কাতার সংকটের জন্য রাশিয়ার হ্যাকাররা দায়ী!
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের সংকটের জন্য রাশিয়ার হ্যাকাররা দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের ধারণা, রাশিয়ার হ্যাকাররা কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ‘ওয়াকালাত আল আনবা আল কাতারিয়া’র ওয়েবসাইট হ্যাক করে ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে এ সংকট সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সূত্র জানায়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে রাশিয়ার হ্যাকারদের এই অনুপ্রবেশ কাতার সরকার দুই সপ্তাহ আগেই টের পেয়েছিল। আর গালফ এলাকায় সর্বাধিক মার্কিন সেনার ঘাঁটি কাতারে এই সাইবার হামলার উদ্বেগও তৈরি করেছিল।
এফবিআই জানিয়েছে, ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে নাক গলানোর মতো রাশিয়ার হ্যাকাররা সব সময় মার্কিন গোয়েন্দা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং মার্কিন মিত্রদের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে হ্যাকিংয়ের তীব্র চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, এফবিআই কাতার সরকারকে হ্যাকিংয়ের ঘটনার বিষয়ে সহায়তা করার জন্য সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা দলকে সেখানে পাঠিয়েছে।
রাশিয়া সব সময় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছে এবং এখনো ওই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ মাসেই রাশিয়ার সন্দেহভাজন হ্যাকাররা ভুয়া সংবাদ তৈরি করে ফ্রান্স, জার্মানিসহ অন্য সব দেশের নির্বাচনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও জানায় মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের ওই সূত্র।
তবে কাতারের ঘটনা এবং মার্কিন নির্বাচনে হ্যাকিংয়ের সঙ্গে রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী জড়িত কি-না, সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। তবে এফবিআইর ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সে দেশে (রাশিয়া) সরকারের আশীর্বাদ ছাড়া কিছুই ঘটে না।’
গত ২৩ মে কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সরকারের বরাত দিয়ে একটি ভুল প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যাতে বলা হয়, কাতারের শাসকরা ইরান ও ইসরায়েলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় টিকতে পারবে কি না, সে নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
এ ভুয়া সংবাদের জের ধরে বাদানুবাদে কাতারের প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারের সঙ্গে সব ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এরপর একে একে কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র আরো পাঁচটি আরব দেশ।
এই সম্পর্কচ্ছেদের আগে ও পরে কাতার সংকট নিয়ে মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে কয়েকটি পোস্ট করেন। তাঁর পোস্টে কাতার বিরোধিতার সুর স্পষ্ট বোঝা গেছে। টুইটে তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের রাজা ও অন্য মিত্র দেশ এরই মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। দেখে ভালো লাগছে। তারা (সৌদি ও অন্যান্য মিত্র দেশ) বলেছে, কাতার যে চরমপন্থীদের সহায়তা করছে, তা তারা জানে। এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে। সম্ভবত এই পদক্ষেপের মাধ্যমেই বিশ্বব্যাপী ভয়ানক সন্ত্রাসবাদের কবর রচিত হবে।’
এদিকে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আবদুল রাহমান আল-থানি সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানান, এফবিআই নিশ্চিত করেছে যে এটা হ্যাকিং ও সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা এই ভুল তথ্যের ভিত্তিতেই উঠেছে। আমি মনে করি, সমস্ত সংকটের জন্য এই ভুল তথ্যই দায়ী।’

সিএনএন