জ্বর হলে কী খাবেন
বিভিন্ন শরীরিক অবস্থা বা রোগের সময় জ্বর হতে দেখা যায়। ঠান্ডা, কাশি, সংক্রমণের (ইনফেকশন) কারণে মানুষকে ঘন ঘন জ্বরের কবলে পড়তে হয়। সাধারণত সর্দি-কাশি বা ভাইরাল জ্বরের চিকিৎসা ঘরেই হয়ে থাকে। তাই জ্বরের তীব্রতা কমানোর পাশাপাশি রোগীর দেহের সঠিক পুষ্টি চাহিদা বজায় রাখার জন্য জ্বরের পথ্য ব্যবস্থাপনা জানা খু্বই প্রয়োজন।
জ্বরে সাধারণত শরীরের তাপমাত্রাকে ১০০ নিচে নামিয়ে আনা, তাপমাত্রাকে কমানো, গা মোছা ছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করা হয়। জ্বরের সময় বেশির ভাগ মানুষেরই রুচি কমে যায়। তাই এই সময় রোগীর খাবারের প্রতি অনীহা থাকলেও পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণে রোগীকে সঠিক খাবার-দাবার চালিয়ে যেতে হয়। চলুন জেনে নেই কী ধরনের খাবার জ্বরের জন্য উপযোগী।
১. তরল : জ্বরের সময় যেই খাবারটির চাহিদা সবচেয়ে বৃদ্ধি পায় সেটি হলো তরল জাতীয় খাবার। রোগীর বিপাকের হার বৃদ্ধি, শরীরের তাপমাত্রাকে স্বাভাবিকে আনা, হজমে ব্যাঘাত না ঘটানো ইত্যাদি বিষয়কে মাথায় রেখে তরল খাবার নির্ধারণ করা হয়। তরল হিসেবে যে খাবারগুলো খেতে পারেন।
ফলের রস : জ্বরে ভোগা রোগীদের দুই থেকে তিনবার বা এর চেয়ে বেশি ফলের রস দেওয়া গেলে উপকারী। বিশেষ করে ভিটামিন সি যুক্ত ফলের রস যা রোগীকে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগানোসহ জ্বরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে সাহায্য করে। ঘরের তৈরি কমলার রস, মাল্টার রস, সবুজ আপেলের জুস ও আনারসের রস (চিনি ছাড়া) খুবিই উপকারী। কারো যদি হজমে কোনো সমস্যা হয় সে ক্ষেত্রে জুস ছেকে খেলেও পরিমাণে ১২০ থেকে ১৫০ এমএল খেলে ভালো।
চিকেন স্যুপ : ফলের রসের পাশাপাশি রোগীকে কিছুটা প্রোটিন সরবরাহ করার ক্ষেত্রে চিকেন স্যুপ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। স্বচ্ছ চিকেন স্যুপ ভাইরাল ফ্লুর বিরুদ্ধে দারুণভাবে কাজ করে। এই চিকেন স্যুপের সঙ্গে সবজি মেশাতে পারলে তা থেকে পাওয়া যায় প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই খাবারটি জ্বরের সময় রোগীকে সঠিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দ্রুত আরোগ্য লাভ ও জ্বর পরবর্তী সমস্যা মোকাবিলায় রোগীকে সাহায্য করে থাকে।
লাল চা : শর্দি-কাশিজনিত জ্বরে লাল চা খুবই উপকারী। এ ক্ষেত্রে পানিকে আদা দিয়ে অনেক্ষণ ফুটিয়ে তার সঙ্গে টি ব্যাগ লেবু ও মধু মিশিয়ে খেলে রোগী সহজেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবে।
সবজির স্যুপ : যেহেতু জ্বরে অরুচি থাকে তাই অনেকেই সঠিকমতো খাবার খেতে পারে না। আবার অনেকে খাবার হজমও করতে পারে না। তাই দেখা যায় দৈনিক সবজির চাহিদা পূরণ করতে রোগীরা ব্যর্থ হয়। এই ক্ষেত্রে সবজির স্যুপ বা স্টক বিকল্প হিসেবে কাজে আসে। সবজিকে ভালো মতো সেদ্ধ করে ছেকে তার সঙ্গে যদি আদা যোগ করা হয় তবে সেই পানিও রোগীর জন্য অনেক উপকারী।
জ্বরের রোগীদের জন্য যেকোনো তরল খাবার তৈরিতে তুলসি পাতা, লেবু, আদা, লং ইত্যাদি ব্যবহার করলে ভালো।
২. নরম পথ্য : তরলের পাশাপাশি রোগীকে নরম বা অর্ধতরল খাবার দেওয়া গেলে ভালো। রোগীকে যেন বেশি চাবাতে না হয়, সহজে গেলা যায় এবং সহজে হজম হয় সে জন্য নরম পথ্য নির্বাচন করতে হবে। যেহেতু তরল খাবারের ক্যালোরি কম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান কম পাওয়া যায় তাই তরল খাবারের পাশাপাশি রোগীকে নরম খাবারও দিতে হবে। নরম পাতলা মুগডালের খিচুরি, জাও ভাত , সুজি , সাগু , পুডিং , নরম কাটা ছাড়া মাছ ইত্যাদি খাবার রোগীকে দিতে পারলে ভালো।
উপরোক্ত খাবারগুলো জ্বরের রোগীদের ক্ষেত্রে যেমন উপকারী তেমনি এমন কিছু খাবার রয়েছে তা জ্বর অবস্থায় না খাওয়া উচিত। যেমন : ফাস্ট ফুড , ভাজাপোড়া খাবার, কাচা সবজি বা কাচা খাবার ( যেমন সালাদ), অতিরিক্ত শক্ত খাবার ইত্যাদি। কড়া দুধ চা কফি, কোল্ড ড্রংসি এসব খাবার শুধু হজমেই অসুবিধা করে না জ্বরে দ্রুত আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে। তাই এ সময়টায় এই ধরনের খাবার এড়িয়ে গেলেই ভালো হয়।
লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল