বর্ষার রোগবালাই
বৃষ্টিকে ভালোবাসেন অনেকেই। গরম শেষে এক পশলা বৃষ্টি যেন শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। তবে এই সময়টায় কিছু বাড়তি সতর্কতা না নিলে আক্রান্ত হতে পারেন বিভিন্ন রোগব্যাধিতে। এই সময়ের রোগব্যাধি সম্পর্কে জানিয়েছে লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন বোল্ডস্কাই।
হজমে গোলমাল
গরম থেকে মুক্তি পেতে বর্ষা স্বস্তি দিলেও এ সময়ে একটি অন্যতম সমস্যা হজমে গোলমাল। এর প্রধান কারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ। এর থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তাই পানি ফুটিয়ে খাওয়া খুব জরুরি। ফাস্ট ফুড এবং তেলের খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এই সময় শরীরে সহজেই ভাইরাস আক্রমণ করে। তাই ঘর সব সময় পরিষ্কার রাখুন। হজমের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে গরম পানিতে মধু দিয়ে খেতে পারেন। এটি বিষাক্ত টক্সিনকে বের করে দিতে সাহায্য করবে। সহজে হজম হবে এ ধরনের খাবার খান। বাইরের খাবার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
ঠান্ডা
এটি একটি প্রচলিত সমস্যা। ঠান্ডার ফলে নাক দিয়ে সর্দি ঝরা, কফ, হাঁচি ইত্যাদি সমস্যা হয়। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
টাইফয়েড
টাইফয়েড জ্বর ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। খাবার ও পানি থেকে এই রোগ ছড়ায়। সাধারণত সংক্রমণের এক থেকে তিন সপ্তাহ পরে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রচণ্ড জ্বর, মাথাব্যথা, সারা শরীরে ব্যথা, ঝিম ঝিম ভাব, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, লিভার বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। রোগ প্রতিরোধে পরিষ্কার পোশাক পরতে হবে, বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে হবে। হাত ভালোভাবে ধুতে হবে। ঘরের আসবাব পরিষ্কার রাখতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস আলাদা করে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে। টাইফয়েড হলে রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এবং সঠিক চিকিৎসা নিলে এই রোগের জটিলতাগুলো এড়ানো যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে।
ম্যালেরিয়া
আমরা সবাই জানি ম্যালেরিয়া রোগের প্রধান কারণ মশা। এটি বর্ষার একটি বড় সমস্যা। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা কামড়ালে ম্যালেরিয়া রোগ সংক্রমিত হয়। এ রোগে কাঁপুনিসহ জ্বর আসে, রক্তশূন্যতা হতে পারে, শীত শীত ভাব এবং বমি ভাব হয়। রোগ জটিল হলে মৃত্যুও হতে পারে। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে শোবার সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া কীটনাশক প্রয়োগ করে মশা প্রতিরোধ করতে হবে। অব্যবহৃত পাত্র বা বিভিন্ন জায়গায় থাকা পানি জমে থাকলে তা ফেলে দিতে হবে। এ রোগের চিকিৎসায় চিকিৎসকরা কুইনাইন অথবা আর্টিমেসিনিন ধরনের ওষুধ দিয়ে থাকেন।
ডায়রিয়া
ডায়রিয়া পৌষ্টিক তন্ত্রের একটি রোগ। এখানে মলের সঙ্গে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। অনেক সময় ডায়রিয়া নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে যদি অবস্থার অবনতি হয়, তাহলে ডায়রিয়া হলে প্রতিদিন শরীর থেকে ২০-৩০ লিটার পানি বের হয়ে যায়। এটি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। তাই পানিশূন্যতারোধে স্যালাইন খেতে হবে। তবে রোগ মারাত্মক হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডেঙ্গু জ্বর
এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে এই রোগ সংক্রমিত হয়। সাধারণত বর্ষার সময় অর্থাৎ জুন-জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ শরু হয়। এ রোগে কাঁপুনি দিয়ে উচ্চমাত্রার জ্বর আসে। সারা শরীর-হাড়ে ব্যথা হয়, অরুচি, দুর্বলতা, পেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। জ্বর আসার কয়েকদিন পর দেহে লালচে দাগ বা র্যাশ দেখা দিতে পারে। জ্বর হলে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে। জ্বর কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। তবে রোগ জটিল হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।