দ্য মুসলমান : হাতে লিখেই ৮৮ বছর
সংবাদপত্রের শুরুটা হয়েছিল হাতে লিখে। কাগজ জুড়ে লিখে সংবাদ জানানো হতো। তারপর এলো মুদ্রণযন্ত্র। সর্বশেষ কম্পিউটারের আগমন। সংবাদপত্র প্রকাশ আরো সহজ হয়ে গেল। কিন্তু ব্যাপারটা এমনই হয়ে গেছে কাগজে ছাপার চেয়ে কম্পিউটার কিংবা মুঠোফোনের পর্দায় চলে যাচ্ছে সংবাদ। আর টিভির সংবাদের দাপট তো আছেই।
কিন্তু ভাবুন তো এই যুগে এখনো হাতে লেখা সংবাদপত্র পড়ছে মানুষ! ভারতের চেন্নাই থেকে ১৯২৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় উর্দু দৈনিক সংবাদপত্র ‘দ্য মুসলমান’। সংবাদপত্রটি অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। শুরুতেই ‘দ্য মুসলমান’ সংবাদপত্রটি ছিল হাতে লেখা। উর্দু ভাষার চমৎকার ক্যালিগ্রাফি ব্যবহার করে পত্রিকাটি সাজানো হতো। লেখকের অপূর্ব শিল্পকলায় কালির নাচনে উর্দু বর্ণমালা অন্য রকম প্রাণ পায় এ সংবাদপত্রে।
‘দ্য মুসলমান’ এখনো প্রকাশিত হচ্ছে। ৮৮ বছর ধরে থেমে যায়নি ‘দ্য মুসলমান’-এর কালি। তিন ক্যালিগ্রাফার পত্রিকার মূল কপিটি সাজানোর কাজ করেন। তারপর মূল কপি থেকে মেশিনের সাহায্যে আরো কপি প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি ভারত সরকারের সহযোগিতায় এ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন ঈষাণি কে দত্ত।
ছোট্ট ঘরে শিল্পের খেলা
চেন্নাইয়ে ট্রিপলিকেন হাই রোডে ছোট এক কামরার ঘরে ‘দ্য মুসলমান’-এর কাজ হয়। ঘরে লম্বা একটা সময় ব্যস্ত থাকেন তিন ‘কাতিব’। যাঁরা পত্রিকাটিতে হাতে লিখে ক্যালিগ্রাফির কাজ করেন, তাঁদের বলা হয় কাতিব। রং আর বিভিন্ন কলম ও তুলি দিয়ে লেখা হয় শিরোনাম, সংবাদ, ছবির ক্যাপশন। ১৯২৭ সালে সৈয়দ আজমতউল্লাহ সংবাদপত্রটির যাত্রা শুরু করেন।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মাদ্রাজ সভাপতি মুখতার আহমেদ আনসারি এর অভিষেক অনুষ্ঠানে ছিলেন।
আজমতউল্লাহ মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলে সৈয়দ ফাইজুল্লাহ পত্রিকাটির হাল ধরেন। ২০০৮ সালে তিনি মারা যান। বর্তমানে তাঁর ছেলে সৈয়দ আরিফুল্লাহ ‘দ্য মুসলমান’-এর সম্পাদক। ২০০৮ সালে দায়িত্ব পেলেও তিনি বদলাননি পত্রিকাটির ঐতিহ্য ও ধরন। তিনি বলেন, ‘দ্য মুসলমানের অন্যতম আকর্ষণই হচ্ছে ক্যালিগ্রাফি। বলা যায়, ক্যালিগ্রাফি এ পত্রিকাটির প্রাণ। আর প্রাণকে শেষ করে ফেললে এ পত্রিকাটির আর কিছু থাকবে না।’
পাঠকদের প্রসঙ্গে আরিফুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের পাঠকরা ক্যালিগ্রাফি ভালোবাসেন। পাঠকরাই ঐতিহ্য পছন্দ করছেন।’
কাতিব কাজ করে যান
ক্যালিগ্রাফির জন্য এখন ‘দ্য মুসলমান’-এ তিনজন কাতিব আছেন। প্রধান কাতিবের নাম রাহমান হোসেইনি। ১৯৮০ সালে তিনি এ পত্রিকায় যোগ দেন। এখনো নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
মাস শেষে বেতন পান আড়াই হাজার রুপি। এখানে কাতিব হিসেবে লেখার কাজ করেন শাবানা বেগম ও খুরশিদ বেগম। প্রতি পৃষ্ঠার জন্য প্রতিদিন ৬০ রুপি করে আয় করেন উভয়ে। আয়ের চেয়ে আসলে তাঁরা বেশি ভাবেন কাজের আগ্রহ আর ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে থাকাটাকে। রাহমান বলেন, ‘আমাদের লেখা দেখে সবাই খুশি হয়। সবাই আমাদের সম্মান দেয়।’ শাবানা বেগম বলেন, ‘এখন তো সব পত্রিকা করপোরেট। এর মধ্যে আমাদেরটা হাতে লেখা। এটাই গর্বের।’
সংবাদ প্রতিদিন
৮৮ বছরে অনেক কিছু ঘটেছে। সংবাদ গিয়েছে ‘দ্য মুসলমান’-এ। থেমে থাকেনি ‘দ্য মুসলমান’। প্রতিদিন চার পাতা বের হয় পত্রিকাটি। প্রথম পাতায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পাতায় স্থানীয় সংবাদ আর চতুর্থ পাতায় খেলাধুলার সংবাদ। পত্রিকাটির প্রধান প্রতিবেদক চিন্নাস্বামী বালাসুব্রানিয়াম। সহসম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন উসমান গনি। দিল্লি, কলকাতা, হায়দরাবাদসহ সারা ভারতে এর প্রতিনিধি আছে। সারা ভারতে ২২ হাজার গ্রাহক আছে ‘দ্য মুসলমান’-এর। প্রতি কপি বিক্রি হয় ৭৫ পয়সায়।