গাজা থেকে পালিয়েও রক্ষা পেল না ফিলিস্তিনি পরিবার
ভালো ভবিষ্যতের আশায় ১২ বছর আগে ফিলিস্তিনের গাজা থেকে তুরস্কে পালিয়ে যান আবদেল-করিম আবু জালহুম। তবে তার সেই স্বপ্ন সত্যি হতে পারেনি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এক ভূমিকম্পেই গোটা পরিবারসহ শেষ এই ফিলিস্তিনি। খবর রয়টার্সের।
সোমবারের দুই দফার ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পে জালহুমসহ তার পরিবারের সকলেই নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, তুরস্কের ভূমিকম্পে স্ত্রী ফাতিমা, চার সন্তানসহ আবু জালহুম নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও ৬৪ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তুরস্ক ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে।
আবু জালহুমের ভাই ৪৩ বছর বয়সী রামজি বলেন, ‘যুদ্ধ ও দারিদ্র্যতাকে শেষ করে একটি ভালো জীবনের প্রত্যাশায় আমার ভাই তুরস্কে গিয়েছিল। তবে ভূমিকম্পে সেখানে পরিবারসহ তিনি মারা গেছেন।’
রয়টার্স বলছে, গাজায় থাকাকালে আবু জালহুম ট্যাক্সি চালাতেন। তবে পরিবারের সদস্য বাড়ায় তিনি আর্থিক সংকটে ভুগছিলেন। ২০১০ সালে তুরস্কে যান এই ফিলিস্তিনি। তুরস্কের আনতাকিয়ার একটি কাঠের কারখানায় কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানে জালহুমের পরিস্থিতি ভালো হলে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে তুরস্কে যান ফাতিমা।
জালহুমের পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, ছয় মাস আগে চার সন্তানকে নিয়ে আনতাকিয়ার নতুন একটি অ্যাপার্টমেন্টে উঠেছিলেন এই ফিলিস্তিনি পরিবার। ভূমিকম্পের ঘণ্টাখানেক পর থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না রামজি। মঙ্গলবার ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে থাকা প্রাণহীন কয়েকটি মরদেহের ছবি দেখে পরিবারটিকে শনাক্ত করতে পেরেছে তারা।
ওই ছবিতে দেখা যায়, আবু জালহুম তাদের বাচ্চাদের আলিঙ্গন করার চেষ্টা করছেন। নিজের শরীর দিয়ে তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন, কারণ বাড়ি তাদের ওপরই ভেঙে পড়েছে।
বর্তমানে কত ফিলিস্তিনি তুরস্কে থাকেন এর প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাজা থেকে বহু পরিবার তুরস্কে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর তথ্য মতে, ভূমিকম্পের আগে চার লাখ ৩৮ হাজার ফিলিস্তিনি সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরগুলোতে থাকতেন।
রয়টার্স বলছে, পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলের জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা সীমিত। তবে এরপরেও একটি উদ্ধারকারী দলকে তুরস্কে পাঠিয়েছে তারা।
এদিকে, জালহুম পরিবারের লাশগুলো ফিলিস্তিনে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে নিহতের পরিবারের সদস্যরা। কান্না করতে করতে জালহুমের মা ওয়াদেদ বলেন, ‘১২ বছর ধরে ছেলে ও তার সন্তানদের আমি দেখিনি। শেষবারের মতো হলেও আমি তাদের দেখতে চাই।’