মা-মেয়েকে গণধর্ষণ, গোটা পরিবারের আত্মহত্যার হুমকি
‘দোষীদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে পরিবারের সবাই মিলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হব’- এমনই হুমকি দিল ভারতের উত্তরপ্রদেশের নির্যাতিতদের পরিবার। আজ মঙ্গলবার দিল্লির নয়ডায় এক সংবাদ সম্মেলন করে এমন কথাই জানালেন পরিবারের কর্তাব্যক্তি।
নয়ডায় সংবাদ সম্মেলনে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, গত শনিবার রাতে পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিজেদের গাড়িতে চড়ে বুলন্দ শহরের ৯১ নম্বর জাতীয় মহাসড়ক দিয়ে নয়েডা থেকে শাহাজাহানপুর জেলায় যাচ্ছিলেন তাঁরা। ব্যবসায়ী ওই পরিবারের বসবাস নয়েডা এলাকাতেই। গাড়িতে তাঁর স্ত্রী, কিশোরী মেয়ে, দুই শিশু এবং ড্রাইভারসহ মোট ছয়জন ছিলেন।
গাড়িটি ৬৮ নম্বর সড়ক পার হয়ে বাইপাস ধরে ৯১ নম্বর জাতীয় মহাসড়কে আসতেই ঝোপের ভেতর লুকিয়ে থাকা দুর্বৃত্তরা গাড়িতে আক্রমণ করে। প্রথমে গাড়িতে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে তারা। এতে গাড়ির পাশের কাচ ভেঙে যায়। বিকট আওয়াজ শুনে ব্রেক কষেন চালক। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখতে গাড়ি থেকে নামতেই গাড়িটিকে ঘিরে ধরে দুর্বৃত্তরা। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ড্রাইভারকে গাড়িটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যেতে বাধ্য করে তারা।
এরপর পরিবারের কর্তাব্যক্তিসহ দুই শিশুকে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলে গণধর্ষণ করে ৩৬ বছর বয়সী মা ও কিশোরী মেয়েকে। দেড় ঘণ্টা পর ওই দুজনকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে পরিবারটির কাছে থাকা ১১ হাজার রুপি কেড়ে নিয়ে গাড়িটিকে অচল করে দিয়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা।
ঘটনার পর পরিজনরা কিশোরী আর তার মাকে উদ্ধার করলেও ওই রাতে কোথাও যেতে পারেনি। পুলিশ জানায়, রাতভর সাহায্য চাইলেও কোনো গাড়ি থামেনি ওই নির্জন মহাসড়কে। সকালে স্থানীয় একটি হাসপাতালে মা-মেয়েকে ভর্তি করে ওই পরিবার। পরে ওই কিশোরীর অবস্থার অবনতি হলে রোববার দুপুরে তাকে বুন্দেল শহরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ওই ব্যক্তি জানান, দুর্বৃত্তদের এই হামলার পর নিজের মোবাইল ফোন থেকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য জরুরি নম্বর ‘১০০’ ডায়াল করার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু কখনো লাইনটি ব্যস্ত রয়েছে বলে জানানো হয়, কখনো বা অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়াশব্দ মেলেনি। তখন বাধ্য হয়ে এক বন্ধুকে ফোন করেন তিনি। পরে ওই বন্ধুই পুলিশকে খবর দেন।
দুর্ভাগা ওই বাবা জানান, গোটা ঘটনায় তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক আঘাত পেয়েছে। মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। আর কয়েকদিন ধরে তাঁর স্ত্রী কিছুই মুখে তোলেননি। জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হতে হয়েছে। তিনি নিজেও সেই রাতের কথা ভুলতে পারছেন না। মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছেন না।
নির্যাতিত পরিবারের ওই কর্তাব্যক্তি আরো জানান, শুক্রবারের ঘটনার পর থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার সাহস পাচ্ছেন না তিনি। এক বন্ধুর কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু বন্ধুও এখন রাখতে চাইছেন না তাঁকে। এমন অবস্থায় দোষীরা সাজা না পেলে তাঁর গোটা পরিবার নিয়ে আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না বলে জানিয়ে দিলেন তিনি।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বুন্দেল শহরের ঘটনাটি সামনে আসার পরই দোষীদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। ২৪ ঘণ্টার সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিলেন। যা আজ দুপুরেই অতিক্রান্ত হয়েছে। তবে তিনজন ছাড়া বাকি অভিযুক্তদের এখনো ধরা যায়নি। এ ছাড়া এই ঘটনার পর ওই জাতীয় মহাসড়ক এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বহু অভিযোগ উঠে আসছে।
এদিকে, দোস্তপুর গ্রামের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দেবরাজ ঠাকুর জানান, এই এলাকায় ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়। বেশির ভাগ সময়ই নির্যাতিতরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে সাহস পান না। আবার অনেক সময় পুলিশই অভিযোগ নেয় না।