তুরস্কে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হলেন কেমাল কিলিচদারোলু। দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে আগামী মে মাসে।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারার মতো একজন জবরদস্ত প্রার্থী খুঁজছিলেন বিরোধীরা। অবশেষে তারা সেই প্রার্থী খুঁজে পেলেন। রিপাবলিকান পিপলস পর্টির নেতা কিলিচদারোলু হবেন তাদের সম্মিলিত প্রার্থী, যিনি আগামী ১৪ মে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানকে টক্কর দেবেন।

গত প্রায় ২০ বছর ধরে তুরস্কে ক্ষমতায় আছেন এরদোয়ান। তাকে কি সরাতে পারবেন কিলিচদারোলু?

কিলিচদারোলুর জন্ম ১৯৪৮ সালে। বাবা একজন সরকারি চাকুরে ছিলেন। সাত সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তিনিই পরিবারের একমাত্র সদস্য, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। আঙ্কারার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইকনমিক্স ও ফিন্যান্স নিয়ে পড়েন। তারপরই ১৯৭১ সালে  তিনি তুরস্কের অর্থ ও রাজস্ব মন্ত্রণালয়ের পরামর্শদাতা হিসেবে যোগ দেন।

১৯৯২ সালে তিনি সোশ্যাল সিকিউরিটি অথরিটির (এসএসএ) পরিচালক হন। দুই বছর পর একটি পত্রিকার বিচারে তিনি বর্ষসেরা আমলা নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি অবসর নেন। কিলিচদারোলু সৎ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত। আমলা হিসেবে যতদিন কাজ করেছেন, ততদিন দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কঠোর হাতে ব্যবস্থা নিয়েছেন।

২০০২ সালে কিলিচদারোলু সিএইচপি পার্টির প্রার্থী হয়ে পার্লামেন্ট নির্বাচনে জেতেন। একই বছরে এরদোয়ান ক্ষমতায় আসেন। ২০০৭ সালে তিনি ডেপুটি স্পিকার হন। ওই সময় তিনি তুরস্কে দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ প্রকাশ করেন। ফলে মিডিয়ায় রীতিমতো জনপ্রিয় হন তিনি।

২০১০ সালে সিএইচপি পার্টির তৎকালীন নেতার নাম যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে। কিলিচদারোলু নেতা নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৭ সালে মার্চ ফর জাস্টিসে অংশ নেন এবং ৪৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন।

দেশটির ১৩তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য লড়বেন কিলিচদারোলু। তাকে ‘তুরস্কের গান্ধী’ বা ‘গান্ধী কেমাল’ বলেও ডাকা হয়। তার স্ত্রী সেলভা বলেন, তিনি এতটাই শান্ত থাকেন—কখনো চিৎকার করেন না। নিজের যুক্তিতর্ক একেবারে শান্তভাবে দেন।

কিলিচদারোলুকে অনেকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে আঙ্কারায় তাকে পিটিয়ে মারার চেষ্টা হয়। তার এক সহকর্মী বলেন, ‘আক্রান্ত হওয়ার পর আমরা তার (কিলিচদারোলু) বাড়ি গেলাম। তিনি দরজা খুললেন। তার মুখে ও দেহে ক্ষতচিহ্ন। তিনি আমাদের বসার ঘরে নিয়ে বসালেন। বললেন, শান্ত থাকুন। এই আক্রমণ নিয়ে বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই। আমরা তার থেকে অনেক বেশি উত্তেজিত ছিলাম।’

কুর্দদের সংগঠন পিকেকে কিলিচদারোলুর ওপর সশস্ত্র হামলা করেছিল। এ ছাড়া পার্লামেন্ট আক্রমণ এবং মার্চ ফর জাস্টিসের ওপর বোমা হামলার ঘটনায়ও তিনি বেঁচে যান।

কিলিচদারোলুর এত ইতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও তুরস্কের জনগণের একটা অংশ মনে করে, তিনি এরদোয়ানের সমকক্ষ প্রার্থী নন। তার সেই ক্যারিশমা নেই।

কিলিচদারোলু ছয় বিরোধী দলের প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু তাকে প্রার্থী করা নিয়েও এই ছয় দলের মধ্যে দ্বিধা ছিল। গত এক বছর ধরে এই ছয় বিরোধী দল একজোট হয়েছে। বহুবার তারা বৈঠকে বসেছে প্রার্থী ঠিক করার জন্য। এমনকি তাকে প্রার্থী করা হলে ন্যাশনাল গুড পার্টি জোট ছেড়ে যাবে বলেও হুমকি দিয়েছিল।

তারপর অনেক আলোচনার পর বিরোধ মিটেছে। এখন কিলিচদারোলু বিরোধী প্রার্থী। এরদোয়ানকে তিনি হারাতে পারবেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।