ক্যানসারের রোগীরা কী খাবেন, কী খাবেন না
ক্যানসারকে মারণব্যাধি বলা হলেও এখন এর চিকিৎসা হচ্ছে। চিকিৎসার পাশাপাশি খাবারের ওপর একজন রোগীর সুস্থতা নির্ভর করে। ক্যানসার রোগীরা কী খাবেন আর কী খাবেন না, সেটা জানা জরুরি।
এনটিভির নিয়মিত এক স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ রুবাইয়া পারভীন রীতি। তিনি বলেন, ক্যানসারের যখন ট্রিটমেন্ট করা হয়, বিশেষ করে কেমোথেরাপির সময়, তখন শরীরে বেশি করে মেডিসিন দেওয়া হয়। তখন বিভিন্ন প্রকারের সাইড ইফেক্ট হয়, যেমন—চুল পড়ে যাওয়া, চোখের নিচে কালো দাগ, খাবারে অরুচি ইত্যাদি। ক্যানসার ট্রিটমেন্টে সাধারণত পেশেন্টকে নরম ভাত খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। কারণ, কেমোথেরাপির সময় হজমে সমস্যা হয়। দ্বিতীয়ত, যে খাবারগুলো দিতে হবে, নরম ভাতের সঙ্গে ঠাণ্ডা তরকারি দিতে হবে। ঠাণ্ডা তরকারি বলতে তেল-মসলা কম দিয়ে খাবারটা দিতে হবে।
রুবাইয়া পারভীন বলেন, ক্যানসারের রোগীকে সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল বেশি করে খাওয়াতে হবে। কারণ, এ সময় শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তখন দেখা যাচ্ছে ভিটামিনস, মিনারেলস, আয়রন, হিমোগ্লোবিন—এগুলোর অভাব দেখা যায়। হিমোগ্লোবিন যখনই কমে যাবে, তখন তাকে বিট রুটের শরবত দেওয়া যেতে পারে। কারণ, বিট রুটে প্রচুর হিমোগ্লোবিন থাকে। বিট রুটের সঙ্গে যদি সেলোরি এবং রেডিশটা মিক্স করে দেওয়া যায় জুস হিসেবে, তাহলে কিন্তু ক্যানসারের রোগী অনেক বেশি পুষ্টি পাবে। ক্যানসার-রোগীর জন্য আনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আনারে প্রচুর হিমোগ্লোবিন থাকে। যদি ক্যানসার পেশেন্ট সব খাবার হজম করতে পারে, তাহলে তাকে যখন শাক খাওয়ানো হবে, বিশেষ করে কচুশাক, লালশাক, ডাটাশাক; অবশ্যই ওটার সঙ্গে লেবুর রসটা মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। কারণ, ভিটামিন সি সাধারণত আয়রন অ্যাবজর্বসনে সহায়তা করে। যদি আপনি শুধু শাক খাওয়ান ভাতের সঙ্গে, তাহলে কিন্তু প্রোপার হিমোগ্লোবিনটা শরীরে অ্যাবজর্ব করবে না। প্রতিদিন একটি করে রসুন খাওয়ানো যেতে পারে। ক্যানসার রোগীর জন্য রসুন খুব ভালো। কারণ, রসুন একপ্রকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটা শরীরের বিভিন্ন টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। কেমোথেরাপির সময় বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে।
রীতি বলেন, ভালো হজমের জন্য ক্যানসার রোগীকে স্যুপ দেওয়া যেতে পারে। টমেটো স্যুপ অনেক ভালো। টমেটো স্যুপে যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, তা ক্যানসার প্রিভেন্ট করতে সাহায্য করে।
পুষ্টিবিদ রুবাইয়া পারভীনের পরামর্শ, রিফাইনড সুগার, রিফাইনড আটা ক্যানসার পেশেন্টকে দেওয়া যাবে না। কারণ, রিফাইনড যে আটা থাকে, সেটাতে সাধারণত কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিক্স করা থাকে আটাকে বেশি করে সাদা বানানোর জন্য। এটা ক্যানসারের জন্য খুবই ক্ষতিকর। চাষ করা মাছ ক্যানসারের রোগীর জন্য খুব ক্ষতিকর। কারণ, চাষ করা মাছে সাধারণত যে প্যারাসাইটগুলো থাকে, প্যারাসাইটগুলো ধ্বংস করার জন্য কীটনাশক দেওয়া হয়, যেটা আমাদের সবার শরীরের জন্যই ক্ষতিকর। ভাজা খাবার, বাইরের জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত মসলাদার খাবার ক্যানসারের রোগীকে একদম দেওয়া যাবে না। চর্বিযুক্ত খাবার দেওয়া যাবে না। গরুর মাংস এড়িয়ে চলতে হবে। পোল্ট্রি মুরগি ক্যানসার পেশেন্টদের জন্য খুবই খারাপ। এ জন্য দেশি মুরগি দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। দেশি মুরগির স্যুপ দিতে হবে ক্যানসারের রোগীকে। কৃত্রিম কোনো খাবার দেওয়া যাবে না।