আনচেলত্তির ওপর কতটা আস্থা রাখা যায়?

ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপার স্বপ্ন নিয়ে কার্লো আনচেলত্তিকে ডাগআউটে এনেছে ব্রাজিল। তবে যে আশায় তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার সূচনা তেমনভাবে উজ্জ্বল হয়নি। আনচেলত্তির অধীনে ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচেই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ইকুয়েডরের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে দলটি।
শুক্রবার (৬ জুন) সকালে মাঠে নেমেছিল ব্রাজিল। ডাগআউটে আনচেলত্তিকে দেখে সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন মেলেনি। খেলাজুড়ে বেশিরভাগ সময় ইকুয়েডরই ম্যাচে আধিপত্য দেখিয়েছে। ব্রাজিলের আক্রমণভাগ ছিল নিষ্প্রভ, ফিনিশিংয়েও ছিল ঘাটতি। বল দখল, শট নেওয়া—সব দিক থেকেই পিছিয়ে ছিল আনচেলত্তির দল। যদি ইকুয়েডরের ফিনিশিং একটু ভালো হতো, তাহলে হয়তো ঘরের মাঠ থেকে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই ফিরতে পারত তারা।
আনচেলত্তির বর্তমান লক্ষ্য ব্রাজিলকে ২০২৬ বিশ্বকাপের মূল পর্বে পৌঁছে দেওয়া। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বের পয়েন্ট টেবিলে এখন ইকুয়েডরের পয়েন্ট ১৫ ম্যাচে ২৪, আর ব্রাজিলের ২২। এই অঞ্চল থেকে এবার সরাসরি ছয়টি দল বিশ্বকাপে খেলবে, আর সপ্তম দলকে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফ খেলতে হবে। ইতোমধ্যে শীর্ষে থেকে বিশ্বকাপে খেলার টিকিট নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা।
কার্লো আনচেলত্তির কোচিং ক্যারিয়ার গৌরবময় সাফল্যে ভরা। ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে তিনি অন্যতম সফল কোচ। রিয়াল মাদ্রিদের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কোচ বলা হয় তাকে। দুই দফায় স্প্যানিশ ক্লাবটির হয়ে জিতেছেন ১৫টি ট্রফি। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের পাঁচটি ক্লাব—এসি মিলান (সিরি আ), চেলসি (ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ), প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (লিগ আঁ), রিয়াল মাদ্রিদ (লা লিগা), বায়ার্ন মিউনিখ (বুন্দেসলিগা)—সবখানেই জিতেছেন লিগ শিরোপা।
তার কোচিং ক্যারিয়ারে আছে ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা—মিলানের হয়ে ২টি এবং রিয়ালের হয়ে ৩টি। এমনকি খেলোয়াড় হিসেবেও ইউরোপিয়ান কাপ (বর্তমানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জিতেছেন ২ বার এসি মিলানের হয়ে।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে আনচেলত্তির এই প্রথম প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন ইতালির সহকারী কোচ, যেখানে ফাইনালে টাইব্রেকারে ব্রাজিলের কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করে ইতালি। উল্লেখযোগ্যভাবে, তার খেলোয়াড়ি জীবনের শেষ ম্যাচটিও ছিল ব্রাজিলের বিপক্ষে, মিলানের জার্সিতে একটি প্রীতি ম্যাচে।
এইবার সেই ব্রাজিলকেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করার মিশনে নেমেছেন আনচেলত্তি। প্রথা ভেঙে ব্রাজিলিয়ান কোচ না এনে একজন ইতালিয়ানকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া একটি বড় সিদ্ধান্ত, তবে আনচেলত্তির ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা তাকে অনেকখানি এগিয়ে রাখবে।
সিবিএফ-এর দেওয়া দায়িত্ব পাওয়ার পর টিভি গ্লোবো নেটওয়ার্কের ‘জর্নাল ন্যাসিওনাল’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আনচেলত্তি জানান, তিনি ইতোমধ্যে ৩৪ জন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারকে কোচিং করিয়েছেন। দুইবারের বিশ্বকাপজয়ী রোনালদো নাজারিও যখন এসি মিলানে খেলতেন, তখন তার কোচ ছিলেন আনচেলত্তি। তিনি রোনালদোকে সবচেয়ে প্রতিভাবান ফুটবলার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কাফুকে মনে করেন সবচেয়ে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে।
আনচেলত্তির ক্লাব সাফল্যের ধারাবাহিকতা যদি জাতীয় দলেও ফুটে ওঠে, তবে ব্রাজিল সমর্থকদের ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।