ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের লক্ষণ ও দূরে রাখার উপায়
আমরা সবাই জানি, ব্ল্যাক ফ্যাঙ্গাস সংক্রমণের বিষয়টি সামনে এসেছে মূলত ভারতে করোনা রোগীরা এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই। কারণ, করোনা রোগী বৃদ্ধির ফলে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে। তার মানে হচ্ছে, আগেও এ রোগটি হতো। তবে সংখ্যায় ছিল কম। ফলে এ নিয়ে কোনো আলোচনাই হতো না। এখন করোনার এ আপৎকালীন সময়ে এ রোগের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ফলে সবাই এটা নিয়ে নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এই হচ্ছে বাস্তবতা। তাই আসুন এ সম্পর্কে জেনে নিই এর সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার স্বার্থেই।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?
এটা মূলত এক ধরনের ছত্রাক। বায়ু, মাটি, পানি সব জায়গায় এটি আছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এটি আমাদের শরীরে ঢুকছেও। কিন্তু আমরা আক্রান্ত হচ্ছি না। কারণ, আমাদের শরীর তার স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েই এটিকে নির্মূল করে দিচ্ছে। কিন্তু যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং একই সাথে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে তখন স্বাভাবিক এ ছত্রাকই মারণঘাতী হয়ে উঠছে। শরীরের সব অঙ্গে তখন এটি ছড়িয়ে পড়ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় রোগটির নাম মিউকরমায়কোসিস।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের লক্ষণ
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের লক্ষণগুলো হচ্ছে :
১) নাক কালো হয়ে যাওয়া
২) নাক থেকে রক্ত বা রক্তের মতো পদার্থ আসা
৩) চোখ লাল হওয়া, দেখতে না পাওয়া
৪) চোখের পাতা ঝুলে পড়া
৫) মুখ ও গালে ব্যথা
৬) মুখ ও গাল অবশ হয়ে যাওয়া
সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণকে দায়ী করা হচ্ছে। কারণগুলোকে হচ্ছে : (১) শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া (২) করোনা রোগীর সুস্থতায় স্টেরয়েড ব্যবহার (৩) ডায়াবেটিস।
সংক্রমণ দূরে রাখার উপায়
তাহলে সংক্রমণ দূরে রাখার উপায় কী? উপায় হচ্ছে :
(১) ডায়াবেটিস ও ক্যানসারে যাঁরা ভুগছেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাঁদের দুর্বল, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা স্টেরয়েড খাচ্ছেন, কেমোথেরাপি পাচ্ছেন, তাঁদের যেন করোনা সংক্রমণ না হয়, প্রথমত সেদিকেই পরিবারের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। এসব রোগী পারতপক্ষে একদমই বাড়ির বাইরে বের হবেন না। বাসায় আগত মেহমানদের কাছ থেকে দূরে থাকবেন। পরিবারের সদস্য, যাঁরা নিয়মিত বাইরে বের হচ্ছেন, তাঁরাও এসব রোগীদের রুমে মাস্ক পরে যাবেন। না হলে দূরে থেকে কথা বলবেন।
(২) এসব রোগীর থাকার ঘর ভালো করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
(৩) ডায়াবেটিস রোগীরা অবশ্যই সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি ঘরে থেকেই প্রতিদিন একটু একটু করে শারীরিক ব্যায়াম করুন। তাতে সুগার অধিক নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
(৪) কিডনি ও লিভারের রোগে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরাও সাবধানে থাকবেন। করোনা সংক্রমণ এড়িয়ে চলুন।
(৫) করোনা সংক্রমণ পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনে নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে।
আতঙ্ক নয়, সচেতন থাকুন
অহেতুক আতঙ্ক নয়। বরং আসুন সবাই সতর্ক থাকি। করোনা সংক্রমণ রুখে দিতে অবশ্যই অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনাকে দূরে রাখতে পারলে আশা করি আমরা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকেও দূরে থাকতে পারব। তাই আসুন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে ভীত না হয়ে সম্মিলিত ভাবে বরং করোনাকেই রুখে দিই।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ, সাভার