ফোনালাপ ফাঁস : নির্বাচন কর্মকর্তাকে ফল পাল্টাতে চাপ দিয়েছেন ট্রাম্প
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের ফাঁস করা একটি ফোনালাপ ঘিরে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল পাল্টাতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের একজন শীর্ষ নির্বাচন কর্মকর্তাকে পর্যাপ্ত ভোট ‘খুঁজে দিতে’ বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, অডিওতে ট্রাম্পকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমার শুধু ১১ হাজার ৭৮০ ভোট খুঁজে বের করা দরকার।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ব্র্যাড র্যাফেনস্পারজারের মধ্যে দীর্ঘ ফোনালাপের অডিও দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট গতকাল রোববার প্রথম প্রকাশ করলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন ১১ হাজার ৭৭৯ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন। গত শনিবার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ব্র্যাড র্যাফেনস্পারজারকে ফোন করেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওই নির্বাচনি কর্মকর্তাকে যেকোনোভাবে ভোটের ফল তাঁর পক্ষে দেখাতে চাপ দেন। তবে ব্র্যাড অবশ্য ট্রাম্পের কথায় সাড়া দেননি। ব্র্যাড প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘জর্জিয়ার ভোটের ফলাফল ঠিক আছে।’
এদিকে ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি জর্জিয়ায় ভোটে জিতেছেন। র্যাফেনস্পারজারকে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনাকে তো ভোট গণনা করতে বললে কোনো ভুল হবে না।’
র্যাফেনস্পারজার এর জবাবে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মহোদয়, সমস্যা হলো আপনার হাতে থাকা তথ্য ভুল।’
পরে ট্রাম্প বলেন, ‘গুজব ছড়িয়েছে যে ফুলটন কাউন্টিতে ব্যালট ছিড়ে ফেলা হয়েছে এবং ভোটিং মেশিন বন্ধ রাখা হয়েছে।’
এর পরই ট্রাম্প ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আইনি ব্যবস্থার হুমকি দেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি জানেন, তারা কী করছে। এরপরও আপনি রিপোর্ট করছেন না। এটা অপরাধ। আপনি এটা ঘটতে দিতে পারেন না। আপনার আইনজীবী রায়ান ও আপনার জন্য এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।’
এর পরই ট্রাম্প বাড়তি ১১ হাজার ৭৮০ ভোট দাবি করেন। এই ভোটগুলো যুক্ত হলে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের মোট ভোট গিয়ে দাঁড়াবে বাইডেনের চেয়ে একটি ভোট বেশি, অর্থাৎ ২৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৪ ভোট।
ট্রাম্প র্যাফেনস্পারজারকে বলেন, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফল পুনরায় যাচাই করা উচিত।
ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি ভোট পুনর্নিরীক্ষা করতে পারেন। তবে, যারা ফলাফল পেতে চায়, তাদের নিয়ে যাচাই করতে হবে। যারা চায় না, তাদের সঙ্গে নিয়ে করলে হবে না।
র্যাফেনস্পারজার এর জবাবে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মহোদয়, আপনার ও আমাদের উভয়ের যথাযথ লোক আছে, যারা আদালতে তথ্য জমা দিতে পারে। পরে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন। আমাদের আমাদের সংখ্যার পক্ষেই থাকতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের সংখ্যা ঠিক আছে।’
গত ৩ নভেম্বরের ভোটের পর থেকে কোনো প্রমাণ ছাড়াই ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে চলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এদিকে, র্যাফেনস্পারজার জালিয়াতির সব তথ্য দেননি বলে গতকাল রোববার টুইট করে দাবি করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘তাঁর (র্যাফেনস্পারজারের) হাতে কোনো ক্লু নেই।’
পরে এক টুইটে র্যাফেনস্পারজার বলেন, ‘শ্রদ্ধাভাজন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনি যা বলছেন তা সত্য নয়। সত্য বেরিয়ে আসবে।’
এদিকে ফোনালাপের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এখনো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, তোলপাড় সৃষ্টি করা এই অডিও রেকর্ড নিয়ে কথা বলেছেন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তিনি ট্রাম্পের ফোনালাপকে ‘ক্ষমতার শক্ত অপব্যবহার’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।