রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে ঘরপোড়া হাজারো শরণার্থী
খালি পায়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল আট বছরের শিশু ভ্যালেন্সিয়া। এক সাংবাদিককে দেখতেই এগিয়ে গিয়ে তার অনুনয়, ‘আমাদের ঘর পুড়ে গেছে, আমার জুতা পুড়ে গেছে। আমাদের কোনো খাবার নেই, পানি নেই।’ খিদার জ্বালা মেটাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ওই সাংবাদিকের কাছে একটা বিস্কুট চেয়ে বসে মেয়েটি।
পাশেই ছিলেন ভ্যালেন্সিয়ার মা, কোলে এক নবজাতক শিশু। তিনিও কাতরকণ্ঠে বলেন, ‘কোথাও খাবার নেই, বাচ্চাটার জন্য দুধও নেই।’ এভাবে অভুক্ত অবস্থাতেই রাস্তার পাশে রাত কাটছে তাঁদের।
আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে জানায়, ভ্যালেন্সিয়াদের মতো এমন দুরবস্থা গ্রিসের লেসবস দ্বীপের মোরিয়া আশ্রয়কেন্দ্রের হাজার হাজার শরণার্থীর। আশ্রয়কেন্দ্র আগুনে পুড়ে যাওয়ায় গত দুই রাত কেউ কাটিয়েছেন রাস্তার পাশে, কেউ মার্কেটের পার্কিংলটে, কেউ খোলা মাঠে।
২০১৫-১৬ সালে ইউরোপের অভিবাসী সংকটের সম্মুখভাগেই ছিল গ্রিসের এ দ্বীপটি। সেখানকার আশ্রয়কেন্দ্রটিতে অন্তত ১৩ হাজার শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল বলে জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার রাতে হঠাৎই আগুন লেগে যায় মোরিয়া শিবিরে। এতে আশ্রয়কেন্দ্রের একটি অংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ভিড় জমে গিয়েছিল আরেক পাশে। রহস্যজনকভাবে পরের রাতেই বাকি অংশও আগুনে পুড়ে যায়। ফলে পুরো আশ্রয়কেন্দ্রটি এখন পরিণত হয়েছে গলিত লোহা আর তাবুর ধ্বংসাবশেষে।
আশ্রয়কেন্দ্রের শরণর্থীরা আগুনের হাত থেকে পালাতে পারলেও তাদের আসলে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। অনেকেই ছোট ছোট বাচ্চার হাত ধরে এসে দাঁড়িয়েছেন খোলা রাস্তায়। কেউ কেউ মাইলের পর মাইল হেঁটে পাশের গ্রামগুলোতে যাচ্ছেন খাবার ও পানির সন্ধানে।
তবে শরণার্থীদের দ্বীপের প্রধান শহর মাইটিলেনে যাওয়ার পথে আটকে দিচ্ছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। তাদের রাস্তার পাশে বা মাঠের মধ্যেই আটকে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লেসবসে চার মাসব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি পাঠানো হয়েছে বাড়তি দাঙ্গা পুলিশও।
গ্রিসের অভিবাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লেসবসের পরিস্থিতি দেখতে যাচ্ছেন ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্জারাইটিস শিনাস। এর আগেই কয়েশ’ শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে সেখানে তিনটি ফেরি পাঠানো হচ্ছে।