রিপাবলিকান দলে বিভক্তি, ট্রাম্পকে সমর্থন দেননি টেড ক্রুজ

রিপাবলিকানদের বিভক্তি এবার দলটির জাতীয় কনভেনশনেও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছে সংবাদমাধ্যমগুলো। এ রকম বক্তব্যের মূল কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দেননি প্রাইমারি ও ককাস নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ। ফলে ক্লিভল্যান্ডে চলা দলটির চার দিনের জাতীয় কনভেনশনে স্পষ্ট হয়ে উঠল দলের বিভক্তি।
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, ক্রুজ ভোটারদের সচেতনতার সঙ্গে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ নিয়ে কনভেনশন হলে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সেখানে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীরা বারবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানাতে থাকেন। তাঁরা ট্রাম্প, ট্রাম্প, ট্রাম্প বলে স্লোগান দেন। কিন্তু নিজের অবস্থানে অটল থাকেন টেড ক্রুজ।
তবে ক্রুজ যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দেবেন না, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল দলীয় প্রাইমারিতে। বাছাই পর্বের নির্বাচনেই ট্রাম্প ও ক্রুজ একে অন্যের সঙ্গে বাগযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। ট্রাম্প ক্রুজের নাম দিয়েছিলেন ‘লাইং টেড’ (মিথ্যুক টেড)। এ ছাড়া ট্রাম্প ক্রুজের স্ত্রী হাইডিকে ‘কুশ্রী’ এবং বাবা রাফায়েলকে জন এফ কেনেডি হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনেছিলেন।
এর পর প্রাইমারি নির্বাচনের শেষের দিকে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন, তখন টেড ক্রুজ ও দলের অপর প্রার্থী জন কাসিচ ট্রাম্পকে ঠেকানোর জন্য জোট গঠন করেন। কিন্তু তাঁদের সে কৌশলও কাজে দেয়নি। তারই জের ধরে ক্লিভল্যান্ডে দলীয় কনভেনশনে তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন দেননি।
এদিকে, এই স্পষ্ট বিভক্তিতে রিপাবলিকানদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ক্লিভল্যান্স সম্মেলনস্থল থেকে বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্থনি জারচার বলছেন, এ অবস্থায় পুরো কনভেনশন হল যেন টেড ক্রুজের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
ক্রুজ ১৮ মিনিটের ভাষণের শুরুতে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানান। তবে একবারও তাঁর নাম উচ্চারণ করেননি। এরপর টেড ক্রুজ বলেন, আপনাদের চেতনা ঠিক রেখে ভোট দেবেন। সঙ্গে সঙ্গে সম্মেলনস্থল থেকে টেড ক্রুজকে তিরস্কার দেওয়া হতে থাকে। কেউ কেউ চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘ট্রাম্প! ট্রাম্প! ট্রাম্প!’
উল্লেখ্য, দলীয় প্রাইমারিতে ডেলিগেট সংগ্রহের দিক থেকে ট্রাম্পের পরই, অর্থাৎ দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন টেড ক্রুজ। এতে ট্রাম্পের সংগ্রহ এক হাজার ৫৪২টি ডেলিগেট। টেড ক্রুজের সংগ্রহ ৫৬০টি। ওদিকে ক্লিভল্যান্ড সম্মেলনস্থলে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয় ‘লক হার আপ’! অর্থাৎ তাঁকে (হিলারিকে) আটকে রাখো।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতা চেয়ে লড়াই করে পরে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানো ফ্লোরিডার সিনেটর মারকো রুবিও।
ওদিকে সম্মেলনস্থলের বাইরে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রতিবাদ হয়েছে। সেখানে পতাকা পোড়ানো হয়েছে। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭ জনকে। উইসকনসিনের গভর্নর স্কট ওয়াকার বলেছেন, হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে ভালো প্রার্থী প্রত্যাশা করে আমেরিকা। সম্মেলনে একপর্যায়ে প্রবেশ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম টেড ক্রুজ আমাকে সমর্থন দেবেন না। তাঁকে তাঁর মতো করে বলতে দিন।’