কাবুলে মার্কিন দূতাবাস খালি করা শুরু

কয়েক দিনের মধ্যে একের পর এক আফগানিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানীগুলোসহ গুরুত্বপূর্ণ সব শহর দখলে নিয়ে রাজধানী কাবুলের দ্বারপ্রান্তে এসে পড়েছে সশস্ত্র তালেবান গোষ্ঠী। এমন পরিস্থিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কূটনীতিকদের আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে। কাবুল বিমানবন্দর ও দূতাবাসকে সুরক্ষিত করতে যুক্তরাষ্ট্র আরও সৈন্য পাঠাচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে এসব তথ্য জানানো হয়।
ক্ষিপ্রগতিতে গোটা আফগানিস্তান পুনরায় নিজেদের দখলে নিয়ে তালেবানের সশস্ত্র যোদ্ধারা এখন কাবুলের অভিমুখে। অথচ গত সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, ৯০ দিনের মধ্যে কাবুল দখলে নিতে পারে তালেবান।
আফগানিস্তানে কর্মরত একজন মার্কিন কর্মকর্তা আজ রোববার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের কর্মীদের একটি ছোট দল চলে যাচ্ছে। আর বেশির ভাগ কর্মী দূতাবাস ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। তবে, দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ হবে না।’

এর আগে তালেবান আজ রোববার বিনাযুদ্ধে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর জালালাবাদ দখল করে নেয়। এর মধ্য দিয়ে রাজধানী কাবুল ছাড়া বলতে গেলে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ শহর আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণে রইল না।
এর আগে তালেবান গতকাল শনিবার আফগানিস্তানের উত্তরের শহর মাজার-ই-শরীফ দখল করে।
সরকারি বাহিনীগুলোর এমন বিপর্যয়ের পর আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়ছে।
কাবুলে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে লড়াই নাকি আত্মসমর্পণ—এই কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি এখন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট। বিপর্যস্ত দেশটি থেকে নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে আনার সিদ্ধান্তে পক্ষে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মেটাতে অনন্তকাল ধরে কোনো দেশে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সমর্থন করা যায় না।’
জালালাবাদে কী হয়েছিল
রোববার সকালে খবর আসে, তালেবান কোনো ধরনের গোলাগুলি ছাড়াই শহরটি দখলে নেয়।
জালালাবাদ শহরের একজন আফগান কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে জালালাবাদে কোনো সংঘাত হচ্ছে না, কারণ তালেবানদের কাছে গভর্নর আত্মসমর্পণ করেছেন।’
‘বেসামরিক মানুষের জীবন বাঁচাতে, তালেবানকে পথ ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না’, যোগ করেন ওই আফগান কর্মকর্তা।
জালালাবাদ দখলে নেওয়ার অর্থ হলো তালেবান আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সংযোগকারী সড়কগুলোও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিল।
আফগানিস্তানের চতুর্থ বৃহত্তম শহর এবং বলখ প্রদেশের রাজধানী মাজার-ই-শরিফ দখল করার কয়েক ঘণ্টা পরই জালালাবাদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় তালেবান। মাজার-ই-শরিফ দখলে নিতেও কোনো সংঘাতের প্রয়োজন হয়নি তাদের।
বলখের একজন আইনপ্রণেতা আবাস ইব্রাহিমজাদা বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, জাতীয় সেনাবাহিনী প্রথমে আত্মসর্মণ করে। পরে সরকার-নিয়ন্ত্রিত বাহিনীগুলো এবং অন্য মিলিশিয়া বাহিনী হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য করে।
আফগানিস্তানের ২৪টি প্রদেশের মধ্যে ২৩টির রাজধানী এখন তালেবানের দখলে।