মুসলিম নারীর জমি দখল করে নির্মিত গির্জা উচ্ছেদের নির্দেশ আদালতের
বসনিয়ার এক মুসলিম নারীর বাড়ির আঙিনায় অবৈধভাবে নির্মিত একটি গির্জা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন ইউরোপের এক আদালত।
বসনীয় ওই নারীর ২২ স্বজনকে স্রেব্রেনিকায় হত্যা করাসহ তাঁর নিজের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে বসনিয়ার সার্ব বাহিনী। এরপর ফাতা ওরলোভিচ নামের ওই নারীর বাড়ির আঙিনায় একটি অর্থোডক্স গির্জা নির্মাণ করা হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
মানবাধিকারবিষয়ক ইউরোপীয় আদালতের দেওয়া রুলিংয়ের ফলে ফাতা ও তাঁর পরিবারের ২০ বছরের আইনি লড়াইয়ের অবসান হতে যাচ্ছে। ১৯৯৫ সালে স্রেব্রেনিকা গণহত্যা থেকে বাঁচতে বসনিয়ার সার্ব-অধ্যুষিত গ্রাম ছেড়ে পালান ফাতা ও তাঁর পরিবার। ফিরে এসে ফাতারা দেখেন, তাঁদের বাড়ির সদর দরজা থেকে ৩০ মিটার দূরে নির্মিত হয়েছে এক বড়সড় গির্জা।
১৯৯৯ ও ২০০১ সালের চুক্তি অনুযায়ী, বসনিয়ার সার্ব কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যাওয়া নাগরিকদের দখলকৃত জমি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য। কিন্তু আদালত জানতে পারেন, ফাতারা নিজেদের সম্পত্তি ভোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ফাতার বাড়ির সামনে থেকে গির্জাটি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ফাতা ওরলিচকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ হাজার ইউরো এবং ফাতার ১৩ আত্মীয়কে দুই হাজার ইউরো ক্ষতিপূরণ দিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
১৯৯৩ সালে সার্বরা মুসলিমদের কোনজেভিচ পোলিয়ে অঞ্চল থেকে স্রেব্রেনিকায় জাতিসংঘের নিরাপদ অঞ্চলে তাড়িয়ে দেয়। দুই বছর পরে ওই স্রেব্রেনিকায় হামলা চালিয়ে প্রায় আট হাজার মুসলমানকে হত্যা করে সার্ব সেনারা। এই হত্যাকাণ্ডকে বলা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের নিকৃষ্টতম বর্বরতা। দুটি আন্তর্জাতিক আদালত একে গণহত্যা বলে ঘোষণা দেন।
ফাতা ওরলিচ নির্বাসনে থাকার সময় সার্ব কর্তৃপক্ষ তাঁর জমি দখল করে নেয়। এদিকে ওই অঞ্চলে আশ্রয় নেয় মুসলিম ও ক্রোয়াট-অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা অর্থোডক্স সার্ব খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। সার্ব কর্তৃপক্ষ ওই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য ফাতার বাড়ির আঙিনায় একটি গির্জা নির্মাণ করে।
বলকান দেশগুলোতে—ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস, মন্টেনিগ্রো, সার্বিয়া, মেসিডোনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, স্লোভেনিয়া, কসোমো, রোমানিয়া ও আলবেনিয়া—সে সময় এ ধরনের অনেক ঘটনার নজির মেলে। দেশগুলোতে রাতারাতি গির্জা, মসজিদসহ নতুন নতুন এলাকা গড়ে উঠেছিল। শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন এমন পশ্চিমা কর্মকর্তারা এ ধরনের ঘটনাকে জাতিগত নিধন আড়াল করার কৌশল বলে নিন্দা জানিয়ে আসছেন।
ফাতা ওরলিচের ঘটনার মধ্য দিয়ে ইউরোপের একটি দীর্ঘদিনের সমস্যার চিত্র নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। বসনিয়ার ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালের যুদ্ধের সময় কয়েক হাজার মানুষ জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে নিজের বসতভূমি ছেড়ে পালিয়ে যান। তাঁরা নিজ বসতবাড়িতে ফিরে এসে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন।
বসনিয়া ইউরোপীয় আদালতের রুলের বিরুদ্ধে আপিল না করলে তা কার্যকর হয়ে যাবে।