রোজায় সিওপিডি রোগীরা কী করবেন?
সিওপিডি একটি জটিল মারাত্মক রোগ। বলা হয়, পৃথিবীর মৃত্যুহারের ষষ্ঠ কারণ এটি। ৭ জুলাই এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৮৯তম পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ইউনাইটেড হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ।
প্রশ্ন : সিওপিডি একটি জটিল রোগ। একটু কি বলবেন সিওপিডি কী?
উত্তর : সিওপিডির পুরো নাম ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ। আগের দিনে আমরা যেমন ক্রনিক ব্রংকাইটিস ওইথ ইমফাইসিমা বলতাম। এখন একে আর বলা হয় না। একসঙ্গে মিলিয়ে সিওপিডি বলা হয়। সারা বিশ্বে সিওপিডি শব্দটি চালু হয়ে গেছে। এটা খুব জটিল রোগ। সারা বিশ্বে মৃত্যু হারের ষষ্ঠতম কারণ হলো সিওপিডি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যে হারে ধূমপান করা হচ্ছে, বা যে হারে পরিবেশদূষণ হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে এটি মৃত্যুহারের তৃতীয় কারণ হিসেবে অধিকার করে নেবে। তাই এখন থেকেই যদি আমরা এর ব্যাপারে ব্যাপকভাবে সচেতন না হই, এটি অনেক জনগোষ্ঠীকে গ্রাস কর নেবে।
প্রশ্ন : আপনি বললেন ধূমপান হচ্ছে এর প্রধান কারণ। আরো কী কারণ আছে এর?
উত্তর : সিওপিডি বিষয়টি আগে একটু বুঝিয়ে বলি। এটি একটি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। যেখানে শ্বাসনালি শ্বাস নিতে বা ফেলতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এটাকে ঠিক করা যায় না। এটা বাড়তে থাকে। এই রোগে বলা হয় আস্তে আস্তে কবরের দিকে হাঁটতে থাকে। ফুসফুসের গঠনটা পরিবর্তন হয়ে যায় যেখানে হাঁপানিতে ভালো হয়। হাঁপানির ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট যখন থাকে না, তখন শ্বাসনালিগুলো একেবারের স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু সিওপিডিতে শ্বাসনালি এবং ফুসফুসের গঠন ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে। ফুসফুসের ছোট ছোট শ্বাসনালি এবং বায়ুথলির যোগাযোগ নষ্ট হয়ে যায়। যখন রোগী শ্বাস নেয়, বাতাসগুলো জমতে থাকে। কিন্তু রোগী শ্বাস ফেলতে পারছে না। তখন দেখা যায় ফুসফুসটা হয়তো ফুলে আছে। শ্বাস ফেলতে পারছে না। রোগী হয়তো অপুষ্টিতে ভুগছে। একেবারে নড়াচড়া করতে পারছে না। সে হয়তো টয়লেটে পর্যন্ত যেতে পারে না। তাকে বসে বসেই হয়তো সবকিছু করতে হয়। এই তার জীবন।
প্রশ্ন : এ তো গেল অগ্রবর্তী পর্যায়ের কথা, শুরুর দিকে কি বোঝার কোনো উপায় রয়েছে?
উত্তর : যে যত বেশি দিন ধূমপান করবেন, তার সিওপিডি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আমি আবারও বলছি, যে যত বেশি দিন বেশি হারে ধূমপান করবেন, সিওপিডিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তাঁর তত বেশি। এটা তো একদিনে হয় না। দেখা যায়, অনেক বছর পর এটা প্রকাশিত হতে থাকে। এটাকে মধ্য বয়সের রোগ বলা হয়।
প্রথমে এটাকে ধরতে পারবেন না। ৪০ বছর হয়তো পেরিয়ে গেছে তখন বুঝতে পারবেন। ফুসফুসের অবকাঠামোটা ততদিনে পরিবর্তন হয়ে গেছে।
আমার কাছে যখন রোগী আসে, আমি খুব অনুরোধ করে বলি দয়া করে এখনো ধূমপান বন্ধ করুন। কিছুটা হলেও আরামে থাকতে পারবেন। যেই ভালো অংশটুকু আছে ফুসফুসের একে মেরামত করার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন : সিওপিডির সঙ্গে ইনহেলারের সম্পর্ক কোথায়?
উত্তর : অ্যাজমাতে ইনহেলার নিলে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে। সিওপিডিতে যেহেতু শ্বাসনালিই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। তারপরও আমরা স্টেরয়েড মিশ্রিত ইনহেলার দিই। কোলিনবিরোধী ইনহেলারটি খুব ভালো কাজ করে।
রমজানের সময় সিওপিডি রোগীরা তো রোজা রাখতে চাইবে, এখানে দীর্ঘ কার্যকরী ইনহেলার যেগুলো রয়েছে সালমেটারয়েল, স্টেরয়েড মিশ্রিত ইনহেলার সেগুলো ইফতারের সময় এবং সেহরির সময় দিই। মাঝে মাঝে তাকে ইপ্রাট্রোপিয়াম ইনহেলার নিতে বলি। সেহরির সময় ইউনিকনটিন যে ওষুধ আছে সেগুলো খেতে বলি। আমরা এভাবে তার চিকিৎসা করি।
আর অনেক সিওপিডি রোগী আছে, যাদের সারাক্ষণ অক্সিজেনের মধ্যে রাখতে হয়। এমনও রোগী আছে, যাকে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টাই অক্সিজেনের মধ্যে রাখি। সুতরাং অক্সিজেন নিলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। ইনহেলার নিলেও রোজার ক্ষতি হবে না। তারা চাইলে রোজা রাখতে পারবেন। এখানে যেহেতু অ্যালার্জির কোনো বিষয় নেই, তাই সব ধরনের খাবার সে খেতে পারে।
প্রশ্ন : আসলে একটা সময় তাকে মৃত্যুর মুখে যেতে হয়। তার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনারা কী চিকিৎসা করেন যে সে মোটামুটি ভালোভাবে থাকতে পারে?
উত্তর : এটাকে পাঁচটা ভাগে আমরা ভাগ করি। পর্যায় শূন্য থেকে শুরু করি। প্রথম দিকে যখন রোগটি নির্ণয় করতে পারি, তখনই তাকে ধূমপান থামাতে বলি। পরিবেশদূষণের মধ্যে যদি কাজ করে, তখন কাজ থামাতে বলি। তখন তাকে ব্যাপকভাবে ওষুধ দিই। পুষ্টিহীনতাও এখানে কাজ করছে। পুষ্টি যদি ঠিকমতো বজায় রাখা যায়, তাহলে বৃদ্ধিটাকে আটকানো যায়। তবে যদি চার-পাঁচ পর্যায়ে চলে আসে, তখন তাকে লক্ষণ বুঝে বুঝে ওষুধ দিতে হবে। অনেক সময় স্টেরয়েড খাওয়াতে বলা হয়, যদিও এখানে স্টেরয়েডের ভূমিকা নেই। কেননা এখানে অ্যালার্জি তো কোনো কাজ করছে না। অ্যালার্জি হাঁপানির ক্ষেত্রে কাজ করছে।
এটি মারাত্মক রোগ হলেও প্রতিরোধযোগ্য। ফুসফুসের ক্যানসারের মতো এটিও প্রতিরোধযোগ্য।
একটি লোক যদি ধূমপান না করেন, তাহলে তিনি সিওপিডিতে আক্রান্ত হবেন না। এ ছাড়া আরো কারণ আছে বিশেষ করে মা-বোনেরা গ্রামে খড়ির চুলায় কাজ করেন সেই ধোঁয়াটাও সিওপিডির বড় কারণ। এখানেও সচেতন হতে হবে।
তাঁরা যখন রান্না করবেন, তখন যেন মুখে মাস্ক বা গামছা পেঁচিয়ে রান্না করেন। যেন ধোঁয়াটা তাঁদের নাকে মুখে না যায়। অর্থাৎ ব্যাপকভাবে এর সচেতনতা বাড়াতে হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বলি, ধূমপান করবেন না। আর পরিবেশকে সুন্দর রাখুন।