তাঁবু নেই, কোনো সাহায্য নেই, সিরিয়দের যেন ভুলেই গেছে সবাই!
গত সোমবারের বিধ্বংসী ভূমিকম্প আন্তর্জাতিক সীমানার বাধা ডিঙিয়ে আঘাত হানে তুরস্ক ও সিরিয়া দুটি দেশেই। ধ্বংসলীলা চালায় দুটি দেশেই। তবে, আন্তর্জাতিক ত্রাণ তৎপরতার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চেকপয়েন্টগুলো। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে উদ্ধার সামগ্রী, গন্ধ শোঁকা কুকুর আর পেরামেডিকদের নিয়ে কয়েক হাজার উদ্ধারকর্মী কাজ করছে জীবিতদের খুঁজে বের করে আনতে।
কিন্তু সীমান্তের ঠিক ওপারে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় কোনো কিছুই হচ্ছে না। দেশটির ইদলিব প্রদেশের বাসানিয়া গ্রামটি এসময় একেবারেই শান্ত। সীমান্তের এই গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িই ছিল নতুন তৈরি করা। তবে, এখন এই গ্রামে ভেঙে পড়া বাড়িঘরের সাদা আবর্জনা পুরো পরিবেশকেই ভৌতিক করে তুলেছে। খবর বিবিসির।
সিরিয়ান সিভিল ডিফেন্স ফোর্স-যারা হোয়াইট হেলমেট নামেই বেশি পরিচিত, তারা কাজ করছে দেশটির বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। এই সংগঠনটির সদস্যরা কুড়াল আর কাস্তে দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের উদ্ধার কাজ। ব্রিটিশ সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত সংগঠনটির উদ্ধারকর্মীরা আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব অনুভব করছেন তীব্রভাবে।
ইসমাইল আল আবদুল্লাহ নামের হোয়াইট হেলমেটের একজন উদ্ধারকর্মী বলেন, ‘ভূমিকম্পের ১২০ ঘণ্টা পর আমরা জীবিতদের উদ্ধারে খোঁজাখুঁজি বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা মানুষ বাঁচাতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছিলাম তবে কিছু করতে পারিনি। কেউ আমাদের কথা শুনছে না।’
আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘ভূমিকম্পের প্রথম ঘণ্টায় আমরা জরুরি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলাম। কেউ সাড়া দেয়নি। তারা কেবল বলেছিল আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। আর কিছুই হয়নি। আমরা বলেছিলাম আমাদের যন্ত্রপাতি দরকার। কেউ সাড়া দেয়নি।’
সিরিয়ার এই বাসানিয়া এলাকায় কয়েকজন স্প্যানিশ ডাক্তার ছাড়া কোনো আন্তর্জাতিক সাহায্য দল পৌঁছায়নি।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রায় ১৭ লাখ লোক এই অঞ্চলে প্রেসিডেন্ট আসাদের শাসনের বিরোধীতা করে বসবাস করছিল। তারা অস্থায়ী ক্যাম্প ও আশ্রয় শিবিরগুলোয় থাকত। তাদের অনেকেই এখানে এসেছিলেন বাস্তুচ্যুত হয়ে। সুতরাং, ভূমিকম্পের আগে থেকেই তাদের জীবন ছিল কঠিন।
সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমের এসব এলাকায় খুব অল্পই এসেছে আন্তর্জাতিক সাহায্য। ভূমিকম্পে আহত অধিকাংশ ভূক্তভোগিতে নেওয়া হয়েছিল বাব আল-হাওয়া হাসপাতালে। হাসপাতালটি চলে সিরিয়ান আমেরিকান মেডিকেল সোসাইটির প্রণোদনায়। এখানে সাড়ে তিনশ’র বেশি রোগীকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল।
হারেম শহরের স্বজনহারা ফাদেল ঘাদাব বলেন, ‘জাতিসংঘ সাহায্য দিয়ে ১৪টিরও বেশি ট্রাক পাঠিয়েছে, এটা কিভাবে সম্ভব। আমরা কিছুই পাইনি। লোকজন রাস্তায় থাকছে।’
এই এলাকায় সাহায্য সংস্থাগুলোর অনুপস্থিতিতে ছোট ছোট শিশুরা ভূমিকম্পের আবর্জনা সরাচ্ছে। আসলে সিরিয়ায় জীবন সস্তা নয়, জীবন এখানে অনেকটাই নিরাপত্তাহীন।