তাইওয়ানে সাবমেরিন সংক্রান্ত পণ্য রপ্তানি বাড়াবে যুক্তরাজ্য
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/03/13/sabmerin-thumb.jpg)
তাইওয়ানের নৌবাহিনীকে আরও আধুনিক করতে সাহায্য করে আসছে যুক্তরাজ্য। গত বছর দ্বীপবেষ্টিত দেশটিতে সাবমেরিনের যন্ত্রাংশ ও বিভিন্ন প্রকারের টেকনোলজি রপ্তানি করেছিল ব্রিটিশ সরকার। এই রপ্তানি আরও বাড়াতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। ইতোমধ্যে বিষয়টি অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে ঋষি সুনাকের প্রশাসন। এর ফলে, চীন ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আজ সোমবার (১৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
যুক্তরাজ্য সরকারের রপ্তানি লাইসেন্সিংয়ের তথ্যানুসারে, গত বছরের প্রথম ৯ মাসে তাইওয়ানে ব্রিটিশ সরকার ও কোম্পানিগুলো প্রায় ২০ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের সাবমেরিন সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ ও টেকনোলজি রপ্তানি করেছে, যা তার আগের ছয় বছরের মোট রপ্তানিকৃত অর্থের চেয়েও বেশি।
চীন-তাইওয়ানের বিরোধ বেশ পুরোনো। তাইওয়ানকে নিজেদের মূল ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে বেইজিং। তাইওয়ান নিয়ে এক নীতি অবস্থানে রয়েছে তারা। তবে, তাইওয়ান চায় স্বাধীনতা, স্বশাসন। এ বিরোধে তাইওয়ানের পাশে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা। তাই এ বিরোধ এখন আর আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক রূপ নিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাইওয়ান প্রণালীতে বিদেশি হস্তক্ষেপ পছন্দ নয় চীনের।
যুক্তরাজ্যের সাবমেরিন সংক্রান্ত রপ্তানি নিয়ে এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘যদি তথ্যটি সত্যি হয়, তাহলে আমাদের এক চীন নীতির গুরুত্বর লঙ্ঘন করছে তারা। এর মানে, চীনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা স্বার্থে আঘাত করা। একইসঙ্গে তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করা।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘চীন এই বিষয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করে।’ তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তা না দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
রয়টার্স বলছে, এখনও তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেয়নি ব্রিটেন। এমনকি, তাদের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই ব্রিটিশদের। তবে, দ্বীপটির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে তাদের। তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে দে ফ্যাক্টো দূতাবাস রয়েছে ব্রিটেনের।
ব্রিটিশ সরকারের এক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেছেন, ‘তাইওয়ানে রপ্তানি করার জন্য লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের পূর্ব ইতিহাস রয়েছে। আবেদনগুলো অস্ত্র রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকারী নিয়মগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাইওয়ান বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি হবে এমন আশা আমাদের। এর মধ্যে কোনো হুমকি, বলপ্রয়োগ কিংবা জোর জবরদস্তি থাকবে না।’
তাইওয়ানে সাবমেরিন সংক্রান্ত রপ্তানি নিয়ে অবগত দুজন আইন প্রণেতা ও সাবেক দুজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘রপ্তানির অনুমোদনগুলো তাইওয়ানকে সমর্থন করার জন্য ব্রিটেনের ইচ্ছা প্রতিফলিত করে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইন প্রণেতা বলেন, ‘লাইসেন্সের অনুমোদন দেওয়া মানে, তাইওয়ানে আধুনিক সরঞ্জাম রপ্তানির সবুজ সংকেত প্রদর্শন করা।’
যুক্তরাজ্যের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রপ্তানি করতে চাইলে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা থেকে অনুমতি নিতে হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম প্রযোজ্য। অনুমতি দেওয়া হলে ওসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়। ২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসে কয়েক ক্যাটাগরিতে ২৫টি লাইসেন্সের অনুমোদন দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। এসব ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের যন্ত্রাংশ ও টেকনোলজি। নতুন করে কোনো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তাইওয়ানে রপ্তানির জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট হওয়া যায়নি।
রয়টার্স বলছে, যেসব লাইসেন্স অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে একটি হল এমএল৯। এই লাইসেন্স অনুযায়ী, রপ্তানি করা যাবে যুদ্ধ জাহাজ, বিশেষ জাহাজের যন্ত্রাংশ ও বিভিন্ন উপাদান। আরেকটি লাইসেন্স হল এমএল২২। এই লাইসেন্স অনুযায়ী, রপ্তানি করা যাবে টেকনোলজি, যা জাহাজ চলাচলে সাহায্য করবে।
বেইজিং ও তাইপের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। চীনের দক্ষিণপূর্ব উপকূল থেকে ১০০ মাইল দূরে থাকা তাইওয়ান জানিয়েছে, তারা তাদের নৌ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাড়াতে চায়। এ জন্য সাবমেরিনের একটি বহর তৈরি করছে তারা। তবে, চীনের কারণে বিদেশিদের থেকে সাবমেরিন কিনতে পারছে না তারা।
তাইওয়ানের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার চীনের সার্বভৌমত্বের দাবিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, শুধুমাত্র দ্বীপের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2023/03/13/sabmerin.jpg)
ব্রিটেন থেকে সাবমেরিন সংক্রান্ত রপ্তানি নিয়ে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলে এক বিবৃতিতে তারা জানায়, আধুনিক জাহাজ তৈরি আমাদের জাতীয় একটি নীতি। এ নীতির আওতায় নৌবাহিনী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে ও জাহাজ তৈরি করছে। আমরা আশ করি, তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবাই সমর্থন দেবে।