কোরবানির পর বর্জ্য পরিষ্কারে সচেতনতা
ঈদ সমাগত। নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। শহরে, বাজারে বসছে পশুর হাট। সবখানে উৎসবের আমেজ। লাখ লাখ পশু কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সচেষ্ট ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে কোরবানির পর বর্জ্য নিয়ে আমরা চিন্তা করি না। বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলে রাখি। ফলে দেখা দেয় নানা সমস্যা।
কোরবানির হাটগুলোতেও থাকে অপরিচ্ছন্নতা। যেখানে-সেখানে পশুর মলমূত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। অনেকে মনে করেন, পশুর মল খুব ক্ষতিকর নয়। এটা ভুল ধারণা। পশুর মলে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু থাকতে পারে। এগুলো থেকে হতে পারে পেটের পীড়া। তাই বাজারে গেলে সচেতন হবেন। পশু হাতে ধরার পর হাত না ধুয়েই অনেকে খাবার খান। এতে করে দেখা দিতে পারে পেটের পীড়া।
অসুস্থ পশু কিনবেন না। পশু কেনার সময় অসুস্থ কি না, তা নিশ্চিত হয়ে কিনুন। গবাদিপশু জ্বরে আক্রান্ত হলে, প্রাণী কাঁপতে থাকলে, ঘন ঘন শ্বাস নিলে, পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে গেলে, পশু হঠাৎ করে মারাও যেতে পারে। মারা যাওয়ার পর প্রাণীর নাক, মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে কালচে রক্ত বের হয়ে আসে। এমন পশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত বলে মনে করা হয়। এমন অসুস্থ গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ি ইত্যাদির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। তাই যাঁরা পশু জবাই, কাটা-বাছা, ধোয়া, রান্নার কাজে জড়িত, তারাই বেশি আক্রান্ত হন। তাই সাবধান হোন।
পশু জবাইয়ের সময়ও সচেতন হতে হবে। আমাদের দেশে পশু জবাইয়ের নির্দিষ্ট স্থান নেই। তাই শহরে রাস্তার পাশে আর গ্রামে পুকুরের পাশে চলে পশু জবাইয়ের কাজ। পশু জবাইয়ের স্থান হতে হবে পরিষ্কার ও শুষ্ক। পশু জবাইয়ের আগে অনেকেই জবাইয়ের স্থানে পাউডার ছিটিয়ে দেন, এটা ভালোর চেয়ে খারাপ হতে পারে। পশু জবাইয়ের স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হলে মাটিতে বসবাসকারী জীবাণু সহজেই মিশে যেতে পারে জবাই করা পশুর সঙ্গে। এটি চলে যেতে পারে আপনার পেটে। তা থেকে হতে পারে রোগবালাই। গবাদিপশুর মলের সঙ্গে ই. কোলাই, সালমোনেলা ও ক্যামপাইলোব্যাকটার নামক জীবাণু থাকে। তাই মল যদি মাংসের সঙ্গে মিশে যায়, তাহলে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া, টাইফয়েড ও অমাশয়ের মতো রোগবালাই। সাবধানে মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করুন।
গ্রামে পুকুরের পাড়ে জবাইয়ের কাজ করা হয়। ফলে রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য মিশে পানির সঙ্গে। এটা ঠিক নয়। আবার পুকুরের পানিতে চলে নাড়িভুঁড়ি পরিষ্কারের কাজ। এতে একদিকে পুকুরের পানির জীবাণু যেমন নাড়িভুঁড়িতে মিশে রোগ হতে পারে, তেমনি পুকুরের পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। নাড়িভুঁড়ি যদি খেতেই চান, তাহলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে খান। আর ময়লা একটি গর্ত করে পুঁতে ফেলুন। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কঠিন হলেও গ্রামে তা সহজ। একটি বড় ধরনের গর্ত করে তাতে সবাই মিলে ময়লা ফেলে এর ওপর ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দিয়ে মাটিচাপা দিন।
শহরে ড্রেনের আশপাশে পশু জবাই করুন। এতে ড্রেনেজ সিস্টেম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে দুর্গন্ধ ছড়াতে সময় লাগবে না। পরিষ্কার জায়গায় জবাইয়ের পর ময়লা একত্রে করে তার ওপর ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দিন। এবার সব ময়লা একটি ব্যাগে ভরুন। ময়লার ব্যাগ যদি সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে আসেন, খুব ক্ষতি হবে কি? এতে করে আপনার বাসার আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে, দুর্গন্ধ ছড়াবে না। যদি বাসার আশপাশে ময়লা থাকে, তাহলে মশা-মাছি বেশি দেখা দেবে। সেই মশা-মাছির মাধ্যমে রোগাক্রান্ত হবেন আপনিই। একটু সচেতন হলেই আমরা শহরেও পরিচ্ছন্নভাবে পশু জবাইয়ের কাজ করতে পারি। কোরবানি করছেন আল্লাহকে খুশি করার জন্যই, ময়লা যেখানে-সেখানে ফেলে অন্যদের কষ্ট দেওয়া কি ঠিক হবে?
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ