মিয়ানমারের সামরিক শাসনের প্রধান ঘটনাগুলো
মিয়ানমারের নেত্রী স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউ উইন মিন্টকে সোমবার ভোরে আটক করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। তারা জানিয়েছে, এক বছরের জরুরি অবস্থা শেষ হওয়ার পর দেশে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নতুন সরকারের হাতে ফিরিয়ে দেবে।
স্টেট কাউন্সিলর, প্রেসিডেন্ট ও অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সামরিক বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়। জরুরি অবস্থা চলাকালীন ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশনকে সংস্কার ও গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচন পর্যালোচনা করা হবে বলে সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়েছে। খবর ইউএনবির।
মিয়ানমারের প্রধান ঘটনাগুলো:
৪ জানুয়ারি, ১৯৪৮ : বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) নামে পরিচিত দেশটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৬২ : অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক নেতা নে উইন ও সামরিক জান্তার মাধ্যমে বহু বছর ধরে দেশটি শাসন করেন।
১৯৮৮ : স্বাধীনতা নায়কের কন্যা অং সান সু চি নিজ দেশে ফিরে আসেন। গণতন্ত্রের দাবিতে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয়। আগস্টের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালালে শতাধিক মানুষ নিহত হন।
জুলাই, ১৯৮৯ : জান্তার ক্রমবর্ধমান স্পষ্টবাদী সমালোচক হিসেবে পরিচিত পাওয়া সু চিকে গৃহবন্দি করা হয়।
২৭ মে, ১৯৯০ : দেশটির জাতীয় নির্বাচনে সু চি প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দুর্দান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনলেও সামরিক বাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়।
অক্টোবর, ১৯৯১ : শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সংগ্রামের জন্য সু চিকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
৭ নভেম্বর, ২০১০ : গণতান্ত্রিক মিয়ানমারের প্রথম নির্বাচনে ২০ বছরের মধ্যে জান্তাপন্থী একটি দল জয়লাভ করে। তবে, ভোট কারচুপি ও পক্ষপাতের দাবি করে ওই ভোটগ্রহণ বর্জন করা হয়েছিল।
১৩ নভেম্বর, ২০১০ : দুই দশকের বেশি সময় ধরে গৃহবন্দি থাকার পর সু চি মুক্তি পান।
২০১২ : উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো সংসদে আসন গ্রহণ করেন সু চি।
৮ নভেম্বর, ২০১৫ : ১৯৯০ সালের পর প্রথম প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে এনএলডি দুর্দান্ত বিজয় পায়। সংবিধানের অধীনে সেনারা ক্ষমতা ধরে রাখতে সু চিকে প্রেসিডেন্ট হতে দেয়নি, তবে সরকারের নেতৃত্ব দিতে তার জন্য স্টেট কাউন্সিলর পদ তৈরি করা হয়।
২৫ আগস্ট, ২০১৭ : বিদ্রোহীরা পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সামরিক ফাঁড়িতে হামলা চালায়। এতে সামরিক বাহিনীর বেশ কিছু সদস্যকে হত্যা করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এর পরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ : সু চি হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে এক মামলায় সামরিক বাহিনীকে রক্ষা করার জন্য রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো ‘গণহত্যা’র কথা অস্বীকার করেন।
৮ নভেম্বর, ২০২০ : মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে এনএলডি সংসদে সম্পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হয়।
২৯ জানুয়ারি, ২০২১ : নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে বলে সামরিক বাহিনীর করা অভিযোগ সমর্থন করার মতো কোনো প্রমাণ খুঁজে না পাওয়ায় তা খারিজ করে দেয় নির্বাচন কমিশন।
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ : সরকার ভোট জালিয়াতির অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ও করোনাভাইরাস সংকটেও নভেম্বরের নির্বাচন স্থগিত করতে অস্বীকার করায় এক বছরের জন্য দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এনএলডি বলছে, সু চিকে আবার গৃহবন্দি করা হয়েছে।