ট্রাম্পের অভিশংসন সাংবিধানিক, বিচারকাজে সিনেটের অনুমতি
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রক্রিয়াকে সাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়ে এর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে দেশটির কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট। সিএনএন ও বিবিসির খবরে এ কথা জানানো হয়েছে।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন, যেহেতু ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছেড়েছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি অভিশংসন বিচারের সম্মুখীন হতে পারেন না। কিন্তু সিনেট তা নাকচ করে দিয়ে বিচারকাজ এগিয়ে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।
এ নিয়ে সিনেটে ভোটাভুটি হয়েছে। তাতে ৫৬ জন সিনেটর বিচারকাজ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন। ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টিরও ছয়জন সিনেটর তাঁর বিরুদ্ধে আনা ‘রাষ্ট্রদোহিতায় উসকানি’র অভিযোগে বিচারের পক্ষে রায় দিয়েছেন। বাকি ৪৪ জন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পকে অভিশংসন করার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় না মেনে এবং ভোটে জালিয়াতির ভুয়া দাবির সমর্থনে ট্রাম্প সমর্থকরা গত ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে কংগ্রেস ভবন ইউএস ক্যাপিটলে হামলা চালায়। এ ঘটনার আগমুহূর্তে ট্রাম্প এক সভায় সমর্থকদের উদ্দেশে ব্যাপক উত্তপ্ত বক্তব্য দেন।
এদিন ইউএস ক্যাপিটলে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটগণনা ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জয় প্রত্যয়নের সভা চলছিল। ট্রাম্প সমর্থকদের দাঙ্গা হামলায় সেখানে এক পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সিনেটে বিচারের বিষয়টি উত্থাপন করেন ডেমোক্র্যাটরা। সেখানে ১০ মিনিটের একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। ভিডিওতে ইউএস ক্যাপিটলে তাণ্ডবের চিত্র এবং সেদিন সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্পের লড়াইয়ের আহ্বান জানানোর বক্তব্যও দেখানো হয়। এ সময় ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, ‘নারকীয় কায়দায় লড়াই করতে হবে।’
ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে ‘উচ্চমাত্রার অপরাধ ও অপকর্ম’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের জেমি রাসকিন সিনেটে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এটা যদি অভিশংসনযোগ্য অপরাধ না হয় তাহলে অভিশংসনযোগ্য কোনো অপরাধই থাকতে পারে না।’
বক্তব্যের একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন জেমি রাসকিন। তিনি জানান, ইউএস ক্যাপিটলে হামলার দিন সেখানে তাঁর মেয়েও দর্শক হিসেবে এসেছিল। হামলার সময় রাসকিনকে তাঁর মেয়ের থেকে আলাদা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।
উচ্চকক্ষ সিনেটের মোট ১০০ আসনের ৫০টি ডেমোক্র্যাটদের দখলে বাকি ৫০টিতে রয়েছেন রিপাবলিকানরা। মঙ্গলবারের ৫৬-৪৪ ভোটের মানে হচ্ছে, ছয়জন রিপাবলিকান ট্রাম্পের বিচারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। যদিও অভিশংসন কার্যকর করতে দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ অন্ততপক্ষে ১৭ জন রিপাবলিকান সিনেটরকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে। পারতপক্ষে অসম্ভব মনে হলেও শেষমেশ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সিনেটে রায় হলে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো আর প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা হারাবেন। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ক্ষমতা ছাড়ার পরেও অভিশংসনের মুখোমুখি হওয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট।
এর আগে ইউএস ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহে উসকানির দায়ে অভিশংসন প্রস্তাব পাস হয় নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টিভসে। পরে ডেমোক্র্যাট জেমি রাসকিনের নেতৃত্বে সিনেটে অভিশংসন বিচারের লক্ষ্যে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়।
এরই মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়ায় ক্ষমতা ছেড়েছেন ট্রাম্প। দায়িত্ব নিয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন ইতিহাসে প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টকে নিয়ে সিনেটে অভিশংসন বিচার হতে যাচ্ছে। রিপাবলিকানদের আহ্বানে দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হয় ট্রাম্পের আইনজীবীদের। মঙ্গলবার সিনেটে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর অনুমতি মিলল।