ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে স্বস্তির জয় বাংলাদেশের

প্রয়োজন ছিল একটি জয়। সমালোচনায় জর্জর বাংলাদেশ দলকে কক্ষপথে ফেরাতে জয়ের বিকল্প ছিল না। ক্রিকেটাররাও যেন হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন সোনার হরিণ হয়ে ওঠা জয়কে। পাওয়া হলো অবশেষে। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে আজ শনিবার (১৮ অক্টোবর) ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। ৪৯.৪ ওভারে অলআউট হয় ২০৭ রানে। জবাবে ৩৯ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় ১৩৩ রানে।
রান তাড়ায় শুরুতে জেঁজে বসে ক্যারিবীয়রা। নিজস্ব স্টাইলে দ্রুতগতিতে রান তোলে। দুই ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং ও অ্যালিক আথানাজের ঝড় থামান রিশাদ হোসেন। ৩৬ বলে ২৭ করে রিশাদের ঘূর্ণিতে লেগবিফোর হন অ্যালিক। খানিক বাদে আবার দৃশ্যপটে রিশাদ।
৯ রান করা কিচি কার্টিকে সাইফ হাসানের ক্যাচ বানান। । ৭৯ থেকে ৯২– ১৩ রানের মধ্যে হারিয়েছে চার উইকেট। ক্রমান্বয়ে রিশাদের শিকার হন ব্র্যান্ডন কিং, শিরফানে রাদারফোর্ড ও গুরাকেশ মোতি। ততক্ষণে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। রিশাদ তুলে নেন ফাইফার।
রিশাদের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বাকি কাজ সারেন মিরাজ-মুস্তাফিজরা। ৫ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ফিজ তুলে নেন দুই উইকেট। একটি করে উইকেট পান তানভীর ইসলাম ও অধিনায়ক মিরাজ। ১০ ওভারে তিন মেডেনসহ মাত্র ১৬ রান দেন মিরাজ।
রিশাদ করেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো ফাইফার পাওয়া রিশাদে নেন ক্যারিবীয়দের শেষ উইকেটও। ৯ ওভারে কোনো মেডেন না পেলেও ৩৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে জয়ের নায়ক তিনিই।
ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দল ছন্দে না থাকলেও হেসেছিল সাইফ হাসানের ব্যাট। শেরেবাংলায় তার কাছে প্রত্যাশা ছিল বেশি। ঘরের মাঠে সেটি পূরণ করতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয় ওভারেই বিলিয়েছেন উইকেট। দলের যখন ৮ রান, সাইফ ফেরেন ৬ বলে ৩ রান করে। তাকে লেগবিফোরের ফাঁদে ফেলেন রোমারিও শেফার্ড। পরের ওভারে স্ট্রাইকে এসে বিদায়ের রাগ বাজান সৌম্য সরকার। ৬ বলে ৪ রান করে জেইডেন সিলসের বলে রোস্টন চেজের হাতে ক্যাচ তুলে দেন।
আট রানে দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ চাপে পড়ে। তৃতীয় উইকেটে পরিস্থিতি সামাল দেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। জুটিতে আসে ৭১ রান। খ্যারি পিয়েরের গুড লেন্থের বলে লেগবিফোর হন শান্ত। তিনটি চারে ৬৩ বলে ৩২ রানের মন্থর ঞইনিংসে খেলেন শান্ত। চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে সাজঘরে ফেরার আগে হৃদয় তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের ১১তম ফিফটি। ইনিংসটি নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন থেকে যায়। মারকাটারি ব্যাটিংয়ের এই সময়ে ৮৭ বলে অর্ধশতক করেন তিনি। জাস্টিন গ্রিভসের বলে উইকেটের পেছনে শাই হোপের ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে তিনটি চারে হৃদয় করেন ৯০ বলে ৫১।
ফিফটির কাছাকাছি গিয়েছিলেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। ওয়ানডে অভিষেকে খেলেন তিনটি চারে ৭৬ বলে ৪৬ রানের ইনিংস। ফিফটির সম্ভাবনা শেষ হয় চেজের বলে লেগবিফোর হয়ে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মিরাজকেও ফেরান চেজ। গ্রিভসের তালবুন্দি হওয়া মিরাজ দুই চারে ২৭ বলে ১৭ রান যোগ করেন নামের পাশে।
কালো পিচে ব্যাটিং করাটা দুরূহ হয়ে ওঠে বাংলাদেশের জন্যেও। রান পেতে ব্যাটারদের সংগ্রাম চোখে পড়েছে। রানরেট বাড়াতে লোয়ার অর্ডার চেষ্টা করেছে। গ্রিভসকে লং অনে মারতে গিয়ে পিয়েরের হাতে ধরা পড়েন ১০ বলে ৯ করা নুরুল হাসান সোহান। বাংলাদেশের রান ২০০ পার হওয়া নিয়ে তৈরি হয় সংশয়।
রিশাদ হোসেনের কল্যাণে শঙ্কা দূর হয়। যে তিনটি ছক্কা মেরেছে বাংলাদেশ, দুটিই এসেছে রিশাদের ব্যাট থেকে। সিলসের বলে বোল্ড হওয়ার আগে একটি চার ও দুই ছক্কায় ১৩ বলে ২৬ রানের ক্যামিও উপহার দেন রিশাদ। এক ছক্কায় তানভীর ইসলাম অপরাজিত থাকেন ৪ বলে ৯ রানে। তাতে স্বাগতিকরা পায় ২০০ ছাড়ানো সংগ্রহ। ২ বলে ১ রান করে রানআউট হন মুস্তাফিজুর রহমান।
উইন্ডিজদের পক্ষে তিন উইকেট নেন সিলস। দুটি করে উইকেট শিকার করেন চেজ ও গ্রিভস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৪৯.৪ ওভারে ২০৭/১০ (সাইফ ৩, সৌম্য ৪, শান্ত ৩২, হৃদয় ৫১, মাহিদুল ৪৬, মিরাজ ১৭, সোহান ৯, রিশাদ ২৬, তাসকিন ০, মুস্তাফিজ ১, তানভীর ৯*; সিলস ৭-০-৪৮-৩, শেফার্ড ৭.৪-১-৩১-১, পিয়েরে ১০-২-১৯-১, চেজ ১০-০-৩০-২, মটি ১০-০-৪৪-০, গ্রেভস ৫-০-৩২-২)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩৯ ওভারে ১৩৩/১০ (কিং ৪৪, আথানেজ ২৭, কার্টি ৯, হোপ ১৫, রাদারফোর্ড ০, চেজ ৬, মটি ৩, গ্রেভস ১২, শেফার্ড ১, সিলস ৩, পিয়েরে ৭*; তাসকিন ২-১-১০-০, তানভীর ১০-১-৪৬-১, মুস্তাফিজ ৫-০-১৬-২, মিরাজ ১০-৩-১৬-১, রিশাদ ৯-০-৩৫-৬, সাইফ ৩-০-৭-০)
ফলাফল : বাংলাদেশ ৭৪ রানে জয়ী।