সাদ্দামের ফাঁসিতে কেঁদেছিলেন মার্কিন সেনারাও
ইরাকে ১৯৮২ সালে ১৪৮ শিয়া হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। ঈদের দিনে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা এই শাসকের ফাঁসিতে ইরাকিসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মতো ১২ মার্কিন সেনাও কেঁদেছিলেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
২০০৩ সালের ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী আগ্রাসন শুরুর তিন সপ্তাহের মধ্যেই দেশটির বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ হারায় ইরাকি বাহিনী। এর পর ৯ এপ্রিল বাগদাদের দখল নেয় মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী। সেই সময়ের আগেই আত্মগোপনে চলে যান সাদ্দাম।
‘অপারেশন রেড ডন’ নামের অভিযানে ২০০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর সাদ্দামকে ইরাকের তিকরিতের একটি গর্ত থেকে বন্দি করে মার্কিন সেনারা। এর পর থেকেই তাঁকে কারাবন্দি রাখা হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়,২০০৪ সালের জুনে বিচারের জন্য ইরাকের অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয় সাদ্দাম হোসেনকে। এর পর থেকে তাঁকে পাহারা দিয়েছিলেন ১২ মার্কিন সেনা। জীবনের অন্তিমলগ্নে তাঁরাই হয়ে উঠেছিলেন ইরাকের এক সময়কার প্রতাপশালী শাসক সাদ্দামের বন্ধু।
মার্কিন ৫৫১ নম্বর মিলিটারি পুলিশ কোম্পানির ওই ১২ সেনা সদস্যকে ‘সুপার টুয়েলভ’ বলে ডাকা হতো। তাঁদের একজন উইল বার্ডেনওয়ার্পার ‘দ্য প্রিজনার ইন হিজ প্যালেস, হিজ অ্যামেরিকান গার্ডস, অ্যান্ড হোয়াট হিস্ট্রি লেফট আনসেইড’ নামের একটি বই লিখেছেন। এই বইতে সাদ্দামের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে।
বার্ডেনওয়ার্পার তাঁর বইয়ে জানিয়েছেন, সাদ্দাম হোসেনকে জল্লাদের হাতে তুলে দেওয়ার সময় পাহারাদার ১২ সেনার চোখই ছলছল করছিল।
‘আমরা কখনো সাদ্দামকে মানসিক বিকারগ্রস্ত হত্যাকারী হিসেবে দেখিনি। তাঁর দিকে তাকালে অনেক সময় নিজের দাদুর মতো লাগত’, বলেন বার্ডেনওয়ার্পার।
বার্ডেনওয়ার্পার লিখেছেন, নিজের জীবনের শেষ দিনগুলোতে সাদ্দাম তাঁদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করতেন। ওই ব্যবহার দেখে বোঝাই যেত না যে, তিনি কোনো এক সময়ে ‘অত্যন্ত নিষ্ঠুর’ শাসক ছিলেন।
মার্কিন সেনার বইয়ে আছে, সাদ্দাম সিগার খাওয়া পছন্দ করতেন। পছন্দ করতেন বাগান করতে। তিনি খুবই বেছে খাওয়া-দাওয়া করতেন।