কোমর ব্যথায় কী করবেন?
অনেকেই কোমর ব্যথায় ভুগে থাকেন। এটি বেশ প্রচলিত সমস্যা। ৩১ জুলাই এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কথা বলেন বিশিষ্ট ব্যাক পেইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আলতাফ হোসেন সরকার।
প্রশ্ন : কোমর ব্যথা বলতে আসলে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : পিঠের নিচের দিকে যেই ব্যথা থাকে, তাকে লো ব্যাকপেইন বা কোমর ব্যথা বলা হয়। মেরুদণ্ডের শেষের দিকে যে অংশ যাকে লাস্বো সেকেল রিজন বলা হয়। একে কোমর বলি, কেউ মাজা বলে, এখানে ব্যথা হয়। এই ব্যথাকে আমরা লো ব্যাকপেইন বলে থাকি।
প্রশ্ন : কোমর ব্যথা অনেক ধরনের হয়। আমরা অনেকেই দেখি এই ব্যথাটিতে ভুগছে। কোমর ব্যথার প্রধান কারণ কী?
উত্তর : প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের ৮০ ভাগ জীবনে কোনো না কোনো সময়ে কোমর ব্যথায় ভুগে থাকেন। আর প্রধান কারণের আগে বলি কী কারণ হলে কোমর ব্যথা হতো না। কারণ আমরা যদি পেছনে বাঁকা হয়ে কাজ করতাম, তাহলে কোমর ব্যথা হতো না। সামনে ঝুঁকে কাজ করলে কোমর ব্যথা হয়।
একটি কার্ভ থাকে যখন আমরা সামনে ঝুঁকে কাজ করি তখন কার্ভের উল্টো দিকে যায়। সামনে ঝুঁকে কাজ করা এবং পাশ থেকে কোনো জিনিস নেওয়া এসব কারণে ব্যথা হয়। এটা হলো অবস্থানগত কারণ।
অনেকক্ষণ যদি বসে কাজ করি। সাধারণত যে কম্পিউটার এসেছে, এখানে অনেক্ষণ বসে থেকে কাজ করতে হয়। দীর্ঘ ভ্রমণেও এই ব্যথা হতে পারে। আরেকটি বিষয়কে আমরা এড়িয়ে যাই সেটা হলো, যাঁরা মা হচ্ছেন তাঁদের প্রত্যেকেরই কোমর ব্যথা হয়। এ ছাড়া প্রবীণ বয়সে কোমর ব্যথা হয়। অস্টিওপোরোসিস হয়েছে হাড়ে- এটা থেকে কোমর ব্যথা হয়। মেয়েদের শরীরে একটা বয়সের পরে গিয়ে শারীরিক পরিবর্তন হয়, এর কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া অনেক কারণ রয়েছে। আমি প্রধান কারণগুলো বললাম।
প্রশ্ন : অবস্থান গত কারণে যে কোমর ব্যথা হয়, সেই ব্যথার ধরন কী? আর এর ব্যবস্থাপনা কীভাবে করেন?
উত্তর : ব্যথা দুই প্রকার হতে পারে। যেমন : একিউট পেইন হতে পারে বা ক্রনিক পেইন হতে পারে। আবার যদি আমরা অবস্থানগত দিক থেকে ব্যথাকে ভাবি, তাহলে লোকাল অথবা রেফার্ড। যদি লোকাল ব্যথা হয়, তাহলে সেই রকম হবে। আর দেখি রেফার্ডের ক্ষেত্রে ব্যথাটা কোথা থেকে এসেছে। যদি হাঁটুর ওপরে হয়, তবে এক প্রকার চিকিৎসা হবে। যদি শুধু কোমরে ব্যথা হয়, একরকম হবে। আর হাঁটুর নিচে হলে চিকিৎসা আরেক রকম হবে। এ ক্ষেত্রে ধারণাটা সঠিক হওয়া দরকার। সব সময়ই যে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এমআরআই পরীক্ষা করতে হবে সেটি নয়। অধিকাংশ ব্যথার শারীরিক পর্যবেক্ষণই বলে দেবে ব্যথার উৎস কোথায়। মনে রাখতে হবে সব ব্যথাই ডিস্কের সমস্যা নয়। কেননা কোমর ব্যথাকে যদি ১০০ ভাগে ভাগ করি, তবে চার ভাগ রোগ ডিস্ক সমস্যায় ভোগে। ৯৬ শতাংশ লোক ডিস্ক সমস্যায় ভোগে না। তবে আমাদের দেশে একটি ধারণা চলে এসেছে, কোমর ব্যথা মানে ডিস্কে সমস্যা। আর আশার কথা হলো, এই চার ভাগকে যদি আবার ১০০ ভাগে নিয়ে যান এক থেকে দুই ভাগ লোকের সার্জারি প্রয়োজন হয়। আর অধিকাংশ লোকেরই সার্জারি দরকার হয় না। তাহলে করজারভেটিভ চিকিৎসায় রোগ ভালো হয়ে যাচ্ছে। একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রশ্ন : এই রোগনির্ণয়ের ধারণাটি তো আসলে চিকিৎসকের ওপর বর্তায় সেখানে আপনারা কী করেন? এবং কী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন?
উত্তর : রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে আমরা দেখি মোবিলিটি বা গতিশীলতা। কোমরের এখানে যে জয়েন্ট থাকে, একে ট্রায়াডিকুলার জয়েন্ট বলা হয়। যদি গেরোতে সমস্যা থাকে, তবে এর চিকিৎসা করব। কোমরকে নড়াচড়া করালে গেরোতে সমস্যা বের হয়ে যাবে।
এ ছাড়া দেখি অন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, রেডিয়াটিং ব্যথা হচ্ছে কি না। যদি এই ব্যথা হয় তবে একটু নড়াচড়া করালে সঙ্গে সঙ্গে ব্যথাটি চলে যায়।
প্রশ্ন : ব্যথা চলে গেলে তো রোগী আবার আপনাদের কাছে আসার চিন্তা করবে না, সে ক্ষেত্রে কী বলেন?
উত্তর : তখন রোগীকে বলে দিই এখন ব্যথা যাচ্ছে তবে একটু পর আবার ব্যথা আসবে। কারণ এটাকে ঠিক করতে সময় লাগবে। আমি নিশ্চিত করি আমার চিকিৎসায় রোগটি ভালো হবে।
আরেকটি বড় বিষয় যেটা আমরা এড়িয়ে যাই পেশির অসামঞ্জস্যতা। পেশি খুব বড় জিনিস যেটাকে কেউ সাধারণত চিকিৎসার জন্য মাথায় রাখি না। পেশি যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন অনেক সমস্যা তৈরি হয়।
ব্যথা কোথাও হলে সেখানে পেশি দুর্বল হবেই। সে জন্য আমরা যা চিকিৎসা করি না কেন, পেশির চিকিৎসা করতে হবে। এ জন্য দুটো জিনিসকে দেখি, একটি হলো ব্যথা আরেকটি স্থিতিশীলতা অর্থাৎ পেশি। আপনি ব্যথা কমিয়ে দেবেন তবে পেশিকে যদি স্থিতিশীল না করেন, ওই রোগী আবার সমস্যা নিয়ে ফিরে আসবে। সেই জন্য ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন হয়। ক্রনিক ব্যথা নিয়ে এলে ফিজিওথেরাপি করতে হয়। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি ক্রনিক ব্যথায় অনেক সময় ব্যথার ওষুধ কাজে লাগে না।
আর পেশি দুর্বল হলে গেলে হয়তো লম্বা হয়, নয়তো খাটো হয়ে যায়। এই পেশিকে চাপ দিয়ে লম্বা করে না দিলে ব্যথা কখনো যাবে না।