গর্ভবতী মায়ের দাঁতের চিকিৎসায় সতর্ক থাকুন
গর্ভবতী মায়েদের সব ধরনের ওষুধ খাওয়া এবং চিকিৎসার বিষয়ে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। আজ ৯ আগস্ট এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১১৫তম পর্বে গর্ভবতী মায়ের মুখ, দাঁতের যত্ন ও তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলেছেন দেশের খ্যাতনামা বিশিষ্ট ডেন্টাল সার্জন ডা. তমিজুল আহসান রতন।
প্রশ্ন : গর্ভবতী মায়ের মুখ ও দাঁতের কিছু প্রচলিত সমস্যা হয়ে থাকে। গর্ভধারণের পর তাঁর নতুন করে সমস্যা হতে পারে। আবার আগে থেকে তাঁর কিছু সমস্যা থেকে যেতে পারে। আমরা জানি অনেকেরই অপরিকল্পিত গর্ভধারণ হয়।
আগে থেকে যদি তাঁর কোনো মুখ ও দাঁতের সমস্যা থেকে থাকে, গর্ভধারণের সময় তিনি সেগুলোর চিকিৎসা করতে পারবেন কি না। কোনগুলো পারবেন বা কোনগুলোর ক্ষেত্রে তাঁকে একটু সতর্ক হওয়া উচিত?
উত্তর : আসলে এখনকার আধুনিক যুগে সবকিছুই পরিকল্পিত হয়। তারপরও দেখা যায় অনেক কিছু পরিকল্পিত হয় না। যেহেতু পরিকল্পিত হয় না, তাই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর যাঁরা আগে থেকেই মনে করেন বাচ্চা নেবেন তাঁরা আগে থেকেই গর্ভধারণের আগে তাঁদের চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাৎ করা উচিত। যে সমস্যাগুলো আছে তাৎক্ষণিক যদি চিকিৎসা করা যায় সেটা ঠিক করা যেতে পারে। সেটা দাঁত ক্ষয় হতে পারে, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি অসুখ হতে পারে।
আর গর্ভধারণের পর যে অবস্থাগুলো হয় একে আমরা তিনটা ভাগ করি ফার্স্ট ট্রাইমিস্টার, সেকেন্ড ট্রাইমিস্টার এবং লাস্ট ট্রাইমিস্টার। প্রথম এবং শেষের ট্রাইমিস্টার একটু ঝুঁকিপূর্ণ। ইচ্ছা করলেই যেকোনো চিকিৎসা করা যায় না।
মধ্যম ট্রাইমিস্টারটি নিরাপদ, তবে ইচ্ছা করলেই সার্জারিতে যাওয়া যায় না। আমাদের শরীরের যখন পরিবর্তন আসে সেগুলোর কারণে মুখের মধ্যে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা যায়, হরমোনাল পরিবর্তন আসে।
প্রশ্ন : কী পরিবর্তন আসে?
উত্তর : বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাড়ি ফুলে যায়। তারপর দেখা যায় কোনো কোনো মাড়ির জায়গায় টিউমারের মতো বৃদ্ধি দেখা যায়। মাড়ির রক্তক্ষরণ বাড়তে পারে। সেগুলো সাধারণত দেখা যায়। ওই ক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
কারণ এটা গর্ভধারণের সময়ই হয়। আর যদি সমস্যা মনে হয় ডেন্টাল সার্জনের কাছে যাবেন এবং পরামর্শ নেবেন এই মুহূর্তে তাঁর কী করণীয় আছে সেটা করবেন। ডেন্টাল সার্জন তাঁকে বলে দেবেন কীভাবে তিনি নিয়ম মেনে চলবেন।
প্রশ্ন : দাঁত এবং মাড়ি পরিষ্কারের জন্য আল্ট্রাসাউন্ড স্কেলারের ব্যবহার ডেনটিস্টরা করে থাকেন। এর ভাইব্রেশন গর্ভজাতক সন্তানের জন্য কি ক্ষতিকর?
উত্তর : খুবই মারাত্মক। আমাদের মধ্যে অনেকেরই এটা জানা নাই। স্কেলিংয়ের জন্য একটি হলো এয়ার স্কেলার। আরেকটি আরল্ট্রাসোনিক স্কেলার। আল্ট্রসোনিক স্কেলারটা গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর। এয়ার স্কেলার যেটা সেটা ক্ষতিকর না। সেটা দিয়ে করা যায়। সেটা তাঁর সমস্যা হয় না।
প্রশ্ন : প্রয়োজনে হ্যান্ডস্কেলিং করা যেতে পারে ... ...
উত্তর : এটা অনেক ভালো। যদি তাঁর এ রকম সমস্যা হয় তাহলে ডেন্টাল সার্জন তাঁকে ম্যানুয়াল স্কেলিং করে দেবেন। তাহলে তাঁর ঝুঁকি সবচেয়ে কম থাকে।
প্রশ্ন : একজন গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসার বিষয়ে তো কিছু জটিলতা আছে। এর থেকে বড় চিন্তার বিষয় হলো ওষুধ খাওয়া। গর্ভবতী অবস্থায় যেন তাঁর মুখ ও দাঁতের কোনো সমস্যা না হয় সে ক্ষেত্রে কী যত্ন নিতে হবে?
উত্তর : সাধারণত তাঁর ক্ষেত্রে দেখা যায় পেস্ট ব্যবহার করে তখনো বমি আসে যখন না ব্যবহার করে তখনো বমি আসে। আমরা রোগীদের পরামর্শ দেই যেকোনো মাউথওয়াশ দুই ফোঁটা ব্রাশে নিয়ে সেটা দিয়ে ব্রাশ করবেন। এটা পেস্ট, মাউথওয়াশ এবং অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করবে। কারণ পেস্ট ব্যবহারের কারণে যে বমি হওয়ার আশঙ্কা সেটা থাকবে না। আর ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে কোনো ব্যথানাশক ওষুধ যেন তিনি না খান।
ব্যথানাশক ওষুধ খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। অনেক ব্যথানাশক ওষুধ রয়েছে বাচ্চার বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে। কিছু ব্যথানাশক ওষুধের কারণে গর্ভপাত হয়ে যায়। কিংবা অন্য আরো সমস্যা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় যেকোনো ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া ঠিক নয়।
প্রশ্ন : সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্যারাসিটামল কি খাওয়া যাবে?
উত্তর : এই ধরনের ওষুধও না খেতে পারলে ভালো। মাথা ব্যথা হলে একটু বিশ্রাম নিতে পারেন। চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে পারেন।
প্রশ্ন : অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চার দাঁতের রঙের কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। অনেকে বলে থাকেন গর্ভাবস্থায় আপনি কোনো ওষুধ খেয়েছিলেন কি না। বিষয়টি আসলে কী?
উত্তর : হ্যা মারাত্মক ক্ষতি করে। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে, টেট্রাসাইক্লিং জাতীয় ওষুধ –যেটা আগে প্রচুর পরিমাণে রোগীদের খাওয়ানো হতো। এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই ওষুধগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়। যাঁরা জানেন তাঁরা তো দেনই না।
প্রশ্ন : এক ধরনের টিউমার হয় যে মাড়িতে, গর্ভধারণের সময় সেটা কী সার্জারি করতে হয়। কোন অবস্থায় গেলে চিকিৎসা নিতে হয়?
উত্তর : এটার সার্জারির কোনো প্রয়োজন নাই। গর্ভাবস্থায় সেটা হয়। গর্ভাবস্থা চলে গেলে সেটাও চলে যায়। খুব বেশি সমস্যা হলে ডেন্টাল সার্জনের কাছে যেতে হবে। তবে ওই জায়গাটায় একটুতেই রক্তপাত হয়। তাই সাবধানে ব্রাশ করতে হবে। ডেন্টাল সার্জন ম্যানুয়ালি এটা একটু ঠিক করে দিতে পারেন। এতে দেখা হয় টিউমারের বৃদ্ধিটা একটু কমে আসে। ওই সময় মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন এবং নিরাপদ অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যেতে পারে। এখন অনেক নিরাপদ অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যায় গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য।
প্রশ্ন : যে সন্তান আসছে তার দাঁত ভালো হওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় পুষ্টির একটি বিষয় রয়েছে আমরা জানি। এ বিষয়ে আপনার মত কী? এ সময় মায়েরা কী খাবেন?
উত্তর : আসলে শরীরের গঠন তো হয় হাঁড়ের মাধ্যমে। আর হাঁড়কে শক্ত করার জন্য একমাত্র ওষুধ হলো ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার যত খাওয়া যায় ততই মায়ের জন্য ভালো এবং ভিটামিন ডি ও বেশ উপকারি। এ জাতীয় খাবার খেতে হবে। তাহলে দাঁত মজবুত হবে। সুন্দর হবে, শক্ত হবে।
প্রশ্ন : দাঁতের সমস্যা থাকলে অনেকেই ভাবে প্রসব হওয়ার পর চিকিৎসা করাবেন। ডেলিভারির কতদিন পর চিকিৎসা করাবেন ? এবং সেই ক্ষেত্রেও একটা ভীতি কাজ করে তাঁর বাচ্চার কোনো ক্ষতি হবে কি না, বাচ্চা যে মাতৃদুগ্ধ পান করে সেটার কোনো ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর : কারণ এই ধারণাটা আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। বাচ্চা হওয়ার পর মা বা থেকে সবারই মুখের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। না হলে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। যারা স্তন পান করে, ওষুধগুলো যেন একটি সময়ের পর খান এবং গাইনোকোলোজিস্টের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। অনেক ওষুধ রয়েছে যে বাচ্চা হওয়ার পরও যদি সে মায়ের দুধ খায় তবে প্রভাবিত হবে। সুতরাং কোনো ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না।