ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসনকে কূটনীতিকদের বার্তা
মার্কিন কংগ্রেস ভবনে সহিংসতার ঘটনায় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উসকানির নিন্দা জানিয়ে প্রশাসনকে দুটি বার্তা দিয়েছেন কূটনীতিকেরা। তাঁরা ট্রাম্পকে অপসারণে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগে সমর্থন দিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
তবে কতজন কূটনীতিক ওই দুই বার্তায় স্বাক্ষর করেছেন, তা জানা যায়নি। বার্তা দুটি গত সপ্তাহের শেষদিকে কূটনীতিকদের মধ্যে চালাচালি হয়েছে এবং পরে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
দুটি বার্তার একটিতে বলা হয়েছে, ‘যদি প্রেসিডেন্টকে জনগণের সামনে জবাবদিহিতার আওতায় না নিয়ে আসা যায়, তাহলে আমাদের গণতন্ত্র ও বিদেশে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
কূটনীতিকেরা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, দেশকে রক্ষায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা যদি ২৫তম সংশোধনী অথবা কোনো আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে চান, সেক্ষেত্রে মাইক পেন্স যেন তাতে সমর্থন দেন।
এই বার্তা দুটি বর্তমান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মার্কিন কূটনীতিকদের এক ভিন্নধর্মী প্রতিবাদ। এ ছাড়া ট্রাম্পের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ক্যাপিটলে সহিংসতার পর যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে অবস্থানের জানান দিয়েছে এই বার্তাগুলো।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পম্পেও ক্যাপিটলে সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছিলেন বটে, কিন্তু সহিংসতার পেছনে ট্রাম্পের যে উসকানি রয়েছে, তা তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই উল্লেখ করেননি। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে বিদেশে মার্কিন কূটনীতিকেরা গণতন্ত্রের প্রচারে যে নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন, তা নিয়েও কথা বলেননি।
পররাষ্ট্র ও সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, গত বুধবারের সহিংসতার ঘটনা বিদেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রচারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স যদি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অপসারণে উদ্যোগ না নেন, তাহলে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রস্তাব আনা হবে বলে জানিয়েছেন হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে এ কথা বলা হয়েছে।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকার পেলোসি বলেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট যদি প্রেসিডেন্টকে না সরান তাহলে হাউসে অভিশংসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। স্থানীয় সময় রোববার থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান পেলোসি। তিনি জানান, পেন্সকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে।
এ ছাড়া পেলোসি জানান, সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী অনুসারে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং ট্রাম্পের মন্ত্রিসভা যাতে প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করে সে আহ্বান জানিয়ে আজ সোমবার হাউসে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাসের উদ্যোগ নেওয়া হবে। যেহেতু হাউসে রিপাবলিকানেরাও রয়েছেন, তাই সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি পাস না হলে পরদিন মঙ্গলবার তা ভোটাভুটিতে গড়াবে।
পেলোসি বলেন, ‘আমরা সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ করব। কারণ এই প্রেসিডেন্ট সংবিধান ও গণতন্ত্র উভয়ের জন্য হুমকি। যত দিন যাচ্ছে, গণতন্ত্রের ওপর আঘাতের ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে।’
আগামীকাল মঙ্গলবার বা বুধবার অভিশংসনে ভোট করা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন হাউস ডেমোক্র্যাটরা। তবে এজন্য তাদের হাউসের নীতি নির্ধারক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামীকাল মঙ্গলবারই এ বৈঠক হবে।
হাউসের সংখ্যাগরিষ্ঠ হুইপ জেমস ক্লাইবার্ন গতকাল রোববার সকালে বলেন, কংগ্রেসে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এবং নীতিমালা নির্ধারণের কাজকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাইডেনের প্রথম ১০০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত ডেমোক্র্যাটদের। এরপর সিনেটে তা পাঠানো উচিত।
এর আগে গত শুক্রবার হাউস স্পিকার পেলোসি বলেন, গত বুধবার ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকার কারণে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন আনবেন হাউসের ডেমোক্র্যাট সদস্যেরা।
গত বুধবার জো বাইডেনের বিজয় কংগ্রেসে অনুমোদনের দিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হামলা চালায় ট্রাম্প সমর্থকেরা। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সেদিন ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আরো বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।