জার্মানিতে জাহাজ তোলার লিফট

জার্মানির বার্লিন থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে এমন একটি লিফট আছে। যেটি দিয়ে জাহাজকে ৩৬ মিটার উঁচুতে তোলা হয়। নাম নিডাফিনো জাহাজ লিফট। এই লিফটের কাজ করার পদ্ধতি খুব সহজ, এটি দামেও সস্তা৷ জাহাজ একটি বেসিনে ঢোকার পর খোলা প্রান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর ১০ মিনিটে উপরে তোলা হয়। এরপর পার্টিশন প্রাচীর নামিয়ে জাহাজকে বের হতে দেওয়া হয়। এর জন্য মাত্র কয়েক কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়।
বার্লিন ওয়াটারওয়েস কনস্ট্রাকশন অফিস রলফ ডিটরিশ বলেন, ‘‘বিষয়টা খুব সহজ। কোনো কিছু উপরে তোলার যে কাউন্টারওয়েট পদ্ধতি আছে, সেটা এখানে কাজে লাগানো হয়েছে। কাউন্টারওয়েট দিয়ে প্রায় ১০ হাজার টন ওজনের বেসিনের ভারসাম্য আনা হয়েছে, যেন বেসিনকে গতিশীল করতে বা থামাতে আসলে খুব কম শক্তির প্রয়োজন হয়।''
এই জাহাজ লিফট তৈরিতে অনেক খরচ হয়েছে- ৫২০ মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু এত অর্থ ব্যয়ে এই লিফট বানানোর প্রয়োজন হলো কেন?
নিডাফিনো জাহাজ লিফটের পর্যটন বিভাগের কর্মী ইয়ান ম্যোনিক্স বলেন, ‘‘আমাকে এখানে ৩৬ মিটার উঁচুতে ওঠাতে হয়। ৪০০ বছর আগে পুরনো ফিনো ক্যানালে এই কাজ করতে ১৭টি লকের সহায়তা নেওয়া হতো। তাই তখন অনেক সময় লাগতো।''
সে কারণে ৯০ বছর আগে এই জাহাজ লিফট তৈরি করা হয়। বর্তমানে নতুন যে লিফটি আছে তার পাশেই এর অবস্থান। সেই সময় এটা এমন প্রথম লিফট ছিল। তখন দ্রুত এই কাজ করার প্রয়োজন ছিল, কারণ, পূর্ব জার্মানিতে এটিই একমাত্র জলপথ ছিল, যেটি দিয়ে সমুদ্রে ঢোকা যেত।
ম্যোনিক্স বলেন, ‘‘লিফটটি তৈরির সময় স্থিতিশীলতা, উপাদান ও স্থায়ীত্বের বিষয় মাথায় রাখা হয়েছিল। ভবিষ্যতের কথাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। আশঙ্কা ছিল যে, নির্মাণের সময় ভুল হতে পারে। তাই নির্মাতারা সেই সময়কার জার্মানিতে পাওয়া যাওয়া সেরা ইস্পাত ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করেছিলেন। ১৯২৭ থেকে ১৯৩৪ পর্যন্ত নির্মাণকাজ চলেছে। লিফটটি এখনও ব্যবহার হচ্ছে।''
বিশ্বের অন্যান্য জাহাজ লিফটটের জন্য এটি একটি মডেল। যেমন চীনের থ্রি গর্জেস ড্যাম ও কিংবা স্কটল্যান্ডে অবস্থিত বিশ্বের একমাত্র ঘূর্ণায়মান লিফট, যেটি পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
জাহাজ লিফট ব্যবহারের জন্য কোনো পয়সা দিতে হয় না। কারণ, লক্ষ্য হচ্ছে, পানিপথে আরও বেশিসংখ্যক মালামাল ও কাঁচামাল পরিবহণ উৎসাহিত করা। এই জাহাজ লিফটের বছরে ৪০ লাখ টন মাল পরিবহণের ক্ষমতা আছে, কিন্তু বর্তমানে এটি দিয়ে মাত্র ১০ লাখ টন পরিবহণ করা হচ্ছে।
সাইট ম্যানেজার ক্লাউস ভিন্টার বলেন, ‘‘প্রায় এক দশক আগে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি৷ সড়কপথে মাল পরিবহণের পরিবর্তে জলপথকে আকর্ষণীয় করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তারপরও সড়কপথই বেশি ব্যবহার করেন।''
এখন তারা প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে তৈরি হওয়া নতুন কনটেইনার জাহাজের বন্দরের দিকে তাকিয়ে আছেন। ফলে ভবিষ্যতে এই লিফট দিয়ে প্রমোদতরীর পাশাপাশি কনটেইনার জাহাজও পরিবহণ হতে দেখা যেতে পারে।