকসিনেশন দিয়ে যেতেই হবে।
গ্রামে যদি যান আপনি, দেখবেন যেদিন ভ্যাকসিনেশন দেওয়া হচ্ছে, এটি হয়তো তাদের কাছে উৎসবের দিন। বিভিন্ন উৎসবে মানুষ যেমন আনন্দ করে তেমনি যেদিন টিকা দেওয়া হয় সেদিনও সবাই আনন্দ করে। বাচ্চারা, মায়েরা সুন্দর পোশাক পড়ে যায়। তারপর ইনজেকশন দিলে একটু কাঁদে, এরপর ভুলে যায়। কিন্তু এর অনেক উপকারিতাও আছে। সরকারের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে এখানে। এখানে সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করে।
প্রশ্ন : স্বাস্থ্যসচেতনতায় ভূমিকা রাখার জন্য আপনি সরকারের কথা বলছিলেন। তবে শুধুমাত্র সরকারের পক্ষে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখা সম্ভব হয় না। পাশাপাশি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান, সংবাদমাধ্যমের এর স্বাস্থ্য পাতা-এর ভূমিকা আছে। সেই ক্ষেত্রে আপনি বলছিলেন এগুলোর সুন্দর উপস্থাপনা। স্বাস্থ্য অনুষ্ঠানগুলোকে আরো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য কী ঘাটতি আছে, আরো কী করলে ভালো হবে বলে মনে করেন?
উত্তর : ঘাটতি খুব একটা নেই। কেননা যাঁরা বলেন, তাঁরা বিশেষজ্ঞ। যাঁরা উপস্থাপনা করেন, তাঁরাও বিশেষজ্ঞ। তবে কিছু ক্ষেত্রেবিশেষ ব্যক্তিরা যদি আসেন, তবে জিনিসটি আরো ভালো হয়। যেমন বড় অভিনয়শিল্পী বা জনপ্রতিনিধি, এঁরা যদি আসেন তাহলে জিনিসগুলো আরো প্রাণবন্ত হয়। আরো উপভোগ্য হয় এবং প্রভাব বেশি পড়ে।
স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকদের পাশাপাশি অন্য যাঁরা আছেন, তাঁদের দিয়েও আহ্বান জানাতে পারি। সেটা মানুষের মধ্যে আবেদন ফেলবে।
প্রশ্ন : আমরা এই অনুষ্ঠানটিতে রোগটি কী কারণ, লক্ষণ, সময়মতো চিকিৎসা না করালে কী সমস্যা হতে পারে এবং প্রতিরোধের উপায় কী এর বিষয়ে জোর দিই। চিকিৎসার বিষয়ে বেশি যাই না। আপনার কি মনে হয় চিকিৎসার বিষয়ে যাওয়া দরকার?
উত্তর : যে অনুষ্ঠানগুলো আছে ঠিকই আছে। আপনি তো আর চিকিৎসক নন। আপনি ডোজ, ডায়াগনোসিস বলে লোকদের বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারেন না।
প্রশ্ন : এখানে যাঁরা আসেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই আসেন। তবুও চিকিৎসার বিষয়ে বলা হয় না। আপনি কি মনে করেন চিকিৎসা নিয়ে কথা বলার দরকার আছে?
উত্তর : চিকিৎসা নিয়ে কথা বলার দরকার নেই। কেননা হয়তো গ্রহণ করার পর কারো পার্শ্বপ্রক্রিয়া হলো, তাই এ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার সমস্যা আছে।
প্রশ্ন : স্বাস্থ্য অনুষ্ঠান হিসেবে আমাদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী এবং পরামর্শ কী?
উত্তর : প্রত্যাশা একটাই আপনারা চালিয়ে যান। দেশের কল্যাণ হোক। জনগণকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করান এবং ওষুধ না খেয়ে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কী খেতে হবে, কতটুকু হাঁটতে হবে, কতটুকু ব্যায়াম দরকার, বিশ্রাম দরকার এর পরামর্শ দিন। কারণ স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে আপনাকে। নিয়মানুবর্তী জীবন মেনে চলতে হবে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব (শুভেচ্ছা বক্তব্য)
এ পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. এম আর খান এবং এনটিভির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অধ্যাপক ডা. এম আর খান
আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা এগিয়ে যান। এটি উত্তর উত্তর সফলতা লাভ করুক। এটা সবার কাছে আরো গ্রহণযোগ্য হবে এটাই আমরা আশা করি।
মোস্তফা কামাল সৈয়দ, এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান
প্রথমেই এনটিভি পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই জাতীয় অধ্যাপক, অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি এম আর খানকে। যিনি এত ব্যস্ততার মধ্যে আমাদের এই ছোট্ট একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন। আমরা কৃতজ্ঞ এবং তাঁর দীর্ঘ জীবন কামনা করি।
স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০০০ পর্বের প্রচার স্বাভাবিকভাবে আমাদের সবারই ভালো লাগছে। একটি অনুষ্ঠান যখন শুরু হয় আমরা চাই যে এটা খুব ভালোভাবে চলুক এবং এটা তাই হয়েছে। এই অনুষ্ঠানটি একটি মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান। মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্য আমাদের ভালো রাখতে হবে। আমরা যেন প্রতিদিন সবাই ভালো থাকি, আমার দর্শকরা ভালো থাকবেন সেটি আমার কামনা। অনুষ্ঠান আরো এগিয়ে যাক।
রঞ্জন কুমার দত্ত (হেড অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং)
‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’কে ধন্যবাদ ২০০০ পর্ব পর্যন্ত অনুষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য। এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের বিজ্ঞাপনদাতাদের, যাঁরা সহযোগিতা করেছেন এই পর্যন্ত আসার। এই অনুষ্ঠান থেকে আমরা যদি দর্শকদের কিছু দিতে পারি, সেটিই আমাদের সার্থকতা, এনটিভির সার্থকতা এবং স্বাস্থ্য প্রতিদিন পরিবারের সার্থকতা। আমরা মনে করি, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের জনগণকে আমরা সামান্য কিছু হলেও দিতে পেরেছি।
মো. গোলাম রওশন ইয়াজদানি (হেড অব ফিনান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট)
মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে স্বাস্থ্য একটি অন্যতম চাহিদা। স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই দিকটিই তুলে ধরা হয়। আজকে এর ২০০০তম পর্ব প্রচারিত হওয়ায় এনটিভি গর্ববোধ করছে। আশা করি এনটিভির এই প্রোগ্রামটি আরো এগিয়ে যাবে এবং মানুষের কল্যাণে দিকনির্দেশনা দেবে।
খালিদ মুহাম্মদ সেজান (অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, স্টুডিও অপারেশন, ব্রডকাস্ট অপারেশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং)
এরকম একটি অনুষ্ঠানের পেছনে সাপোর্ট দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ব্রডকাস্ট বিভাগের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা (অনুষ্ঠানের প্রযোজক)
সবাইকে ধন্যবাদ। আমি চাই যে অনুষ্ঠানটি আরো এগিয়ে যাক সবার সহযোগিতায়। পাশাপাশি আমার সঙ্গে যাঁরা এই টিমে কাজর করেন, সবাইকে আমার ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। যারা এই অনুষ্ঠানের নিয়মিত দর্শক তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।