চুল পড়া সমস্যায় কী করবেন?
চুল পড়া এখনকার সময়ে একটি অতিপরিচিত সমস্যা। বিভিন্ন কারণে চুল পড়তে পারে। আজ ২৬ জুলাই এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১০১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ স্কিন সেন্টারের ডার্মাটোলজিস্ট ডা. তাওহিদা রহমান।
প্রশ্ন : চুল কমবেশি সবারই পড়ে। তবে একে কখন সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করেন?
উত্তর : আসলে চুল হচ্ছে সৌন্দর্যের একটি অলংকারের মতো। এই সৌন্দর্যে বিশাল অবদান রাখে চুল। তবে চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা। সাধারণত প্রতিদিন যদি ৫০ থেকে ১০০টি চুল প্রতিদিন পড়ে একে আমরা স্বাভাবিক বলে ধরে নিই। আর এর থেকে যদি বেশি চুল পড়ে একে চুল পড়া বলতে পারি।
প্রশ্ন : কেন এই চুল পড়া হয়?
উত্তর : আগে চুল পড়া এত সমস্যা মনে হতো না। এখন চুল বেশি পড়ে। কিছু কারণ আমরা এড়িয়ে যেতে পারি। আর কিছু কারণ এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আর কিছু কারণ এড়িয়ে যাওয়া যায় না। যেমন জেনেটিক কারণ। এন্ডোজেনিক এলোপেসিয়ার কারণে হয়- এটা নারী এবং পুরুষ উভয়েরই হয়।
মহিলারা এসে বলেন, আমার মাঝখানের সিঁথিটা বড় হয়ে যাচ্ছে। আর ছেলেরা বলে আমরা মাথার সামনের দিক থেকে চুল কমে যাচ্ছে। হেডেটারি হওয়ার কারণে একে আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না।
এ ছাড়া কিছু পদ্ধতিগত রোগের কারণে সমস্যা হয়। যেমন : এনিমিয়া, হরমোনার ইমব্যালেন্স, থাইরোয়েডের সমস্যা, এসএলই ইত্যাদি। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় অনেকের চুল পড়ার সমস্যা হয়। কারণ এ সময় একটা হরমোনাল পরিবর্তন হয় আমাদের শরীরে। এর জন্যও এমন হয়। এ ছাড়া কিছু আঞ্চলিক রোগ রয়েছে যেটা মাথার ত্বকে হয়। যেমন ফাংগাল, রিং ওয়ার্ম ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়াল ফলিকলাইটিস, খুশকি ইত্যাদি। এসব কারণেও চুল পড়ে।
প্রশ্ন : চুল পড়া নিয়ে যখন রোগীরা আপনাদের কাছে আসে, তখন কী করেন?
উত্তর : প্রথমে আমরা তার খাবারের ইতিহাস নিই। কেননা ইদানীং সেডেনটারি লাইফস্টাইলের জন্য আমাদের ওজন বেড়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। দেখা যায়, পুষ্টিগুণ বিবেচনা না করে কিছু একটা খেয়ে নিচ্ছি। সুতরাং এ কারণে খাদ্যে মিনারেলস ভিটামিন প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয়।
এরপর আসে জীবনযাপনের ধরন। ঘুম শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে চুল পড়বে। কেউ কেউ ঘুমের সমস্যায় ভোগে। আবার কেউ কেউ রাত জাগে, যেন স্বভাব হয়ে গেছে। এই জীবনযাপনের ধরন চুল পড়ার বড় কারণ।
এ জন্য প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন দুধ, ডিম, মাছ, দই ইত্যাদি। আর আমরা চুলের স্টাইলের ক্ষেত্রে খুব সচেতন। ব্লো ড্রাই, স্ট্রেইটনার, ফোম, জেল এগুলো আমাদের চুলের ওপর প্রভাব পড়ে।
প্রশ্ন : চুল পড়া বন্ধ করার জন্য কোনো চিকিৎসার উপদেশ দেন কি না?
উত্তর : প্রথমে আমরা বলি, খাবারকে প্রোটিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ করতে। কিছু সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ই, বি দেওয়া হয়। এগুলো চুল বাড়া এবং ঘনত্বের জন্য খুবই জরুরি। এরপরে কিছু টপিক্যাল স্টেরয়েড দেওয়া হয়। এ ছাড়া মেনোক্সিডিল দিতে বলি। সবগুলো বিষয়ই দীর্ঘমেয়াদি। ধৈর্য হারালে চলবে না।
এসব মেডিকেশন ছাড়াও এখন হেয়ার লেজার রয়েছে। পিআরপি রয়েছে। এবং পরিশেষে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট রয়েছে, যা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান।
প্রশ্ন : আপনারা কি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করছেন?
উত্তর : আমাদের ক্লিনিকে এখনো করা হচ্ছে না। তবে আমাদের দেশে ভালো বিশেষজ্ঞ রয়েছে, তাঁরা করছেন।
প্রশ্ন : চুল পড়ার চিকিৎসায় লেজারের ভূমিকা কতটুকু? এবং আপনারা কীভাবে এটিকে কার্যকর করছেন?
উত্তর : চুল পড়া হচ্ছে কেন? চুলের ফলিকলগুলো সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। সেখানে আমাদের পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং রক্ত চলাচল হচ্ছে না। এই কারণে চুলের লেজারের কাজ হচ্ছে এটি রুটে কাজ করে ফলিকলের বৃদ্ধি বাড়িয়ে দেয়। এবং ফলিকলে কাজ করে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। এটা একটা ফটোবায়োস্টিমুলাইটার। প্রতি সপ্তাহে নিতে হয় এবং অন্তত ছয় মাস নিয়মিত করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রশ্ন : কেমন সাড়া পাচ্ছেন এর বিষয়ে?
উত্তর : এটা আসলে নির্ভর করে রোগীর ওপর। দেখা যায় তারা হেয়ার লেজার নিচ্ছে। তবে ডায়েটে সে ধরনের নিয়মিত না। বা যে সাপ্লিমেন্ট বা মিনারেলগুলো দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়মিত খাচ্ছে না।
তাদের জন্য ভালো ফল আশা করা যায় না। তবে যারা সব কিছু মেনে চলছে, তাদের চুল গজাচ্ছে বা চুল পড়ার আর আগের মতো নেই।
প্রশ্ন : একটা সময় আমরা দেখতাম খুব বয়স্কদের ক্ষেত্রে চুল পড়া হতো তবে এখন তরুণ বয়সে এটি হয় এর কারণ কী?
উত্তর : জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন হয়েছে আর হরমোনাল কিছু কারণ রয়েছে, যা বয়স মানে না। যেমন : পলিসিসটিক ওভারিয়ান সিনড্রম এটা তরুণ মেয়েদের ক্ষেত্রেও হচ্ছে – এ কারণে চুল পড়া হয়।
প্রশ্ন : চুল পড়া প্রতিরোধে কীভাবে চুলের যত্ন নেবে?
উত্তর : প্রথমে আসি পরিচ্ছন্নতা নিয়ে। চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু বেছে নিতে হবে। খুশকির জন্য কিছু মেডিকেটেড শ্যাম্পু রয়েছে। যেমন- সিলেনিয়াম সালফাইট, কিটোকোনাজল। খুশকি যখন বেশি হয় তখন আমরা বলি প্রথম এক মাস প্রতিদিন ব্যবহার করেন। এর পরের এক মাস একদিন পরপর। এরপর ধীরে ধীরে ব্যবহার করা কমিয়ে দেবেন।
আর শ্যাম্পু করলেই হবে না। এরপর চুল ভালো মতো ধুতে হবে। যেন চুলে শ্যাম্পুর অবশিষ্ট না থাকে, এতে চুলে আবার খুশকি হবে।
প্রশ্ন : আর অনেকে মনে করেন খুশকি ছোঁয়াচে কি না, এ নিয়ে অনেক চিন্তা রয়েছে। আবার একজনের চিরুনি আরেকজন ব্যবহা্র করলে সমস্যা হতে পারে কি না, এটা বলে অনেকে। আপনার কী মত?
উত্তর : আসলে চুল পড়ার তো অনেক কারণ। আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয়ে পড়ে, ফাংগাসও একটা কারণ খুশকির। তাই সে ক্ষেত্রে এটা ছোঁয়াচে হতে পারে।
আর ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা মানার জন্য চিরুনি, চুলের ব্যান্ড এগুলো নিজের ব্যবহার করা ভালো।