শিশুদের এই সময়ে কী কী রোগ হয়
কখনো বৃষ্টি, সেঁতসেঁতে আবহাওয়া, কখনো গরম- এই সময়ে বাচ্চারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তবে ভাইরাসের কারণে জ্বর হলে প্রথমেই ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ নেই। তবে জ্বর বেশি দিন স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আজ ১১ জুলাই এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৯৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশুরোগ বিভাগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সেলিনা খানম।
urgentPhoto
প্রশ্ন : কী কী ধরনের রোগব্যাধিতে শিশুরা এই সময়ে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি?
উত্তর : এই সময় বাচ্চাদের অনেক ধরনের সমস্যা হয়। ত্বকের সমস্যা হয়। ডায়রিয়াজনিত সমস্যা হয়। ডেঙ্গু মশায় আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু হয়। এ ছাড়া সাধারণ ঠাণ্ডা-জ্বর তো আছেই।
প্রশ্ন : এই সময়ে এই রোগগুলোর প্রকোপ এত বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
উত্তর : আমাদের দেশের আবহাওয়া এমন যে- গরম, বর্ষা সবসময়ই বাচ্চাদের ঘাম হয়। দেখবেন যে ঘামের ফলে বাচ্চার শরীর ঘামাচিতে ভরে গেছে। বাচ্চা হয়তো খেতে চাচ্ছে না। যার জন্য অনেক সময় পানি কম পান করার কারণে শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে যায়। এ কারণে বিভিন্ন সমস্যা হয়।
আরেকটি বিষয় হলো পানির বিশুদ্ধতা। পানির বিশুদ্ধতার ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন থাকে। অনেক সময় সোয়ারেজ এবং ওয়াশার লাইন লিকেজ হয়ে যায়। যার জন্য বিশুদ্ধ পানি পায় না। এর ফলে ডায়রিয়া হয়।
এরপর পানিবাহিত যে রোগগুলো যেমন টাইফয়েড, জন্ডিস- এগুলোতে বাচ্চারা আক্রান্ত হয়। আবার বাচ্চারা হয়তো বৃষ্টির পানিতে ভিজছে, ঠিকমতো মাথা শুকাল না। আবার গরম থেকে ঘেমে এসেই হয়তো গোসল করে নিল, মাথা ভালো করে মুছল না। সেঁতসেঁতে মাটিতে হাঁটছে। তখন সর্দি-কাশি, ভাইরাস এগুলোতে আক্রান্ত হচ্ছে।
প্রশ্ন : এই সময়টায় ভাইরাস জ্বর , ইনফ্লুয়েঞ্জা এত বেশি বেড়ে যায় .....
উত্তর : একদম। বরাবরই এই সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসটা কার্যকরী থাকে। একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রশ্ন : এই জ্বরের লক্ষণগুলো কীভাবে প্রকাশ পায়?
উত্তর : প্রথমে মাথা ব্যথা হয়। বমি হয়। তার পর জ্বর এসে গেল। পেটে ব্যথা, নাক দিয়ে পানি ঝড়া, কারো কারো গলায় একটু অস্বস্তি হয়। ঢোক গিললে গলায় ব্যথা করে। এরপর কাশি হয়- এগুলোই প্রচলিত উপসর্গ। মাথা ব্যথা সাংঘাতিক রকমের হয়, ছোট বাচ্চারা খুব বিরক্ত হয়ে যায়।
প্রশ্ন : মা-বাবারা এই ক্ষেত্রে কী করবেন?
উত্তর : মাথা ব্যথা ও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিতে হবে। অল্প অল্প করে একটু ওরস্যালাইন, পানি ও শরবত খাওয়াতে হবে। আর মা-বাবাকে নিশ্চিত করতে হবে এটা ভাইরাস জ্বর, দুই চার দিন অপেক্ষা করেন অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে না। ভালো হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে কখন যাওয়া উচিত বলে মনে করেন?
উত্তর : যদি জ্বর ছয়-সাত দিনেও না কমে এবং বাচ্চার সাংঘাতিক রকম পেটে ব্যথা থাকে, অনেক সময় পাতলা পায়খানা হয় অথবা বাচ্চা কিছুই খাচ্ছে না- আপনার মনে হচ্ছে এটা টাইফয়েড জ্বর বা অন্য কোনো জ্বর তখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। অন্তত তিন-চার দিন বাড়িতেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন : এখন আসলে জ্বর এত উচ্চ মাত্রার হয় যে মা-বাবা অধৈর্য হয়ে যান ...
উত্তর : রীতিমতো মা-বাবারাই আমাদের কাছে ওষুধ চান। বলেন, দিলেন না ওষুধ। তাই রোগের বিষয়টি যদি একটু সময় নিয়ে বোঝানো যায় হয়তো বুঝবেন। আর প্রত্যেকটি ওষুধেরই তো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।
প্রশ্ন : আর অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করতে হলে তো কোর্স শেষ করতে হবে ...
উত্তর : হ্যাঁ কোর্স শেষ করতে হবে। তবে যদি প্যারাসিটামল চার-পাঁচ ঘণ্টা পরপর দেওয়া যায় তাহলে কষ্টটা কমে আসে। আর যদি অল্প অল্প করে ফ্লুইড দেওয়া যায় তাহলে ভালো। এ ছাড়া বমি হলে দুই-তিন বার বন্ধের ওষুধ প্রয়োগ করতে পারি। যেসব বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে তারা দুই তিন দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে জ্বর যেন ১০০-এর ওপর না উঠে। গা মুছে দিতে হবে।
প্রশ্ন: অনেক বাচ্চার খিঁচুনি হয় এ প্রসঙ্গে কী করবে? এটি কতখানি মারাত্মক?
উত্তর : যাঁরা কখনো এই অবস্থা দেখেন নাই তাঁরা তো খিঁচুনি দেখলে প্যানিক হয়ে গিয়ে বাচ্চাকে নিয়ে দৌঁড়াতে শুরু করবেন। কিন্তু এটা বুঝতে হবে জ্বর হঠাৎ করে বেড়ে গেলে খিঁচুনি হয়। তাই জ্বর যাতে না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এ রকম হওয়ার সাথে সাথে মাথায় পানি দিতে হবে। জ্বরের ওষুধ তো দিতেই হবে, পাশাপাশি সিডাকসিন জাতীয় ওষুধ হাতের নাগালে রাখতে হবে। তবে পাঁচ বছরের পর খিঁচুনি হওয়ার ভয় থাকে না।