বসনিয়ায় মৌসুমের প্রথম তুষারপাত, দুর্দশা বাড়ছে অভিবাসীদের
বসনিয়ায় আটকেপড়া অভিবাসীদের চরম অনিশ্চয়তায় ভরা দুর্দশাময় জীবনে দেখা দিয়েছে নতুন এক সমস্যা। বলকান অঞ্চলের তীব্র শীতের মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাঁদের।
শীত যত বাড়ছিল, দুর্ভোগ তত বাড়ার শঙ্কা ছিল অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে। চলতি সপ্তাহে শীত মৌসুমের প্রথম তুষারপাত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সে দুর্দশা বাড়িয়ে দিল কয়েকগুণ। সংবাদ সংস্থা এপি ও সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।
ডয়চে ভেলে বসনিয়ার ভেলিকা ক্লাদুসার জঙ্গল থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছিল গত অক্টোবরে। সেসময়ই শীতের হাত থেকে বাঁচতে হিমশিম খাচ্ছিলেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। বাইরের ঠান্ডা থেকে বাঁচতে পলিথিনের তৈরি অস্থায়ী ঘর তৈরি করেছেন তাঁরা। কিন্তু সেটির ভেতরেও সহজেই জমে কুয়াশার ফোঁটা।
অনেকে আশপাশ থেকে সংগ্রহ করা লাকড়ি দিয়েই রান্না ও শরীর উষ্ণ রাখার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাঁদের রসদও ফুরিয়ে আসছিল দ্রুতই।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, মৌসুমের প্রথম তুষারপাতের মধ্যেও বেশ কিছু অভিবাসনপ্রত্যাশী সেই পলিথিনের অস্থায়ী ঘরগুলোতেই বাস করছেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পলিথিনের তাঁবুর ওপর বরফ জমে তা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে, ভেঙেও পড়ছে। উলের তৈরি টুপি, গরম পোশাক ও রেইনকোট পরে শীত মোকাবিলার চেষ্টা করছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। তবে প্রচণ্ড ঠান্ডা মোকাবিলায় এসব ব্যবস্থা যথেষ্ট কাজে আসছে না এপির সংবাদে বর্ণনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে আসা ৩০ বছর বয়সি শাহীন এপিকে বলেন, ‘এখন প্রচণ্ড ঠান্ডা, গত রাতে আমরা খুবই সমস্যায় পড়েছিলাম। আমাদের কোথাও ঘুমানোরও জায়গা নেই।’
তুষারপাতের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। অনেকে নিজেদের একমাত্র গরম কাপড় ধুয়ে শুকানোর জন্য ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। বরফ পড়ে মুহূর্তেই জামা-কাপড়-জুতা এমনকি অনেকের রাতের একমাত্র সম্বল কম্বলও ভিজে যায়।
২২ বছরের আহমেদ জানান, তিনি কোথাও থাকার জায়গা পাচ্ছেন না। টিকে থাকার পরিস্থিতি দিনদিন ‘অসম্ভব’ হয়ে পড়ছে বলেও জানান তিনি।
ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, ১৯৯০-এর দশকে যুদ্ধের পর থেকে এখনো অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বসনিয়া। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির কারণে ইউরোপ মহাদেশের অন্যতম দরিদ্র দেশ হিসেবে পরিচিত বসনিয়া। তার ওপর হাজার হাজার অভিবাসীর চাপ দেশটিকে আরো বিপদে ফেলেছে।
বসনিয়ার রাজনীতিবিদেরাও একমত হতে না পারায় সংকট মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারছে না দেশটির সরকার।
অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বসনিয়ায় থাকতে চান না। সীমান্তের ওপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ ক্রোয়েশিয়া গিয়ে দেখান থেকে ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানির মতো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে যাওয়া তাঁদের লক্ষ্য।
কিন্তু ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে ব্যাপক কড়াকড়ির মধ্যে অবৈধভাবে পাড়ি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন বেশির ভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশী। তাঁদের ক্রোয়েশিয়া বা স্লোভেনিয়া থেকে বসনিয়ায় ফেরত পাঠানোর সময় নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে ক্রোয়েশিয়া পুলিশের বিরুদ্ধে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ বারবার উঠলেও এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।